একটি মেলা দেখার অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা Class 5, 6, 7, 8, 9
প্রবন্ধ রচনা : একটি মেলা দেখার অভিজ্ঞতা
[রচনা সংকেত : ভূমিকা—কীভাবে মেলায় গেলাম—মেলার মানুষজন, দোকানপাট, আমোদপ্রমোদ ইত্যাদি—দু-একটি অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি—দেখা মেলাটির বৈশিষ্ট্য—উপসংহার।]
উত্তর : ভূমিকা : মেলা দেখার কথা উঠলেই সবার আগে আমার মনে পড়ে ‘গঙ্গাসাগর মেলা’-র কথা। পশ্চিমবঙ্গে কেন, ভারতে যত বড়ো বড়ো মেলা আছে, ব্যাপ্তি ও জনসমাগমের বিশালতার দিক থেকে গঙ্গাসাগর মেলা বৃহত্তম। কপিলমুনির সাধনক্ষেত্র সাগরদ্বীপ। সাগরদ্বীপের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব প্রান্ত দিয়ে গঙ্গা তথা হুগলি নদী। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। সাগরদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে গঙ্গাসাগর দ্বীপে কপিলমুনির এখনকার নতুন তৈরি মন্দির ও মেলাপ্রাঙ্গণ। নদী আর সাগরের সঙ্গমস্থলে পৌষসংক্রান্তি বা মকরসংক্রান্তিতে পুণ্যস্নানের জন্য পুণ্যার্থীদের ভিড় জমে। সেই উপলক্ষ্যে মেলা বসে। ভক্তবৃন্দ পুণ্যস্নানের পরে কপিলমুনির মন্দিরে পূজো দেন।
কীভাবে মেলায় গেলাম : আমার এক অভিভাবকের সঙ্গে আমরা পাঁচ বন্ধু রওনা হই। লঞ্চ, স্টিমার, বাস, ট্যাক্সি, নৌকো প্রভৃতি যানবাহনে করে সাগরমেলা যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। আমরা বাসে চড়ে কলকাতা থেকে যাই নামখানা, সেখান থেকে নৌকোয় গঙ্গাসাগর।
মেলার মানুষজন, দোকানপাট, আমোদপ্রমোদ ইত্যাদি : কুয়াশার হালকা ওড়নায় মুখ ঢেকে সন্ধ্যা নামছে, আমরা পা দিই মেলাপ্রাঙ্গণে। মেলার বুক উপচে বিজলি আলোর বান নেমেছে সাগর কিনারা অবধি। সাঁগর কিনারায় নৌকো, লঞ্চ, স্টিমারের মেলা, আর ডাঙায় মেলা মানুষের। সারি সারি দোকান, সাধারণত মেলাতে যেমন থাকে—চা, তেলেভাজা, মিষ্টি, অস্থায়ী হোটেল, রেস্তোরাঁ, গ্রামীণ শিল্পীদের তৈরি জিনিস, শহর থেকে আমদানি করা বেলোয়ারি শাড়ি, কাপড়, জামা, ছবি, খেলনা, পুতুল, গ্রামের কৃষিজ পণ্য শাকসবজি, আলু-পটোল, চাল, ডাল প্রভৃতি। আমোদপ্রমোদের জন্য নাগরদোলা, ম্যাজিক, সার্কাস, সিনেমা, যাত্রার আসর প্রভৃতি। মেলাপ্রাঙ্গণের পাশেই পড়েছে যাত্রীদের মাথা রাখবার ঠাঁই—দরমা দিয়ে অস্থায়ী ছাউনি; অবিশ্যি তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত সীমিত। আর একটু পা বাড়ালেই চোখে পড়ে মেলা পরিচালনার জন্যে অস্থায়ী সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরখানা, স্বেচ্ছাসেবকদের তাঁবু, পুলিশের অস্থায়ী ডেরা, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ছাউনি—সব কিছু মিলে একটা এলাহি কাণ্ড।
দু-একটি অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি : শেষ পৌষ। ভোরের আলো চোখ মেলবার সঙ্গে সঙ্গে পায়ে পায়ে জনস্রোতের ধারা নেমে এল নদীসঙ্গমে। বেলা যত বাড়তে লাগল ততই জল আর মানুষ, মানুষ আর জল, বরং বলা যায় জলসমুদ্র আর জনসমুদ্র মিলেমিশে একাকার। আমার জীবনে এ এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। হাত ধরাধরি, কাপড় ধরাধরি করে জলের বুকে নামছে হাজার হাজার মানুষ, ‘গঙ্গা, গঙ্গা’ ‘গঙ্গামাই’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস ভরিয়ে ডুব দিচ্ছে পাপস্খলন ও পূণ্যার্জনের উদ্দেশ্যে। স্নান সেরে উঠে আসছে যত, স্নানার্থে নামছে ততোধিক। স্নানসিক্ত পুণ্যার্থীর দল চলেছে কপিলমুনির মন্দিরে। সেখানে কপিলমুনির বিগ্রহের পাশে আছে সাগর ও ভগীরথের মূর্তি।
দেখা মেলাটির বৈশিষ্ট্য : মেলার দুটি মুখ্য দিক পারস্পরিক মিলন ও পণ্যদ্রব্যের ক্রয়বিক্রয়। সব কিছুকে ছাপিয়ে যে বিশেষত্বটি লক্ষণীয় বলে মনে হলো, তা হলো গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান ও কপিলমুনির মন্দিরে পুজো দেওয়া।
উপসংহার : গঙ্গাসাগর মেলা অল্পদিনের মেলা। যাত্রীরা ঘরে ফিরলে মেলাও যায় ভেঙে–কেনা-না, তাঁরাই তো মেলার প্রাণের উৎস। ‘যাত্রীদল ফিরে আসে; সাঙ্গ হল মেলা।' মেলাপ্রাঙ্গণ থেকে তাঁবু ওঠে, ছাউনি ওঠে, দোকানপাট ওঠে। আজও মেলায় কথা উঠলেই গঙ্গাসাগরে কেন মানসযাত্রা করি।