প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা | অষ্টম শ্রেণী প্রবন্ধ রচনা | প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান রচনা class 8
প্রবন্ধ রচনা : প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান | অষ্টম শ্রেণী প্রবন্ধ রচনা | প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান রচনা
প্রাক্কথন : গুহাবাসী মানুষ বনের দাবাগ্নি দেখে অবাক দৃষ্টিতে ভাবতে থাকে দেবরাজ ইন্দ্র রুষ্ট হয়েছেন। তারা ভীত মনে দেবতার সন্তুষ্টিতে ব্যস্ত। কিন্তু পরক্ষণে এটাও তাদের নজরে আসে অগ্নিদগ্ধ মাংস নরম ও সুস্বাদু। সুতরাং আগুনের ব্যবহার জানা চাই। সেই থেকে শুরু হল অজানা আবিষ্কারের নিরন্তর প্রচেষ্টা। সেই ফলশ্রুতি থেকেই অমিত প্রাণশক্তিতে মানুষ চলেছে গ্রহ থেকে উপগ্রহে— এক কথায় অসীম আকাশে। আর সময়ের সিঁড়ি অতিক্রম করে বর্তমানে মানুষ বিজ্ঞানের কল্যাণী সত্তার পরশে বিশ্বকে জয় করেছে অনায়াসে।
প্রতি পদক্ষেপে বিজ্ঞান : সকাল থেকে সন্ধ্যা মানুষের প্রতি পদক্ষেপে বিজ্ঞান অদ্বিতীয় বন্ধু। দীর্ঘ তালিকা দিয়ে প্রতিদিন বিজ্ঞান আমাদের কি উপকার করছে তা বোঝান সম্ভব নয়। কারণ দাঁত মাজা, চা খাওয়া, খবরের কাগজ পড়া, অফিস যাওয়া এমনকি রাতে নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাওয়া—সর্বত্রই বিজ্ঞানের সংস্পর্শ অনুভব করবার মত। টেলিফোন, মোবাইল, পেজার, গ্যাস-চুল্লি, ফ্রিজ, ওয়াশিংমেসিন— যা না থাকলে দিন চলা অসম্ভব— সে সবই তো বিজ্ঞানের দান।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান : জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ সাফল্যকর। ট্রাকটর, ডিপটিওয়েল, রাসায়নিক কীটনাশক, হিমঘর প্রভৃতি কৃষির সঙ্গে যুক্ত।
শিল্পক্ষেত্রে বিজ্ঞান : শিল্পবিপ্লবের মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞানের আত্মপ্রকাশ। বিদ্যুৎশক্তি, জলশক্তি শিল্পকে করেছে সমৃদ্ধ। এর সঙ্গে নিত্য-নতুন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কলকারখানার কাজকে বেগবান করে তুলেছে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান : রামচন্দ্রের কথায় হনুমান যেমন বিশল্যকরণী এনেছিলেন, তেমনই প্রাণ বাঁচানোর মহৌষধ এনেছে বিজ্ঞান। পেনিসিলিনের মত টীকা, সার্জারি ক্ষেত্রে সাফল্য, ক্যান্সারের মত সংক্রামক রোগ প্রতিহত করা—কি করেনি বিজ্ঞান।
বিনোদনে বিজ্ঞান : ই-টিভি থেকে ২৪ ঘণ্টা, স্টার আনন্দ থেকে তারা বাংলা, পেলে থেকে মারাদোনা, সোয়েব থেকে সৌরভ, অমিতাভ থেকে শাহরুখ–প্রত্যেককে দূরদর্শনে দেখা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত; সেই সঙ্গে রেডিও, টেপ-রেকর্ডে গান এবং ইচ্ছেমত সিডি, ভিসিডির ব্যবহার—এসব বিজ্ঞানেরই দান।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান : লেখা থেকে পড়া, ছবি আঁকা থেকে জিওগ্রাফি চ্যানেল দেখা সম্ভব—বিজ্ঞানের কল্যাণে। সায়েন্সের ইনস্ট্রুমেন্টস্ তো ছেড়েই দিলাম।
তবুও শঙ্কা : বিজ্ঞানের কল্যাণী সত্তার পাশে এর ভয়াবহ দিক- যেমন পারমাণবিক বোমা, নক্ষত্র যুদ্ধ, জীবাণু অস্ত্র শঙ্কা জাগায়।
বিজ্ঞান কেন অভিশাপের সঙ্গে যুক্ত : সমুদ্র মন্থন করে বিষ ও অমৃত—দুই-ই উঠেছিল। অমৃত প্রাণের সুদীর্ঘস্থায়িত্ব প্রমাণ করে। আর বিষ বা গরল মৃত্যু ডেকে আনে। অবনীন্দ্রনাথ ‘বাগেশ্বরী প্রবন্ধাবলী' গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন— অমৃত হয় এক ফোঁটা, কিন্তু তৃপ্তি দেয় অনন্ত— বিজ্ঞানও তৃপ্তিদায়ক এবং সুখসারক। কিন্তু মানুষের প্রয়োগ কৌশলের ভিন্নতায় বিজ্ঞান অমৃত ত্যাগ করে মানুষের জন্যে তার হীরণ্যচিহ্নিত গর্ভে সঞয় করেছে গরল। যার প্রভাবে মানুষের জীবন বিপন্ন। হিরোসিমা-নাগাসাকির যে বিধ্বংসী বোমা ১৯৪৫-এ ছিনিয়ে নিয়েছিল লক্ষাধিক মানুষকে, তার থেকে আরও বহু গুণান্বিত ধ্বংসাত্মক বোমা এখন নির্মিত হয়েছে। দেশের বেশির ভাগ অর্থই এখন পররাষ্ট্র খাতে ব্যায় হচ্ছে। ফলে আমরা প্রকৃতির খ্যাপামিতে বিনষ্ট না হলেও আমাদের নিজেদের তৈরী পারমাণবিক অস্ত্রেই হয়তো একদিন মৃত্যুর দেশে ঘুমিয়ে পড়ব।
বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগের বিরুদ্ধে জনমত : আজকের সভ্যতার মাপকাঠি নির্মিত হচ্ছে আমরা কে কত দ্রুত ধ্বংসের প্রতিমূর্তি নিয়ে সম্মুখীন হতে পারি তার ওপর। অর্থাৎ আমাদের কল্যাণী সত্তা বিলুপ্ত
হয়ে নিমর্ম জহ্লাদী ভূমিকা সুষ্পষ্ট। বিজ্ঞানের পক্ষে আমরা, বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগকারীদের বিপক্ষে আমরা। আগ্রাসী মনোভাবের পরিবর্তে বন্ধুত্বের পবিত্র পরশে বিজ্ঞান হয়ে উঠুক কল্যাণকামী। এ প্রত্যাশা অবশ্যই আমরা করতে পারি। বিজ্ঞান কারও কুক্ষিগত ব্যক্তি মালিকানার সম্পত্তি নয়, সুতরাং লোভার্থ রাষ্ট্রনায়কের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে জনমত ছিল এবং অদূর ভবিষ্যতে থাকবেও।
শেষকথা : বিজ্ঞান মানুষের স্বপ্ন পূরণ করেছে। মানুষ তার স্বার্থসিদ্ধি পূরণে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেছে—কখনও শুভঙ্করী কাজে, কখনও ধ্বংসাত্মক মূর্তিতে।