আবুল কালাম আজাদ প্রবন্ধ রচনা Class 5, 6, 7, 8, 9
প্রবন্ধ রচনা আবুল কালাম আজাদ জীবনী
[ রচনা সংকেত : ভূমিকা — সংক্ষিপ্ত জীবনী — শিক্ষাজীবন —শিক্ষাচিন্তা — রচিত গ্রন্থ — উপসংহার।]
উত্তর : ভূমিকা : আবুল কালাম মহিউদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী। তিনি মৌলানা আবুল কালাম আজাদ নামেই অধিক পরিচিত। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইসলামি ধর্মশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। তরুণ বয়সে তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী : মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ১১ নভেম্বর ১৮৮৮ খ্রিঃ সৌদি আরবের মক্কাশহরে এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুহাম্মদ খইরুদ্দিন এবং মাতা আলিয়া বেগম। তাঁর পিতা দিল্লিতে বসবাসকারী একজন আলেম ছিলেন। ১৮৯০ সালে তার পিতা সপরিবারে কলকাতায় চলে আসেন। খুব অল্প বয়সে পিতা মারা যাওয়ায় আবুল কালামের শৈশব কিছুটা অসহায়তার মধ্যে কাটে। তিনি একাধারে কবি, লেখক ও সিনিয়র সাংবাদিক ছিলেন।
শিক্ষাজীবন : আজাদের পরিবার ছিল ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল, তাই ছোটবেলায় ধর্মীয় শিক্ষা লাভের মধ্যে দিয়ে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। তখনকার ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় খাইরুদ্দিন এর আস্থা না থাকায় বাড়িতেই তিনি আজাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। বাড়িতেই আজাদ আরবি ভাষায় গণিত, জ্যামিতি, দর্শন প্রভৃতি শিক্ষালাভ করেন। আরবি মাতৃভাষা হওয়ায় এবং ধর্মের প্রতি একনিষ্ঠ ও দৃঢ় বিশ্বাসী পারিবারিক পটভূমিকার কারণে প্রচলিত ধারায় ইসলামী শিক্ষার চর্চা করা ছাড়া আজাদের অন্য কোনো বিকল্প ছিল না। প্রাতিষ্ঠানিক আধুনিক শিক্ষা লাভ না করলেও ব্যক্তিগতভাবে অধ্যয়ন ও ব্যাপক পাঠ্যাভাসের মাধ্যমে তিনি উর্দু, ফারসি, হিন্দি ও ইংরেজিতে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তার সময়ের অনেক যশস্বী ব্যক্তিদের মতো তিনিও নিজ চেষ্টায় হিক্ষিত হওয়ার পথ অনুসরণ করেন এবং বিশ্ব ইতিহাস ও রাজনীতি সম্পর্কে বিপুল জ্ঞানের অধিকারী হন।
শিক্ষাচিন্তা : মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ১৯৪৯ সালে সবার জন্য মৌলিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছেন। নীতিগতভাবে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন। যেমন—নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সার্বজনীন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, বয়স্কদের নিরক্ষরতা দূর করতে সামাজিক শিক্ষার প্রচলন করা, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা, একই সঙ্গে মাধ্যমিক ও শিক্ষায় সুবিধা বৃদ্ধি করা, জাতির প্রয়োজনে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার এবং সাংস্কৃতিক জীবন সমৃদ্ধ করতে কলা ও বিনোদনে জোর দেওয়া। কেবল ভারতবর্ষেরই নয়, মাওলানা আজাদের শিক্ষাদর্শন অন্যান্য দেশেও বাস্তবায়ন হয়েছে। তিনি শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশের জন্য শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সঙ্গীত নাটক আকাদেমি (1953), সাহিত্য একাডেমি (1954), এাকডেমি অফ ফাইন আর্টস (1954), 14 বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত শিশুর জন্য বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।
রচিত গ্রন্থ : মৌলানা আবুল কালাম আজাদের রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ হল ‘জবানবন্দি’, ‘ভারত স্বাধীন হল'। তিনি মাত্র এগারো বছর বয়সে ১৮৯৯ খ্রিঃ ‘নীরাঙ্গে আলম' নামে পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৫ বছর বয়সে ১৯০৩ খ্রিঃ প্রকাশ করেন ‘লিসান আল সিদক' নামে পত্রিকা। এছাড়াও অন্যান্য পত্রিকা হল ‘আলবালাগ’, ‘আলহেলাল' এই পত্রিকা প্রকাশনার জন্য তাকে কারাগারে যেতে হয়। এছাড়াও তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইন্ডয়া উইন্স ফিডম’, ‘ছোটদের আরবি বর্ণমালা” ও ‘ইসলাম শিক্ষা’, ‘ছেঁড়াপাতা, ‘আসহাবে কাহাব’, ‘মৃত্যুর দুয়ারে মানবতা’, ‘জীবনসন্ধ্যায় মানবতা’ প্রভৃতি।
উপসংহার : মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী। ভারত সরকার তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে 11 নভেম্বর জাতীয় শিক্ষা দিবস পালনের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি ভারতীয়
জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হন 1923 সালে। তাকে 1992 সালে স্মরণোত্তর ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। তিনি 1958 সালের 22 ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দিল্লিতেমারা যান।