শব্দদূষণ প্রবন্ধ রচনা Class 5, 6, 7, 8, 9
প্রবন্ধ রচনা : শব্দদূষণ
[রচনা সংকেত : ভূমিকা—শব্দদূষণের কুফল—শব্দদূষণের কারণ—কলকাতা উচ্চ আদালতের নির্দেশ—শব্দ নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি প্রচেষ্টা—উপসংহার।]
ভূমিকা : পৃথিবীর গান কখনও থামে না। দিনেই হোক আর রাতেই হোক। রাত গভীর নিশুতি হলেও। পৃথিবীর এই শব্দবৈচিত্র্য কতই না মধুর। অথচ এসকল কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষ যন্ত্রশক্তির দ্বারা শব্দকে অস্বাভাবিক রকম বাড়িয়ে উৎকট আওয়াজে পরিণত করে মানুষের কাছে অসহ্য কষ্ট ও যন্ত্রণার কারণ করে তোলে। এই উচ্চগ্রাম শব্দ পরিবেশকে দূষিত করে। একে বলা হয় শব্দদূষণ। শব্দদূষণের কুফল শব্দদূষণের কুফল অনেক রকম। উচ্চগ্রাম শব্দ সহ্যশক্তির সীমা টপকে রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। রোগীর কষ্ট ও যন্ত্রণাকে বাড়িয়ে তুলে তাকে আরও অসুস্থ করে। নিশ্চিন্ত ভাবনাচিন্তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ক্ষতি হয়। মরণাপন্ন মানুষের শেষ মুহূর্তগুলিকে যন্ত্রণার বিষাদে ভরিয়ে দেয়। অপরিণত শিশুর চেতনার ওপর আঘাত হেনে তার সুস্থ মনকে বিপর্যস্ত করে।
শব্দদূষণের কারণ : শব্দদূষণের কারণও অনেক। পুজো, উৎসব, বিয়ে প্রভৃতি উপলক্ষ্যে উঁচু আওয়াজে বাজি ফাটানো; একই উপলক্ষ্যে মাইক্রোফোন ও লাউড স্পীকারে কান ফাটানো আওয়াজ তোলা; উচ্চ শব্দে চলমান গাড়ির হর্ন বাজানো ইত্যাদি। এরকম নানাভাবে শব্দদূষণের সৃষ্টি হয়। কলকাতা উচ্চ আদালতের নির্দেশ : শব্দদূষণ থেকে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে রেহাই দেওয়ার উদ্দেশ্যে কলকাতা হাইকোর্টের গ্রিন বেঞ শব্দদূষণের ওপর ১ এপ্রিল ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক রায় দেন। তাতে বলা যায় মানুষের তৈরি শব্দের সীমা নিয়ন্ত্রিত হওয়া একান্ত জরুরি। রাত্রে উচ্চ শব্দসৃষ্টিকারী বাজি ফাটানো নিষিদ্ধ হয়। এমনকি খোলা জায়গায় বাজির ও মাইকের আওয়াজের মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয় ৬৫ ডেসিবেলের মধ্যে। গাড়ির এয়ার হর্ন বাজানো বেআইনি ঘোষিত হয়। এমনকি খোলা জায়গায় রাত্রি নটার পর সংগীত, যাত্রা, নাটক ইত্যাদি অনুষ্ঠানে উচ্চগ্রাম মাইকের আওয়াজ আইনবিরুদ্ধ বলে আদালত আদেশ জারি করেন।
শব্দ নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি প্রচেষ্টা : যে-কোনো উপলক্ষ্যে উচ্চগ্রামে যথেচ্ছ মাইক বাজানো, বাজি ফাটানো ইত্যাদি ছিল আমাদের এতদিনকার অভ্যাস। তার ওপর আদালতের হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা জারি মৌচাকে আচমকা ঢিল পড়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি করে। বহু আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু সরকার, প্রশাসন ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কোর্টের নির্দেশ পালন করতে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে আসে। বেতার, দূরদর্শন, খবরের কাগজ প্রভৃতি জনগণকে সজাগ করতে, তাদের মধ্যে বোধ ও চেতনা জাগাতে আন্তরিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। সভাসমিতির বক্তৃতাকে আদালত নির্দেশিত ৬৫ ডেসিবেলের শব্দ-সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রিত করা হয়। ধর্মস্থানে মাইক ব্যবহারে সংযমের পরিচয় মেলে। তবে শহর কলকাতায় যতটা সুফল মেলে, জেলা শহরগুলিতে ও গ্রামাঞ্চলে ততটা কার্যকরী হয় না।
উপসংহার : আইন করে বা আদালতের নির্দেশে কিংবা পুলিশি কড়াকড়ি করে সবকিছু করা যায় না। সেজন্য জনগণের সচেতনতা দরকার। জনগণ সচেতন হলে অপরাধীরা পিছু হটতে বাধ্য। অবশ্য একইসঙ্গে সরকার, প্রশাসন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পুলিশ আন্তরিকভাবে অগ্রণী হবে এটাও কাম্য। সবার সমবেত চেষ্টায় কিনা হতে পারে।