স্বদেশ বাংলার কৃষক প্রবন্ধ রচনা Class 5, 6, 7, 8, 9
প্রবন্ধ রচনা : স্বদেশ বাংলার কৃষক
[রচনা সংকেত : ভূমিকা—কৃষি ও কৃষক—কৃষকের সমস্যা—প্রতিকারের পথ—উপসংহার।]
ভূমিকা : ছোটোবেলায় পড়াশোনার সময় আমরা সাধারণ জ্ঞানের বইতে বেশ কিছু সম্প্রদায়ের মানুষকে সমাজ বন্ধু হিসাবে চিনেছিলাম। সমাজ বন্ধুদের সেই তালিকায় সবার আগে যে সম্প্রদায়ের নাম উঠে আসে তারা হল কৃষক। কৃষকরা হল আমাদের সমাজের ভিত্তি। তাদের কাঁধে ভর করেই সমগ্র সমাজের প্রাথমিক প্রয়োজন মেটে। কৃষকরা যে ফসল ফলান সেই ফসলের ওপর নির্ভর করেই সমগ্র সভ্যতা জীবনধারণ করে। অন্যদিকে আমাদের মাতৃভূমি বাংলা চিরকালই সেই কৃষকদের স্নেহের লালন ক্ষেত্র। সে কারণে এই বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে বাংলার কৃষকদের নিয়ে এক চিলতে আলোচনা সর্বকালেই প্রাসঙ্গিক।
কৃষি ও কৃষক : বাংলার কৃষক সমাজ সম্পর্কে জানতে গেলে সর্বপ্রথম বাঙালির কৃষি সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য অংশের মতো বাংলার বুকেও বিভিন্ন প্রকারের কৃষিকাজ দেখা যায়। এখানকার কৃষকেরা এক ফসলি, দুই ফসলি এবং বহু ফসলি জমিতে বিভিন্ন কৃষিজ দ্রব্যের চাষ করে থাকেন। তবে বাংলার অন্যতম প্রধান উৎপাদিত ফসল হলো ধান ও পাট । গাঙ্গেয় পলিদ্বারা বাংলার ভূমি অতি উর্বর হওয়ার কারণে এখানকার অসংখ্য কৃষক বাঙালির প্রধান খাদ্যশস্য ধান এবং কৃষিতত্ত্ব পাট উৎপাদনে উৎসাহিত হয়ে থাকেন। তাছাড়াও বাংলার বুকে সারা বছর জুড়েই বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষও হয়ে থাকে। বাংলার কৃষিতে জলের অভাবজনিত সমস্যার খুব একটা সম্মুখীন হতে হয় না। তার প্রধান কারণ হলো বাংলার নদীমাতৃক চরিত্র। বাংলার কৃষকেরা কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় জল সাধারণত নদী থেকেই সংগ্রহ করে থাকেন। এছাড়া ভূপ্রকৃতিগত দিক থেকে বাংলা বৈচিত্র্যময় হওয়ার কারণে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে নানা প্রকারের ফসলের চাষ দেখা যায়। যেমন—বাংলার দক্ষিণে সামুদ্রিক উপকূল অঞ্চলের মাটিতে নারকেল। কাজুবাদাম ইত্যাদির চাষ দেখা যায়। অন্যদিকে উত্তরের পাহাড়ি পাথুরে জমিতে বাংলার কৃষকরা চা-এর মতো অর্থকরী ফসলের চাষ করে থাকে।
কৃষকের সমস্যা : বাংলা তথা সমগ্র উপমহাদেশে কৃষক সমাজ তাদের জীবন জীবিকা ধারণের জন্য প্রতিমুহূর্তে অসংখ্য ছোটো-বড়ো সমস্যার সম্মুখীন হয়। এই সকল সমস্যাবলি কৃষকদের জীবনধারণ,
জাতীয় উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং সর্বোপরি সমগ্র জাতির অগ্রগতিকে বাধা দান করে। এপ্রসঙ্গে সর্বপ্রথম উল্লেখ করতে হয় নিজের রক্ত জল করে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার ঘটনাকে। ন্যায্যমূল্যের অভাবে প্রতিবছর বাংলা তথা সমগ্র দেশের অসংখ্য কৃষকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এছাড়া উল্লেখ করতে হয় কৃষিক্ষেত্রে মহাজনী সুদের কারবারের কথা। সরকারের তরফ থেকে কাঙিক্ষত সাহায্য না পেয়ে বহু কৃষক বিভিন্ন সুদখোর মহাজনদের থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয়। তারপর সেই ঋণশোধ করতে না পেরে দেনার দায়ে আত্মহত্যা করার পথ বেছে নেয়। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলে প্রয়োজনীয় সেচের জল না পাওয়া, ন্যায্যমূল্যে ফসলের বীজ কিনতে না পারা, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়াগত বাধা ইত্যাদি কৃষক সমাজের জ্বলন্ত সমস্যা।
প্রতিকারের পথ : কোনো দেশকে সার্বিকভাবে উন্নতি করতে গেলে সেই দেশের কৃষক সমাজকে সবার আগে উন্নত হতে হয়। তাই কৃষক সমাজের সমস্যাবলি দূর করতে না পারলে দেশের সার্বিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। এই চরম সত্য অনুধাবন করতে পেরে স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের নেতৃবৃন্দ কৃষক সমাজের সমস্যাগুলিকে দূর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে
সবার প্রথমে উল্লেখ করতে হয় বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে ভারতবর্ষে ঘটে যাওয়া সবুজ বিপ্লবের কথা। এই সবুজ বিপ্লবের আঁচ এসে পড়েছিল বাংলার কৃষকদের ওপরেও। এছাড়া কৃষকদের প্রাথমিক সমস্যা দূরীকরণের জন্য জমিদারি প্রথার অবলুপ্তি এবং বাংলার কৃষকদের জমির পাট্টাদানের কথাও উল্লেখ করতে হয়। এছাড়া বর্তমানে প্রতি বছর সরকারের তরফ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় ঋণদান এবং ফসল ফলানোর জন্য উপযোগী যন্ত্রাদি ও বীজ কেনার জন্য বিভিন্ন প্রকার ছাড় দেওয়া হয়ে থাকে। কৃষকদের আয় নিশ্চিত করার জন্য দেওয়া হয়ে থাকে ন্যূনতম সমর্থন মূল্য।
উপসংহার : কৃষকরা হল সমাজের প্রধান চালিকাশক্তি। তাই এই চালিকাশক্তি দুর্বল হয়ে পড়লে প্রকৃতপক্ষে সমগ্র সমাজের দুর্বলতা অবশ্যম্ভাবী। সে কারণে কৃষকদের উন্নতির জন্য বাংলা তথা সমগ্র দেশকে সক্রিয়ভাবে সচেষ্ট হতে হবে। তবেই একটি দেশ সেই প্রাথমিক চালিকাশক্তির ওপর নির্ভর করে কাঙ্ক্ষিত উন্নতির শিখরে আরোহণ করতে পারবে।