বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন প্রশ্ন উত্তর pdf|মাধ্যমিক ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর PDF
বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা দশম শ্রেণির ইতিহাসের প্রশ্ন উত্তর |মাধ্যমিক ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর PDF |Class 10 history 6th chapter question in bengali pdf
আজ আমি তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি দশম শ্রেণির ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন প্রশ্ন উত্তর PDF। Class X six chapter question answer Pdf in bengali | Madhyamik history 6th chapter question answer pdf |WBBSE পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য দশম শ্রেণি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf গুরুত্বপূর্ণ ভাবে তোমাকে সাহায্য করবে।
তাই দেড়ি না করে এই পোস্টের নীচে দেওয়া Download লিংকে ক্লিক করে বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন প্রশ্ন উত্তর pdf download । Class x History 6th chapter Question answer in Bengali Pdf ডাউনলোড করো । এবং প্রতিদিন বাড়িতে বসে প্রাক্টিস করে থাকতে থাক।ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ণ Note,Pdf ,Current Affairs,ও প্রতিদিন মকটেস্ট দিতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
মাধ্যমিক ইতিহাসের বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হলো।
বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন mcq প্রশ্ন Pdf
ANS:- PDF Download link Click here
দশম শ্রেণি ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় 1 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর [একটি বাক্যে উত্তর দাও]
1. অসহযোগ আন্দোলনে বিহারের কৃষকদের সংগঠিত দিয়েছিলেন?
উত্তর: অসহযোগ আন্দোলনে বিহারের কৃষকদের সংগঠিত করার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্বামী
২. ভারতবর্ষের কোন্ অঞ্চলে তানা ভগত আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল?
উত্তর: ভারতবর্ষে বিহারের ছোটোনাগপুরে তানা ভগত আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল।-
3.সারা ভারত কিমান সভার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তর: সারা ভারত কিমান সভার প্রথম সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক এন জি রঙ্গ। NG RONG
4. তেভাগা আন্দোলন কত খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত হয়েছিল?
উত্তর: তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে
5. কত খ্রিস্টাব্দে রেল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস গঠিত হয়েছিল ?
উত্তর: ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে রেল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস গঠিত হয়েছিল।
6. গান্ধিজি কত খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন?
উত্তর: গান্ধিজি ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।
7. ইন্ডিয়া টুডে গ্রন্থটির রচয়িতা কে?
উত্তর: ইন্ডিয়া টুডে গ্রন্থটি রচনা করেন রজনীপাম দত্ত।
৪. ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
উত্তর: ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
9. বেট্টি প্রথা কী?
উত্তর: হায়দ্রাবাদের তেলেঙ্গানা অঞ্চলে কৃষকদের বাধ্যতামূলক বেগার শ্রম প্রথাকে বেট্টি প্রথা বলে।
বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন 2 নং প্রশ্ন উত্তর
1. মোপলা বিদ্রোহ কবে, কোথায় ও কাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়েছিল?
উত্তর: ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে কেরালার মালাবার অঞ্চলে জেনমি জমিদারের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে মোপলা নামক দরিদ্র মুসলিম কৃষকরা বিদ্রোহ করে।
2. ফ্লাউড কমিশন কে, কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: বঙ্গীয় কৃষক প্রজাদলের নেতা এ কে ফজলুল হক ফ্লাউড কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলার ভাগচাষিদের দুর্দশা অনুসন্ধান করে তার সমাধান বের করা।
3. শ্রমজীবী সংঘের কর্মসূচি কী ছিল ?
উত্তর: শ্রমজীবী সংঘের প্রধান কাজ ছিল শ্রমিকদের জন্য নৈশ বিদ্যালয় চালানো এবং মজলিশ ও মদ্যপান বিরোধী সভার আয়োজন করা। এ ছাড়া শ্রমিকদের উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করাও তাদের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
4. ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট্স পার্টির দুটি উদ্দেশ্য লেখো।
উত্তর: ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট্স পার্টির দুটি উদ্দেশ্য হল— [1] শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা কমানো।
[2] জমিদার প্রথার অবসান ঘটানো ও শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরির হার নির্ধারণ করা
5. কত খ্রিস্টাব্দে ও কাদের নেতৃত্বে মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন গঠিত হয়েছিল?
উত্তর: ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল বি পি ওয়াদিয়া এবং কে মুদালিয়র যৌথভাবে গড়ে তোলেন মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন।
6. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কেন শ্রমিক আন্দোলনকে সমর্থন করেনি?
উত্তর: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতাদের বিশ্বাস ছিল শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ তীব্রতর হওয়ার অর্থ জাতীয়তাবাদী ঐক্যে ফাটল | এ জন্যই তারা ভারতীয় কলকারখানার
মালিকদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের আন্দোলনকে সমর্থন করেনি।
দশম শ্রেণির ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায়ের শর্ট কোশ্চেন
দশম শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ
তিনকাঠিয়া প্ৰথা কী?
