রূপবতী পশ্চিমবঙ্গ প্রবন্ধ রচনা Class 5, 6, 7, 8, 9

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

প্রবন্ধ রচনা রূপবতী পশ্চিমবঙ্গ

[রচনা সংকেত : ভূমিকা—পশ্চিমবঙ্গের অতীত ও বর্তমান সীমারেখা—প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য— প্রাণীসম্পদের পরিচয়-কৃষিজ, খনিজ ও শিল্পজাত সম্পদের পরিচয়—উপসংহার।]


উত্তর : ভূমিকা : পশ্চিমবঙ্গ আমাদের রাজ্য। এর নানান প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক রস ও মনোরম সৌন্দর্য যা সমগ্র বিশ্ববাসীকে আকৃষ্ট করে। কত গৌরবময় কীর্তিকাহিনী, ঐতিহ্য আর স্মৃতি দিয়ে ঘেরা আমাদের পশ্চিমবঙ্গ। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যস্থাপনই আমাদের রাজ্যের সভ্যতা ও সংস্কৃতির মূলমন্ত্র।


পশ্চিমবঙ্গের অতীত ও বর্তমান সীমারেখা : ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সোনার বাংলাদেশ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে জন্ম নিল পশ্চিমবাংলা এবং পূর্ব পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ ৮৮০০ বর্গ কিলোমিটার ভূখণ্ড নিয়ে বর্তমানে ভারতের একটি বিশিষ্ট অঙ্গরাজ্য। এই রাজ্যটি পূর্ব ভারতে বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে অবস্থিত। পশ্চিমবঙ্গ বাংলাভাষী বাঙালি জাতি অধ্যুষিত অবিভক্ত বাংলার একটি আশু। এই রাজ্যের পূর্ব দিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং উত্তর দিকে নেপাল, ভুটান রাষ্ট্র অবস্থিত। ভারতের ওড়িশা, ঝাড়খন্ড, বিহার, সিকিম ও অসমরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ২৩টি জেলা আছে এবং বর্তমান লোকসংখ্যা ৯ কোটি ১৩ লক্ষেরও বেশি। এই রাজ্যের আয়তন — ৮৮৭৫২ বর্গকিমি।


প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য : পশ্চিমবঙ্গের প্রাকৃতিক রূপসৌন্দর্য অপরূপ। উত্তরে হিমালয়ের কোলে শৈলনগরী দার্জিলিং শীতকালে বরফের পোশাক পরে এবং গ্রীষ্মকালে রং-বেরং-এর ফুল ফুটিয়ে বিশ্বের ভ্রমণ রসিকদের হাতছানি দেয়। নিম্নে সমভূমির বিশাল শস্য প্রান্তর ও পশ্চিমপ্রান্তের শাল মহুয়ার জঙ্গল বিভিন্ন ঋতুতে সাজে বিভিন্ন রূপসজ্জায়। শ্যামল শস্যখেত ধীরে ধীরে দক্ষিণের সুন্দরবনে গিয়ে মিশেছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো বিভিন্ন ঋতুতে সৌন্দর্যের এমন ভিন্ন ভিন্নরূপ অন্য কোথাও দেখা যায় না। গ্রীষ্মে তার রূপ ধু-ধু রুক্ষ, বর্ষায় সে স্নিগ্ধ সজল, শরতের সূর্যকিরণে আনন্দময়, হেমন্তের সোনালি শস্যের রং-এ অপরূপা, শীতে কুয়াশার মলিনতায় বিষণ্ণ, বসন্তে পুষ্পময় ও দক্ষিণের বাতাসে রোমাঞ্চিত। জীবনানন্দের ভাষায় ‘রূপসী বাংলা।'


প্রাণীসম্পদের পরিচয় : প্রাণী সম্পদে ভরপুর পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান লোকসংখ্যা ৯ কোটি ১৩ লক্ষ-এর বেশি। পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী সম্পদ উন্নয়নের প্রতিটি জেলা সদর্থক ভূমিকা পালন করে চলেছে।


কৃষিজ, খনিজ ও শিল্পজাত সম্পদের পরিচয় : শস্য সম্পদে সমৃদ্ধ পশ্চিমবঙ্গ। মাঠে মাঠে সোনালি ফসলের সমারোহ। ধান-গম-জোয়ার-বাজরার অফুরন্ত ফলন। চা-পাট-আখ-তুলার উৎপাদনেও বিস্ময় জাগায়। মাটির বুকে খনিজ সম্পদও পশ্চিমবঙ্গবাসীর গর্বের বস্তু। কয়লা-লৌহ-অভ্র-ম্যাঙ্গানিজের যোগান পশ্চিমবঙ্গ সমৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য সম্পদ। এককালে পশ্চিমবঙ্গের কুটির শিল্পজাত সম্পদের খ্যাতি ছিল বিশ্বজোড়া। আধুনিক শিল্পায়ন ও বিশ্বায়নের ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে নেই। কার্পাস-বস্ত্র-লৌহ-ইস্পাত-শর্করা-চা-পাট এমনই হরেক শিল্পে পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষ তথা বিশ্বের যেকোনো শিল্পজাত দেশের পাশে ঠাঁই পাবার যোগ্য ।


উপসংহার : পশ্চিমবঙ্গে রূপবৈচিত্র্য এতটাই মনোরম যা যেকোনো মানুষকেই মোহাচ্ছন্ন করে তোলে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের ইতিহিাস, স্থাপত্য, পুরাকীর্তির প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন । মনীষী ধর্মগুরুদের স্মৃতি বিজড়িত পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবার তোড়জোড়ও চলছে। প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান পর্যটকদের বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকে। বৈচিত্র্যে ভরপুর পশ্চিমবঙ্গ আমাদের সকলের গর্ব।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url