উত্তর: বিহারের চম্পারনে নীলকর সাহেবরা চাষিদের বিঘা প্রতি তিন কাঠা জমিতে নীলচাষ ও নির্দিষ্ট দামে উৎপাদিত নীল নীলকর সাহেবদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য থাকত। এই ব্যবস্থা তিনকাঠিয়া প্রথা নামে পরিচিত ছিল।
মোপলা বিদ্রোহ কী ?
উত্তর: অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন কেরালারমালাবার অঞ্চলের মুসলমান কৃষকসম্প্রদায়, তথা মোপলারা ‘জেনমি’ নামক হিন্দু জমিদারদের অত্যাচারের প্রতিবাদে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এই ঘটনাটি মোপলা বিদ্রোহ নামে খ্যাত।
একা বা একতা আন্দোলন কী?
উত্তর: ১৯২১-২২ খ্রিস্টাব্দে সামন্ততান্ত্রিক অনাচারের বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ও খিলাফতি নেতাদের উদ্যোগে এবং মাদারি পাশির নেতৃত্বে হরদই, সীতাপুর, বারাইচ, বাররাঁকি জেলায় যে কৃষক আন্দোলন শুরু হয় তা একা বা একতা আন্দোলন নামে পরিচিত।
10. বারদৌলি সত্যাগ্রহ কী?
উত্তর: গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি অঞ্চলে বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে খাজনা হ্রাসের দাবিতে যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয় তা বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।
11. বখস্ত আন্দোলন কী?
উত্তর: বখস্ত জমি বলতে বোঝায় খাজনা অনাদায়ের ফলে যে জমি জমিদাররা বাজেয়াপ্ত করে এবং সেই জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদ করা হয় | বিহারের এই বখস্ত জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন সংগঠিত হয় তা বখস্ত আন্দোলন নামে পরিচিত।
12. তেভাগা আন্দোলন কী?
উত্তর: ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় কৃষকসভার উদ্যোগে এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে
বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে উৎপাদিত ফসলের ২/৩ অংশ কৃষকদের দেওয়ার দাবিতে যে কৃষক আন্দোলন শুরু হয় তা তেভাগা আন্দোলন নামে পরিচিত।
13. তেভাগা আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য নেতানেত্রীর নাম লেখো।
কয়েকজন তেভাগা আন্দোলনের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নেতানেত্রী হলেন অবনী রায়, সুনীল সেন, গজেন মালি, জলপাইগুড়ির রাজবংশী মহিলা বুড়িমা, চারু মজুমদার, মহম্মদ দানেশ প্রমুখ ।
14. হালি প্রথা কী ?
উত্তর: গুজরাটে জমিদারের জমিতে বিনা পারিশ্রমিকে চাষিকে নিজের গোরু-লাঙল ব্যবহার করে কৃষিকাজ করতে হত। এই প্রথাকে হালি প্রথা বলে।
মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর pdf
15. যজমানি প্রথা কী?
উত্তর: নিম্নবর্গের চাষিদের বড়ো জমিদার বা উচ্চবর্ণের তালুকদাররা বাজার অপেক্ষা কমদামে ঘি, চামড়া, কাঠ, কাপড় সরবরাহ করত। সেই প্রথাকে যজমানি প্রথা বলে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে এ প্রথাটি প্রচলিত ছিল।
16. ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে দ্বিজ বলা হয় কন?
উত্তর: ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার তাসখন্দে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের নেতৃত্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। আবার ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ারের সভাপতিত্বে কানপুরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে দ্বিজ বলা হয়।
117. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী?
উত্তর: বামপন্থী আদর্শ এবং তা দ্বারা পরিচালিত শ্রমিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার জননিরাপত্তা আইন অনুসারে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ ৩২ জন কমিউনিস্টদের গ্রেফতার করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা রুজু করা হয় তা মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত।
18. কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি কবে, কাদের উদ্যোগে গড়ে ওঠে?
উত্তর: ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ অক্টোবর বম্বেতে নরেন্দ্র দেব, রামমনোহর লোহিয়া, এফ আনসারি, মিনু মাসানি, জয়প্রকাশ নারায়ণ প্রমুখের উদ্যোগে কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি গড়ে ওঠে। FIRSAR চিহ্নি
19. কবে, কাদের নেতৃত্বে বাংলায় পেজে অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হয়। পূর্ব
উত্তর: ১৯২৫-২৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় মুজাফ্ফর আহমেদ, কবি নজরুল ইসলাম, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, হেমন্তকুমার সরকার প্রমুখের নেতৃত্বে বাংলায় পেজেন্টস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হয়।
20. ত্রিপুরি কংগ্রেসের গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর: ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের ত্রিপুরি অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বামপন্থী দলগুলির সমর্থনে ২০৩ ভোটের ব্যবধানে গান্ধিজি কর্তৃক মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। ফলে| কংগ্রেসের বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়।
21 অস্ত্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কী?
উত্তর: ভারত ছাড়ো আন্দোলন চলাকালীন ১৭ ডিসেম্বর ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুর জেলার তমলুক অঞ্চলে স্বতঃস্ফূর্ত কৃষক আন্দোলনের নিদর্শন হিসেবে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠিত হয় | এর সর্বাধিনায়ক ছিলেন গান্ধিবাদী নেতা সতীশচন্দ্র সামন্ত |
22. কবে, কোন্ ঘটনার ফলে গান্ধিজি অহিংস অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন?
উত্তর: ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে (৫ ফেব্রুয়ারি) উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর জেলার চৌরিচৌরা গ্রামের উত্তেজিত জনতা সেখানকার থানায় অগ্নিসংযোগ করে ২২ জন পুলিশকে পুড়িয়ে মারে। অহিংস আন্দোলনে হিংসার প্রবেশ ঘটায় গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন।
23. কবে, কোথায় একা আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল?
উত্তর: ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষ ও ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ভাগে যুক্তপ্রদেশের (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ) উত্তর-
পশ্চিমে অবস্থিত অযোধ্যা, অর্থাৎ হরদই, বরাবাঁকি, সীতাপুর, বারইচ প্রভৃতি জেলায় একা আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল।
24. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কমিউনিস্ট পার্টির কী ভূমিকা ছিল?
উত্তর: কমিউনিস্ট পার্টি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করে কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণিকে এই আন্দোলন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়।
25. কোন্ কোন্ শ্রমিক নেতা অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন?
[উত্তর: বি পি ওয়াদিয়া, এন এম জোশি, জোশেফ ব্যাপ্তিস্তা, প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরী, ব্যোমকেশ চক্রবর্তী, সুরেন্দ্রনাথ হালদার প্রমুখ শ্রমিক নেতা অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
26. কবে, কোথায় ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজে পার্টি অব বেঙ্গল প্রতিষ্ঠিত হয়? হয়?
উত্তর: ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা কংগ্রেসের অভ্যন্তরে লেবার স্বরাজ পার্টি অব বেঙ্গল দল গঠিত হয়। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে কৃম্ননগরে আয়োজিত নিখিল বঙ্গ প্রজা সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এই দলের নতুন নামকরণ করে ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট্সট্স পার্টি অব বেঙ্গল |
27. কবে, কীভাবে সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পৈজেন্ট্স পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: ওয়ার্কাস অ্যান্ড পেজেন্ট্স পার্টির বিভিন্ন প্রাদেশিক শাখাগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট্স পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
28. সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজে পার্টির কয়েকটি মুখপত্রের নাম লেখো।
উত্তর: সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট্স পার্টির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মুখপত্রের নাম হল লাঙল, গণবাণী, শ্রমিক, সোশ্যালিস্ট, কীর্তি, লেবার- কিষান গেজেট প্রভৃতি।
29. ব্রিটিশ সরকার কবে রয়্যাল কমিশন নিয়োগ করে? এই কমিশন নিয়োগের উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর: ব্রিটিশ সরকার ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে রয়্যাল কমিশন নিয়োগ করে। রয়্যাল কমিশন নিয়োগের উদ্দেশ্য ছিল শ্রমিক- কল্যাণমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
30. কবে, কাদের উদ্যোগে রেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস গঠিত হয়?
উত্তর: ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট নেতা বি টি রণদিভে, সোমনাথ লাহিড়ি প্রমুখের নেতৃত্বে রেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস গঠিত হয়।
31. কাদের নেতৃত্বে, কবে, কোথায় কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: জয়প্রকাশ নারায়ণ, অচ্যুত পট্টবর্ধন, ইউসুফ মেহের আলি, অশোক মেহতা, মিনু মাসানি প্রমুখের নেতৃত্বে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়।
মাধ্যমিক ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় 2 নম্বরের প্রশ্ন
32. প্রথম কার নেতৃত্বে, কোথায়, কবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়? এই দল করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে?
উত্তর: মানবেন্দ্রনাথ রায়ের নেতৃত্বে এবং অবনী মুখার্জি, মহম্মদ আলি, মহম্মদ সাফিক প্রমুখের সহযোগিতায় ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার তাসখন্দে প্রথম ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। মানবেন্দ্রনাথ রায় প্রতিষ্ঠিত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল বা
কমিনটার্ন-এর স্বীকৃতি লাভ করে।
33. কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় কোন্ কমিউনিস্ট নেতাদের জড়ানো হয়?
উত্তর: কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় (১৯২৪ খ্রি.) মুজফ্ফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, শওকৎ ওসমানি, নলিনী গুপ্ত প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতাদের জড়ানো হয়।
34 ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট্স পার্টি অব বেঙ্গল-এর সভাপতি ও সম্পাদক কারা ছিলেন ?
উত্তর: ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট্স পার্টি অব বেঙ্গল- এর সভাপতি ছিলেন নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত এবং যুগ্ম
সম্পাদক ছিলেন ছিলেন হেমন্তকুমার সরকার ও কুতুবউদ্দিন আহমেদ |
35. কবে, কাদের উদ্যোগে লেবার স্বরাজ পার্টি অব দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় কংগ্রেস দলের প্রচেষ্টায় লেবার স্বরাজ পার্টি অব দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল * কংগ্রেস নামে দলটি প্রতিষ্ঠিত হয় | লেবার স্বরাজ পার্টি অব দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেন কাজি নজরুল ইসলাম, হেমন্তকুমার সরকার, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, সামসুদ্দিন হুসেন প্রমুখ।
36. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলার কৃষকবিদ্রোহ কীরূপ ছিল ?
উত্তর: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলার মেদিনীপুরের তমলুক মহকুমা, পটাশপুর থানা, খেজুরী থানা, দিনাজপুরের বালুরঘাট প্রভৃতি এলাকায় কৃষকরা জমিদারদের খাজনা দেওয়া বন্ধ করে। এইভাবে তারা ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শামিল হয়।
37. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার কয়েকজন উল্লেখযোগ্য শ্রমিক নেতার নাম লেখো।
উত্তর: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার কয়েকজন উল্লেখযোগ্য শ্রমিক নেতা ছিলেন প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরী, প্রেমতোশ বসু, অপূর্বকুমার ঘোষ, অশ্বিনীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
38. উত্তরপ্রদেশে কবে, কাদের উদ্যোগে কিষান সভা প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: উত্তরপ্রদেশে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে মদনমোহন মালব্যের সমর্থনে গৌরীশংকর মিশ্র ও ইন্দ্রনারায়ণ ত্রিবেদীর উদ্যোগে কিষান সভা প্রতিষ্ঠিত হয়।
দশম শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় বড় প্রশ্ন|মাধ্যমিক ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় 2 নম্বরের প্রশ্ন|
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ কীরূপ ছিল?
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং একটি প্রকৃত গণ আন্দোলন। এই আন্দোলনে কৃষক শ্রেণি অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছিল এবং নানান সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও শ্রমিক শ্রেণিকে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা যায়নি।
[1] আন্দোলনে কৃষক শ্রেণির ভূমিকা: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষক সম্প্রদায়ের যোগদান এই
আন্দোলনকে সন্ত্রাসবাদী চরিত্র দান করে। কৃষক আন্দোলনের ব্যাপকতার বিভিন্ন দিকগুলি হল—
[i] আসাম, বাংলা, বিহার, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, প্রভৃতি স্থানের কৃষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে যোগ দেয়, [ii] বহু স্থানে কৃষকরা সরকারকে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। বাংলার
বিভিন্ন জেলায় কৃষক আন্দোলন গণবিদ্রোহের আকার ধারণ করে, [iii] মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে সেখানকার কৃষকরা সমান্তরাল সরকার পরিচালনা করতে থাকে।
[2] আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির ভূমিকা: ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হলে ভারতের কমিউনিস্ট দল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে রাতারাতি সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী যুদ্ধের পরিবর্তে জনযুদ্ধ বলে ঘোষণা করে এবং নীতিগত কারণে ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ায় | তবে, ব্যক্তিগতভাবে
কোনো কোনো কমিউনিস্ট কর্মী এই আন্দোলনকে সমর্থন জানায়। তারই একটি অংশ ছিল শ্রমিক শ্রেণি।
শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপকতার বিভিন্ন দিকগুলি হল— [i] গান্ধিজি ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে কারারুদ্ধ
করা হলে তার প্রতিবাদে বম্বে, নাগপুর, আমেদাবাদ প্রভৃতি শিল্পাঞ্চলেরশ্রমিকরা এক সপ্তাহ ধরে ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করে। [ii] জামশেদপুরে লৌহ- ইস্পাত কারখানায় দুই মাস ধরে ধর্মঘট পালন করা হয়।
উপসংহার: ব্রিটিশ সরকার ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টিকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। তাই কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত শ্রমিক আন্দোলনের ভূমিকা আশাব্যঞ্জক না হলেও কৃষক শ্রেণির অভূতপূর্ব সাড়া শ্রমিক শ্রেণির কিছু অংশের অনীহাকে পুষিয়ে দিয়েছিল। তবে অধ্যাপক আদিত্য মুখার্জির মতে, “পার্টির লাইন আলাদা হওয়া সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ কমিউনিস্ট কর্মীরা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল।”
[1] নেতৃত্ব : আন্দোলনের সূচনা পর্বে কংগ্রেসি নেতৃবৃন্দ এর সাথে যুক্ত থাকলেও এই আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিল মাদারি পাশি নামে অনুন্নত শ্রেণির এক নেতা, যার আহ্বানে অনুন্নত সম্প্রদায়ের কৃষকরা
দলে দলে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
[2] কর্মসূচি: [i] মন্ত্রপাঠ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকরা শপথ নিয়েছিল যে, নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত খাজনা ছাড়া তারা বেশি কিছু দেবে না,
[ii] জমি থেকে উচ্ছেদ করলেও তারা জমি ছাড়বে না এবং রসিদ ছাড়া তারা খাজনা দেবে না,
[iii]·খাজনা দেবে নগদ অর্থে, শস্যের মাধ্যমে নয় এবং তারা জমিদারের জমিতে বেগার খাটবে না,
[iv] পঞ্চায়েতের মাধ্যমে গ্রাম্য বিরোধের মীমাংসা করা হবে ও সর্বক্ষেত্রে কৃষকরা নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখবে।
[3] . আন্দোলনের অবসান : নিম্নশ্রেণির নেতৃবৃন্দের দুঃসাহসিক নেতৃত্বে একা আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। এই আন্দোলনের ফলে জমিদার ও তালুকদারদের ঘরবাড়ি ও খামার আক্রান্ত হয় | কিন্তু
সরকারের নিষ্ঠুর দমননীতির ফলে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাস নাগাদ এই আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায় ।
টীকা লেখো: মোপলা বিদ্রোহ |
উত্তর গান্ধিজির ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে সর্বাপেক্ষা ব্যাপক ও ভয়াবহ কৃষক আন্দোলন ছিল মোপলা বিদ্রোহ | দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূলের আরবীয় বংশোদ্ভূত, দরিদ্র, মুসলিম কৃষক—
মোপলাদের দ্বারা পরিচালিত এই আন্দোলন জঙ্গি কৃষক আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহণ করে।
[1] পটভূমি: ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে জেনমি নামে হিন্দু জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে মূলত সংগঠিত হয় এই কৃষক আন্দোলন। খলিফার হৃত রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ইংরেজ-বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের উপাদান নিয়ে গড়ে ওঠে।
[2] নেতৃত্ব: মোপলাদের মধ্যে আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ইয়াকুব হাসান, মাধবন নায়ার, গোপাল মেনন, আলি মুসলিয়ার প্রমুখ কংগ্রেস ও খিলাফত নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা করেছিল।
[3] অবসান: ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও ক্রমে এই বিদ্রোহ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় পর্যবসিত হয়। বিদ্রোহীরা জমিদারদের বাড়ি,কাছারি, থানা, সরকারি দপ্তরে আক্রমণ চালায় | তবে
সরকার কঠোর হস্তে এই আন্দোলন দমন করে।
দশম শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন
নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা হল ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বম্বেতে কংগ্রেস নেতা লালা লাজপত রায়ের সভাপতিত্বে নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস-এর প্রতিষ্ঠা।
[1] প্রতিষ্ঠা : ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ৩১ অক্টোবর ৮০৬ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বম্বেতে এই শ্রমিক সংঘের প্রতিষ্ঠা হয় | এই অধিবেশনে মোতিলাল নেহরু, বিলভাই প্যাটেল, বি পি ওয়াদিয়া, শ্রীমতি অ্যানি বেসান্ত, জোসেফ ব্যাপ্তিস্তা, সি এফ অ্যান্ড্রুজ প্রমুখ নেতা যোগ দেন। এই অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন লালা লাজপত রায়, সহ-সভাপতি ছিলেন জোসেফ ব্যাপ্তিস্তা এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন চমনলাল ।
[2] কর্মসূচি : সভাপতির ভাষণে লালা লাজপত রায় জাতীয় শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান এবং তাদের সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার সাথে পরিচিত হতে বলেন। এই সময় নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে এক ইস্তাহার প্রকাশ করে।
[3] চরিত্র: এই ইস্তাহারে শ্রেণি চেতনা, সমাজতান্ত্রিক আদর্শ বা কোনো বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের আহ্বান না থাকলেও শ্রমিক শ্রেণির ঐক্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং শ্রমিকদের স্বাধীনতা সংগ্রামে সংঘবদ্ধভাবে অংশগ্রহণের আবেদন জানানো হয়। পরে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হলে AITUC-র বামপন্থী প্রবণতা বৃদ্ধি পায় ।
5 টীকা লেখো: মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা |
১৯২০-এর দশকে বামপন্থী কমিউনিস্টদের দ্বারা পরিচালিত শ্রমিক আন্দোলনকে দুর্বল করতে ব্রিটিশ সরকার যেসব দমনমূলক মামলা শুরু করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা |
[1] পটভূমি: ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার শ্রমিক আন্দোলনকে দমন করতে কেন্দ্রীয় আইনসভায় জননিরাপত্তা বিল ও বাণিজ্য-বিরোধ বিল পেশ করে। কিন্তু এই বিল দুটি আইনে পরিণত না হওয়ায় ব্রিটিশ সরকার ভারতে বামপন্থী রাজনীতি দুর্বল করতে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৩৩ জন শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা শুরু করে তা মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত।
[2] নেতৃত্ব : এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল এস এ ডাঙ্গে, মুজফ্ফর আহমেদ, গঙ্গাধর অধিকারী, ধরণী গোস্বামী, শিবনাথ ব্যানার্জি, সামসুল হুদা প্রমুখ। এ ছাড়া বেঞ্জামিন ব্র্যাডলি প্রমুখ ব্রিটিশ নেতা এই মামলায় গ্রেফতার হন।
[3] মামলার রায় : ১৯২৯-৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই মামলা চলার পর মামলার রায়ে অধিকাংশ শ্রমিক
নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে পণ্ডিত রোমা রোঁলা, আইনস্টাইন, হ্যারল্ড লাস্কি প্রমুখ
ব্রিটিশ সরকারকে চিঠি লেখেন| তবুও মামলার রায়ে ভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও কমিউনিস্ট পার্টিকে
১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়
[4] প্রতিক্রিয়া : ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এই মামলাকে জুডিশিয়াল স্ক্যান্ডেল বলে অভিহিত করেন। এই
মামলার রায় ভারতের বামপন্থী শ্রমিক আন্দোলনকে অনেকটাই দুর্বল করে দিয়েছিল।
টীকা লেখো: কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল।
উত্তর ১৯৩০-এর দশকে ভারতে বামপন্থী সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রসারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে বম্বেতে কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি বা কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের প্রতিষ্ঠা | এই দলের প্রথম সভাপতি ছিলেন আচার্য নরেন্দ্রদেব ও প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ।
[1] নেতৃত্ব : কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠার পিছনে জাতীয় কংগ্রেসের দুই তরুণ নেতা জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসুর বিশেষ ভূমিকার কথা জানা যায়। কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের অন্য নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ইউসুফ মেহের আলি, আসাফ আলি, মিনু মাসানি, অচ্যুত পট্টবধন, রামমনোহর লোহিয়া প্রমুখ।
[2] লক্ষ্য ও কর্মসূচি : এই দলের প্রধান লক্ষ্য ছিল কৃষক ও শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলা। এ ছাড়া ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন, বৈদেশিক বাণিজ্যের
ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, দেশীয় রাজতন্ত্র ও জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ঘটানো এই পার্টির কিছু উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি ছিল।
[3] কার্যকলাপ: ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের বিপুল সাফল্য লাভের পিছনে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের বিশেষ ভূমিকা ছিল। এই দলের কৃষিসংস্কার,
ভূমিসংস্কার, বিরোধ প্রমুখ সমস্যার সমাধানে কংগ্রেস নজর দিতে বাধ্য হয়। এ ছাড়া গান্ধিজিসহ কংগ্রেসের প্রায় সব শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার হলে ভারত ছাড়ো আন্দোলন পরিচালনায় কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের নেতারা উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বাক্ষর রাখে।
মন্তব্য: সুতরাং কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের প্রতিষ্ঠা কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী শক্তিবৃদ্ধির ঘটনাকে আলোড়িত করে।
দশম শ্রেণির ইতিহাস বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন pdf
সারা ভারত কিষান সভা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর
ভারতে বামপন্থী কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা ছিল ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে লখনউতে
সারা ভারত কিষান সভা প্রতিষ্ঠা। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে জাতীয় কংগ্রেসের লখনউ অধিবেশন চলাকালে জওহরলাল নেহরুর সমর্থনপুষ্ট কংগ্রেসের বামপন্থী অংশ, কংগ্রেসের সমাজতন্ত্রী দল এবং কমিউনিস্টরা মিলে এটি প্রতিষ্ঠা করে।
[1] নেতৃত্ব : এই সভার প্রথম সভাপতি ছিলেন বিহার কিষান সভার প্রতিষ্ঠাতা স্বামী সহজানন্দ ও সম্পাদক ছিলেন অন্ধ্রের কৃষক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ অধ্যাপক এন জি রঙ্গ। সারা ভারত কিষান সভার
অন্যান্য নেতৃমণ্ডলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ইন্দুলাল যাজ্ঞিক, সোহন সিং, দীন মহম্মদ, কমল সরকার, সুধীন প্রামাণিক এবং সারা ভারত কিষান সভার মুখপত্র 'কিষান বুলেটিনের সম্পাদক হন ইন্দুলাল যাজ্ঞিক |
[2] কর্মসূচি: এই বুলেটিনে প্রকাশিত ইস্তাহারে কৃষকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে ধরা হয় । এগুলির
মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল— [i] জমিদার প্রথার বিলুপ্তি,
[ii] কৃষিঋণ মকুব, [iii] বেগার প্রথা নিষিদ্ধ করা,
[iv] খাজনার হার ৫০ শতাংশ হ্রাস, [v] কৃষকদের বনজ সম্পদ আহরণের পূর্ণ অধিকার, [vi] অনাবাদি
সরকারি জমি ও জমিদারদের খাস জমি কৃষকদের প্রদান, [vii] সামন্তপ্রথার বিলোপসাধন এবং
[viii] খেতমজুরদের মজুরি বৃদ্ধি।
[3] বিস্তার: উল্লিখিত দাবির সমর্থনে কৃষকদের নিয়ে দেশের নানা স্থানে সভাসমিতি ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর সারা ভারত কিষান দিবস পালিত হয় | পরবর্তীকালে সারা ভারত কিষান সভার উদ্যোগে গোটা দেশে জোরদার কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং প্রতিষ্ঠিত হয় বিভিন্ন প্রাদেশিক কিষান সভা।
দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর ষষ্ঠ অধ্যায় pdf|
1 বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী দলগুলির ভূমিকা আলোচনা করো।
● উত্তর
ভারতে ব্রিটিশবিরোধী জাতীয় আন্দোলনে শ্রমিক ও কৃষকদের শামিল করতে অন্যতম ভূমিকা নেয় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি। কিন্তু ভারতীয় কমিউনিস্টদের কর্মপদ্ধতি রাশিয়ার সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির দ্বারা প্রভাবিত ছিল বলে তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারত না। তবে ভারতের অন্যতম প্রধান কমিউনিস্ট নেতা এম এন রায় অত্যন্ত সুচতুরভাবে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির ভাবমূর্তি গঠনে দ্বিমুখী কৌশল গ্রহণ করে। এই কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল জাতীয় আন্দোলনের মূল স্রোতে থাকার পাশাপাশি উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করা।
[1] সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন: ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রথমদিকে এই দল কংগ্রেসের অভ্যন্তরে থেকে উপনিবেশ-বিরোধী সংগ্রামে যোগ দেয়। সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। এই সময় দুই বামপন্থী কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসুর উদ্যোগে গড়ে ওঠে ইনডিপেন্ডেন্স লিগ । এর লক্ষ্য ছিল উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী জনমত গঠন করা।
[2] পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি: প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কমিউনিস্ট দলের সদস্যরা জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিটি বার্ষিক অধিবেশনে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটানো ও পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে এসেছিল। বামপন্থীদের এই দাবির চূড়ান্ত ফল হল ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের বামপন্থী কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গ্রহণ।
[3] চরিত্রগত বদল: ১৯৩০-এর দশকে ভারতীয় কমিউনিস্ট দলের নেতারা সোভিয়েত ধাঁচে বিপ্লব করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে | ফলে জাতীয় কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী নেতাদের সঙ্গে কমিউনিস্টদের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। এই সময় ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশ-বিরোধী জাতীয় আন্দোলনে যোগদানের প্রশ্নে কমিউনিস্টরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। এই সময় ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে জয়প্রকাশ নারায়ণ, আচার্য নরেন্দ্রদেব প্রমুখ সমাজতন্ত্রীনেতাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল।
[4] উপনিবেশ বিরোধী যুক্তফ্রন্ট গঠন: ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট দল বেআইনি বলে ঘোষিত হলে ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী বামপন্থী আন্দোলনে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের সাথে কমিউনিস্টরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে রাজি হয়। বিখ্যাত ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতা রজনীপাম দত্ত ও বেঞ্জামিন ব্র্যাডলে এক ইস্তাহার প্রকাশ করেন। এতে বলা হয় যে, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী গণফ্রন্ট গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জাতীয় কংগ্রেস মুখ্য ভূমিকা নিতে পারবে। কমিনটার্নের তরফ থেকেও কমিউনিস্টদের ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী যুক্তফ্রন্ট গঠনের
[5] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ভারতীয় কমিউনিস্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনায় কমিউনিস্টরা সাম্রাজ্যবাদ ও যুদ্ধের বিরোধিতা করলেও যুদ্ধে ঔপনিবেশিক ব্রিটেনের পক্ষে কমিউনিস্ট সোভিয়েত রাশিয়ার যোগদান সমস্ত ভাবনাকে এলোমেলো করে দেয় | ফলে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী ভারত ছাড়ো
আন্দোলনে গান্ধিজিসহ কংগ্রেসের প্রথম সারির দক্ষিণপন্থী নেতারা কারারুদ্ধ হওয়ায় বামপন্থী কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের নেতা ও কর্মীরা জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করেন। অন্যদিকে, ভারতীয় কমিউনিস্টরা সাম্রাজ্যবাদ- বিরোধী যুদ্ধকে ‘জনযুদ্ধ’ রূপে আখ্যা দেয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুদ্ধ ব্রিটিশ সরকারকে সহযোগীতার নীতি গ্রহণ করে ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে। তবে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌবিদ্রোহে কমিউনিস্টদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য [6] ফরোয়ার্ড ব্লকের ভূমিকা : গান্ধি-সুভাষ মতবিরোধের কারণে বামপন্থী কংগ্রেস নেতা সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের ত্রিপুরি অধিবেশনের সভাপতি পদে নির্বাচিত হলেও ইস্তফা দিতে বাধ্য হন। সেই বছরই তিনি বামপন্থী আদর্শ অনুসরণে ফরোয়ার্ড ব্লক গঠন করে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানকল্পে বামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ করতে সচেষ্ট হন | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে
বামপন্থী নেতা হিসেবে তিনিই প্রথম ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি গ্রেফতার হলে সেই সম্ভাবনা ব্যর্থ হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকলেও উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে ভারতের
বামপন্থী দলগুলি, বিশেষ করে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল, ফরোয়ার্ড ব্লক প্রভৃতি দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। এমনকি ক্ষমতা হস্তান্তরের ফলে দেশীয় রাজ্যের রাজারা ইংরেজদেরসাথে হাতে হাত মিলিয়ে ভারতকে বহুধাবিভক্ত রাখার যে চক্রান্ত শুরু করেছিলেন, কমিউনিস্ট ও বামপন্থীদের দৃঢ় পদক্ষেপ সেই চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেয়।
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যকলাপ বর্ণনা করো।
মানবেন্দ্রনাথ রায় এবং অন্যান্য কয়েকজন প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবী ১৭ অক্টোবর ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করে।
[1] ভারতে কমিউনিস্ট গোষ্ঠীর বিস্তার: এদিকে ভারতে বহু নিবেদিত শ্রমিক-কর্মী ও বিপ্লবী নিজ নিজ ইচ্ছায় কমিউনিস্ট গোষ্ঠী গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এদের মধ্যে বাংলায় মুজফ্ফর আহমেদ, বম্বেতে এস এ ডাঙ্গে, মাদ্রাজে সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ার, লাহোরে গোলাম হোসেন ছিলেন উল্লেখযোগ্য।
[2] কানপুর ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতের কমিউনিস্ট আদর্শকে অঙ্কুরেই বিনাশ করে দেওয়ার জন্য কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মিথ্যা মামলা সাজানো হয় | তাদের মধ্যে একটি হল কানপুর ষড়যন্ত্র মামলা, যেটিতে শওকত উসমানি, নলিনী গুপ্ত, মুজফ্ফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে প্রমুখের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়।
[3] ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা: ভারতের কমিউনিস্ট গোষ্ঠীগুলিকে ঐক্যবদ্ধ রূপ দেওয়ার জন্য ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে ভারতের সমস্ত কমিউনিস্ট গোষ্ঠী কানপুরে এক সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট সম্মেলনে মিলিত হয় এবং এখানে জন্মলাভ করে ভারতের কমিউনিস্ট পাটি।
[4] কার্যকলাপ : ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যকলাপের পর্যায়গুলি হল—
[i] ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট্স পার্টি গঠন: কংগ্রেসের সমাজতন্ত্রী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিসমূহ এবং কমিউনিস্টদের প্রচেষ্টায় ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলা, বম্বে, পাঞ্জাব ও যুক্তপ্রদেশে গঠিত হয় ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট্স পার্টি।
[ii] পত্রপত্রিকা: উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে বেশকিছু পত্রপত্রিকা কমিউনিস্ট আদর্শ প্রচারে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। এগুলির মধ্যে বাংলার লাঙল, বম্বের ক্রান্তি, লাহোরের কীর্তি ও ইনকিলাব এবং মাদ্রাজের ওয়ার্কার উল্লেখযোগ্য ।
[iii] মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা: শ্রমিক আন্দোলনে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকলে ব্রিটিশরা বিচলিত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট তৎপরতা দমনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কমিউনিস্ট নেতাদের গ্রেফতার করে এবং ৩২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করা হয়, যা মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত।
[iv] কমিউনিস্টদের নানা সমস্যা: কমিউনিস্টদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা প্রভৃত কমিউনিস্ট আন্দোলনকে খানিকটা পিছিয়ে দেয়। এ ছাড়া ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে সরকার কর্তৃক কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হয়।
[v] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট প্রসার: ১৯৩০-এর দশকে শ্রমিক দশকে শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনগুলি বামপন্থী আদর্শের অনুসারী হয়। বাংলা ও বিহারে সংগঠিত কৃষকআন্দোলনে কমিউনিস্টরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে কমিউনিস্ট দল যুদ্ধবিরোধী জঙ্গি আন্দোলন শুরু করে।
উপসংহার: ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি আত্মপ্রকাশ করলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই দল নিজেদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ ছিল ভারতীয়
পরিস্থিতির সঙ্গে রাশিয়ার ফারাক। তবুও নানা সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যে এই দল ভারতের আপামর জনসাধরণের মনে ছাপ ফেলতে পেরেছিল।
PDF Download link Click here
[TAG]: বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন ষষ্ঠ অধ্যায় pdf,ষষ্ঠ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর,মাধ্যমিক ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর,দশম শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর,