প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর pdf|মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর PDF

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ  বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ দশম শ্রেণির ইতিহাসের প্রশ্ন উত্তর |মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর PDF |Class 10 history 3rd chapter question pdf in bengali


আজ আমি তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি  দশম শ্রেণির ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর PDF। Class X third chapter question answer Pdf in bengali | Madhyamik history 3rd chapter question answer pdf |WBBSE পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য দশম শ্রেণি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf গুরুত্বপূর্ণ ভাবে তোমাকে সাহায্য করবে।


তাই দেড়ি না করে এই পোস্টের নীচে দেওয়া Download লিংকে ক্লিক করে প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর pdf download । Class x History 3rd chapter Question answer in Bengali Pdf ডাউনলোড করো । এবং প্রতিদিন বাড়িতে বসে প্রাক্টিস করে থাকতে থাক।ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ণ Note ,Pdf , Current Affairs,ও প্রতিদিন মকটেস্ট দিতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।


মাধ্যমিক ইতিহাসের প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হলো।

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ mcq প্রশ্ন pdf

ANS:- PDF Download link Click here 



দশম শ্রেণি ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় 1 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর|মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় 1 নম্বরের প্রশ্ন| [একটি বাক্যে উত্তর দাও]

1. ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনকালে প্রথম কবে বনাঞ্চল আইন পাস হয়েছিল?

উত্তর: ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনকালে প্রথম ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে বনাঞ্চল আইন পাস হয়েছিল।

2. কার প্রচেষ্টায় ভারতে ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস চালু হয়?

উত্তর: দিয়েত্রিখ ব্র্যান্ডিসের প্রচেষ্টায় ভারতে ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস চালু হয়।

3. কোন্ আইনের মাধ্যমে সংরক্ষিত অরণ্য তৈরি হয়েছিল?

উত্তর: ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের বনাঞ্চল আইনের মাধ্যমে সংরক্ষিত অরণ্য তৈরি হয়েছিল।

4. কোল বিদ্রোহ করে সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তর: ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দে কোল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল।

5. উত্তরবঙ্গের রংপুর বিদ্রোহ কবে সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তর: ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে উত্তরবঙ্গের রংপুর বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল।

6. কোন্ শব্দ থেকে চুয়াড় শব্দটির উৎপত্তি ?

উত্তর: ইংরেজি চার (Char) শব্দ থেকে চুয়াড় শব্দটির উৎপত্তি।

A. পাইকান কী?

উত্তর: পাইকদের ভোগ করা নিষ্কর জমিকে বলা হত পাইকান।

& দামিন-ই-কোহ কথার অর্থ কী?

উত্তর: দামিন-ই-কোহ কথার অর্থ হল পাহাড়ের প্রান্তদেশ।

9. ভাগনাডিহির মাঠের নাম কোন্ বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত ?

উত্তর: সাঁওতাল বিদ্রোহের সঙ্গে ভাগনাডিহির মাঠের নাম জড়িত।

10. রংপুর বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?

উত্তর: রংপুর বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে।

11. ভিল বিদ্রোহ করে হয়েছিল?

উত্তর: ভিল বিদ্রোহ সংঘটিত হয় ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে।

12. ভিল বিদ্রোহের একজন নেতার নাম লেখো।

উত্তর: ভিল বিদ্রোহের একজন নেতার নাম হিরিয়া শিউরাম ।

13. কোন্ উপন্যাসে সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের বর্ণনা পাওয়া যায় ?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা আনন্দমঠ উপন্যাসে সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের বর্ণনা পাওয়া যায়।


প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ 1 নং প্রশ্ন উত্তর

14. কে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূত্রপাত করেন?

উত্তর: আরবে আবদুল ওয়াহাব নামে জনৈক ব্যক্তি ওয়াহাবি আন্দোলনের সূত্রপাত করেন।

15. ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

উত্তর: ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সৈয়দ আহমেদ।

16. তিতুমির কোথায় বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেছিলেন?

উত্তর: তিতুমির চব্বিশ পরগনার বাদুড়িয়া থানার নারকেলবেড়িয়া গ্রামে বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেছিলেন।

17. কোন্‌ শব্দ থেকে ফরাজি শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে?

উত্তর: আরবি শব্দ ফরাইজ থেকে ফরাজি শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।

18 ফরাজি শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: ফরাজি শব্দের অর্থ হল ইসলাম দ্বারা নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্তব্য।

19, ফরাজি আন্দোলনের প্রবর্তক কে?

উত্তর: ফরাজি আন্দোলনের প্রবর্তক ছিলেন হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ |

20. ফরাজি আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র কোথায় ছিল?

উত্তর: ফরাজি আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র ছিলপূর্ববঙ্গের ফরিদপুর জেলার বাহাদুরপুর গ্রামে।

21.দার-উল-ইসলাম কথাটির অর্থ কী?

উত্তর: দার-উল-ইসলাম কথাটির অর্থ হল ইসলামের দেশ।

22. দুদু মিঞার মৃত্যু কবে হয়?

উত্তর: দুদু মিঞার মৃত্যু হয় ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে।

23. পাগলপন্থী বিদ্রোহের একজন নেতা কে ছিলেন?

উত্তর: পাগলপন্থী বিদ্রোহের একজন নেতা ছিলেন টিপু শাহ।

24. দাদন কী?

উত্তর: নীলচাষের জন্য কৃষকদের যে অগ্রিম অর্থ প্রদান করা হত তাকেই বলা হত দাদন।

|
প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ 2 নং প্রশ্ন উত্তর|দশম শ্রেণির ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায়ের শর্ট কোশ্চেন|

1. কোন্ কোন্ অঞ্চল নিয়ে জঙ্গলমহল অঞ্চল গঠিত ?

অথবা, জঙ্গলমহল' বলতে কী বোঝ?

উত্তর: মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও ধলভূম (বর্তমানে ঘাটশিলা) অঞ্চল নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার ঘন জঙ্গলে আচ্ছন্ন বৃহৎ অঞ্চল নিয়ে জঙ্গলমহল গঠিত।

2. চুয়াড় বিদ্রোহ কখন, কোথায় ও কাদের দ্বারাসংঘটিত হয়েছিল?

উত্তর: ১৭৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিন দশক ধরে মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও ধলভূম (বর্তমানে ঘাটশিলা) জুড়ে চুয়াড় বিদ্রোহ হয় | ঘড়োই, খয়রা, মাঝি ও চুয়াড় প্রভৃতি অঞ্চলের আদিবাসীরা এই বিদ্রোহ করেছিল।

3. কোম্পানির শাসনকালে বাংলার প্রথম আদিবাসী বিদ্রোহের নাম কী? এই বিদ্রোহের দুজন নেতার নামলেখো।

উত্তর: কোম্পানির শাসনকালে বাংলার প্রথম আদিবাসী বিদ্রোহ ছিল চুয়াড় বিদ্রোহ। চুয়াড় বিদ্রোহের দুজন নেতার নাম হল জগন্নাথ সিং ধল এবং দুর্জন সিং |

4/কত খ্রিস্টাব্দে কোল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়?এই বিদ্রোহের দুজন নেতার নাম লেখো।

উত্তর: ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির শোষণধর্মী শাসনের বিরুদ্ধে কোল বিদ্রোহ প্রথম শুরু হয়। এই

বিদ্রোহ ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দে ব্যাপক আকার ধারণ করে। 

কোল বিদ্রোহের দুজন নেতা ছিলেন বুন্ধু ভগত ও জোয়া ভগত।

5. সাঁওতাল বিদ্রোহ কবে ও কোথায় শুরু হয়?

দশম শ্রেণির ইতিহাস pdf

উত্তর: সাঁওতাল বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন। সিধু ও কানহুর নেতৃত্বে প্রায় ১০

হাজার সাঁওতাল ভাগনাডিহির মাঠে সম্মিলিত হয়েস্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য গঠনের সংকল্প নেয় এবং পাঁচকাঠিয়া বাজারের পাঁচজন মহাজনকে ও দিঘি থানার অত্যাচারী দারোগাকে হত্যা করে তারা বিদ্রোহের সূচনা করে।

6. সাঁওতাল পরগনা কী?

উত্তর: সাঁওতাল পরগনা হল সাঁওতালদের জন্য একটি পৃথক রাজ্য | সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ সরকার এই পরগনা গঠন করতে বাধ্য হয়েছিল। এই পরগনায় সাঁওতালরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অধিকার পেয়েছিল।

7.খুৎকাটি বা খুন্তকাটি প্রথা কী?

উত্তর: মুন্ডারা নিজেদের জমিতে যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে খুৎকাটি প্রথায় চাষ করত। খুৎকাটি শব্দটির অর্থ হল জনগোষ্ঠীর যৌথ মালিকানা। নিবেশিক শাসনকালে যৌথ মালিকানায় চাষ ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়।

8. বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে উলগুলান বা সশস্ত্র বিদ্রোহ করে শুরু হয়? কবে এই বিদ্রোহের  অবসান ঘটে ?

উত্তর: বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে উলগুলান বা সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয় ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর।

১৯০০ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন বিরসা মুন্ডার মৃত্যুর পরে এই বিদ্রোহের অবসান ঘটে।

9. বিরসা মুন্ডা করে ব্রিটিশবাহিনীর হাতে বন্দি হন? করে তাঁর মৃত্যু ঘটে ?

উত্তর: ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি বিরসা মুন্ডা ব্রিটিশবাহিনীর হাতে বন্দি হন এবং রাঁচির জেলে বন্দি থাকেন।রাঁচির জেলে বন্দি অবস্থায় বিরসা মুন্ডা ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।


দশম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ|দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর তৃতীয় অধ্যায়|


10. কেনারাম ও বেচারাম বলতে কী বোঝ?

উত্তর: দোকানদাররা যখন সাঁওতালদের থেকে ফসল কিনত তখন তারা সাঁওতালদের ঠকানোর জন্য প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ওজনের ভুয়ো বাটখারা ব্যবহার করত। সেই বাটখারা কেনারামনামে পরিচিতছিল | আবার দোকানদাররা যখন সাঁওতালদের কিছু বিক্রি করত, তখন তারা আর-এক ধরনেরপ্রয়োজনের তুলনায় কম ওজনের ভুয়ো বাটখারা ব্যবহার করত। সেই বাটখারার নাম ছিল বেচারাম।

11. কোন্ উপন্যাসে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের উল্লেখ আছে? এই বিদ্রোহের দুজন নেতার নাম লেখো।

উত্তর: আনন্দমঠ নামক উপন্যাসে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের উল্লেখ আছে।

এই বিদ্রোহের দুজন নেতার নাম হল ভবানী পাঠক এবং মজনু শাহ।

12. সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ প্রথম কোথায় শুরু হয়। পরবর্তীকালে তা কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়ে?

উত্তর: সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ সর্বপ্রথম ঢাকাতে শুরু হয়।

পরবর্তীকালে তা দাবানলের মতো রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, মালদহ, কোচবিহার, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।

13. সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ কেন সংঘটিত হয়?এই বিদ্রোহের একজন নেত্রীর নাম লেখো।

উত্তর: ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের ফলে উত্তর বাংলার গরিব চাষিদের দারিদ্র্য চরমে পৌঁছোয় এবং তা

প্রতিকারের জন্য তারা মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে ভবানীপাঠক, মজনু শাহ, মুসা শাহ, চিরাগ আলি প্রমুখের নেতৃত্বে বিদ্রোহ শুরু হয় (১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দ)। সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের একজন নেত্রী ছিলেন দেবী চৌধুরানি।

14. ওয়াহাবি কথাটির অর্থ কী? ভারতে এই আন্দোলন সর্বপ্রথম কে শুরু করেছিলেন এবং কোথায়?

উত্তর: ওয়াহাবি কথাটির অর্থ হল ইসলাম ধর্মের নবজাগরণ! এই আন্দোলন সর্বপ্রথম মহম্মদ ইবন আবদুল ওয়াহাব (১৭০৩-৮৭ খ্রি.) আরবে শুরু করেছিলেন। দিল্লির প্রখ্যাত সন্ত শাহ ওয়ালিউল্লাহ্ ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূত্রপাত করলেও রায়বেরিলির সৈয়দ আহমেদ ব্রেলভি ভারতে এই আন্দোলনের প্রকৃত প্রবর্তক ছিলেন।

15. কে ভারতবর্ষে ওয়াহাবি আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তোলেন? তাঁর স্লোগান কী ছিল?

উত্তর: ভারতবর্ষে ওয়াহাবি আন্দোলনের জনক ছিলেন উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলির সৈয়দ আহমেদ

ব্রেলভি (১৭৮৬-১৮৩১ খ্রি.)। তিনি এই আন্দোলনকে ভারতবর্ষে সবথেকে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।তাঁর স্লোগান ছিল—পবিত্র কোরানে ফিরে যাও।


16.ওয়াহাবি আন্দোলনের মূল লক্ষ্য কী ছিল?

উত্তর: ওয়াহাবি আন্দোলনের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল– [1] ভারতীয় ইসলাম ধর্মের সংস্কার সাধন ওপুনরুজ্জীবন, [2) ইসলাম ধর্মের থেকে কুসংস্কারগুলি দূর করা, [3] ভারতবর্ষকে দার-উল-ইসলামে (ইসলামের দেশে) পরিণত করা এবং [4] শোষণকারী ইংরজেদেরকে ভারত থেকে বিতাড়িত করা।

17. বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা কে ছিলেন? বাংলায় এই আন্দোলনের প্রধান ঘাঁটি কোথায় ছিল?

উত্তর: বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা ছিলেন তিতুমির (মির নিসার আলি)। বাংলায় এই আন্দোলনের প্রধান ঘাঁটি ছিল উত্তর চবিবশ পরগনা জেলার বাদুড়িয়া থানার নারকেলবেড়িয়া গ্রামে ।

18. তিতুমিরের বারাসাত বিদ্রোহের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী ছিল? অথবা, তিতুমিরের নেতৃত্বে বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: তিতুমিরের বারাসাত বিদ্রোহের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল – [1] ইসলাম ধর্মের কুসংস্কার দূর করে এই ধর্মকে পরিশুদ্ধ করা। [2] জমিদার ও নীলকর শ্রেণির শোষণ থেকে কৃষকসমাজকে মুক্ত

করা। [3] ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণযন্ত্রের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলমান ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়েতোলা।


প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ 4 নং প্রশ্ন উত্তর|মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর|


1 সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলাফল সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর নির্মম দমনপীড়নে সাঁওতালদের বিদ্রোহ (১৮৫৫-৫৬ খ্রি.) ব্যর্থ হলেও, এই বিদ্রোহের ফলাফল ও প্রভাব ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কেন-না, এই বিদ্রোহের ফলে সাঁওতালদের অভাব-অভিযোগ প্রতিকারের জন্য কিছু ব্যবস্থা ব্রিটিশ সরকার গ্রহণ করে। যেমন-

[1] সাঁওতাল পরগনা গঠন: সরকার সাঁওতালদের দাবি মেনে নিয়ে সাঁওতাল পরগনা নামে সাঁওতালদের জন্য একটি পৃথক রাজ্য গঠন করে।

[2] বহিরাগতদের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ: সরকার সাঁওতাল পরগনায় জমিদার-মহাজনসহ অন্যান্য

বহিরাগতদের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করে।

[3] সুদের হার নির্দিষ্টকরণ : মহাজনদের সুদের হার নির্দিষ্ট ও সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়।

[4] নতুন বিচারব্যবস্থার উদ্ভাবন: সরকার সাঁওতালদের জন্য নতুন আদালত গঠন করে সাঁওতালি প্রথায় বিচারকার্য সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করে।

[5] উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান : সাঁওতালদের সন্তুষ্ট করার জন্য তাদের উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

[6] স্বাধীনতা আন্দোলনের জমি তৈরি : পরবর্তীকালের স্বাধীনতা আন্দোলনের জমি তৈরির ( ক্ষেত্রে সাঁওতাল বিদ্রোহের গুরুত্ব ছিল অসামান্য। 


টীকা লেখো: চুয়াড় বিদ্রোহ।

ঔপনিবেশিক আমলের ভূমিব্যবস্থায় শোষিত হয়ে বাংলার বাঁকুড়া, মেদিনীপুর ও ধলভূম অঞ্চলের বসবাসকারী চুয়াড় সম্প্রদায় ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে চুয়াড় বিদ্রোহ সংঘটিত

[1] বিদ্রোহের কারণ : ভূমিব্যবস্থায় চুয়াড়রা জমিজমা, গৃহ, অরণ্য সব হারিয়ে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। এমনকি মেদিনীপুরের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট ব্রিটিশ সরকারের রেভিনিউ বোর্ডের

কাছে লিখিত এক পত্রে স্বীকারও করেন যে, চুয়াড়দের জমি থেকে উচ্ছেদ এবং রাজস্বের উচ্চহার হল সেই বিদ্রোহের প্রধান কারণ। 

[2] বিদ্রোহের প্রসার: ঔপনিবেশিক সরকার কর্তৃক গৃহীত নতুন ভূমিব্যবস্থার ফলে চুয়াড়দের জমিতে নতুন প্রজারা এসে চাষবাস শুরু করে। এর ফলে চুয়াড়রা ক্ষুব্ধ হয়ে নতুন প্রজাদের ওপর আক্রমণ চালায়। মেদিনীপুরের রানি শিরোমণি গোপনে বা প্রকাশ্যে বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন জানান ।বিদ্রোহীরা সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালায় মেদিনীপুর পরগনায়।

[3] বিদ্রোহ দমন: সরকার প্রায় দুই বছর ধরে সৈন্যবাহিনীর অভিযান চালিয়ে ও ভেদনীতি প্রয়োগ

করে চুয়াড় বিদ্রোহ দমন করেছিল। তা ছাড়া চুয়াড়দের নানা কাজে নিযুক্ত করা ও সুযোগসুবিধা প্রদানের মাধ্যমে চুয়াড় বিদ্রোহকে স্তিমিত করতে উদ্যত হয় ব্রিটিশ সরকার।

মন্তব্য: চুয়াড় বিদ্রোহকে জমিদার ও কৃষকদের যৌথ বিদ্রোহ বললে অতিশয়োক্তি হয় না। অনেক সাধারণ কৃষকও এই বিদ্রোহে শামিল হয়েছিল।



দশম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়

টীকা লেখো: কোল বিদ্রোহ।

● উত্তর ছোটোনাগপুর অঞ্চলটি ছিল উপজাতি আন্দোলনের কেন্দ্রভূমি যেখানে কোল, হো, মুন্ডা, ওঁরাও প্রভৃতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপজাতি স্বাধীনভাবে বসবাস করত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর কোল উপজাতির ওপর জমিদার ও মহাজন শ্রেণির অত্যাচার বাড়তে থাকলে কোলরা বিদ্রোহের পথ বেছে নেয়।

বিদ্রোহের কারণ: এই আন্দোলনের কারণ হল হিন্দু, মুসলিম ও শিখ মহাজনদের জমির ইজারা লাভ ও উচ্চহারে খাজনা আদায়ের বিরোধিতা করা। এ ছাড়া মদের ওপর শুল্ক আরোপ, জোর করে কোলদের দিয়ে আফিম চাষ করানো, বেগার খাটানো, নারী অপহরণ ইত্যাদির জন্যও বিদ্রোহ শুরুহয়। খাজনা অনাদায়ে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুঠপাট, জমি বেদখল ইত্যাদি করা হত। কোল উপজাতির মানুষ এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। তারা গ্রামে গ্রামে তির-ধনুক বিলি করে মানুষকে মহাজন, ইজারাদার ও সরকারের ত্রিমুখী শোষণের বিরুদ্ধে এক হতে আহবান জানায়। চার্লস মেটকাফের মতে, কোলদের লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ধ্বংস করা।

বিদ্রোহ সূচনা: ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে কোলদের “পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে বিদ্রোহের মাধ্যমে। বুদ্বু ভগৎ, সুই মুন্ডা, ঝিন্দরাই মানকি প্রমুখের নেতৃত্বে কোল বিদ্রোহ সফলভাবে শুরু হয় = এবং প্রথম দুই বছর ধরে বিদ্রোহীরা জমিদার, জোতদার, মহাজন, মজুতদার ও ইংরেজ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালায়।

বিদ্রোহের অবসান: ব্রিটিশ সরকার দুই বছর ধরে চলতে থাকা কোল বিদ্রোহ দমন করার জন্য পাটনা ও দানাপুর থেকে সৈন্যবাহিনী পাঠায় এবং বিদ্রোহ দমন করতে সফল হয়।

মন্তব্য: কোল বিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার দক্ষিণ-পশ্চিম এজেন্সি নামে একটি সংরক্ষিত এলাকা সৃষ্টি করে এবং ব্রিটিশ নিয়মকানুন প্রত্যাহার করে কোলদের নিজস্ব আইনপ্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়।



সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের প্রথম পর্যায়ে কৃষিজীবী হিন্দু সন্ন্যাসী ও মুসলমান ফকিরদের

নেতৃত্বে বাংলা ও বিহারের কিছু অঞ্চল জুড়ে যে বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল তা সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

(1) বিদ্রোহের কারণ: ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্যাপ্ত সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল—

11 তীর্ঘকর আরোপ: ঐতিহ্য অনুসারে সন্ন্যাসী- ফকিররা বিভিন্ন সময় দলবদ্ধভাবে তীর্থভ্রমণে শামিল হত। ইংরেজ শাসকবর্গ রাজস্বের চাপ ছাড়াও তীর্থযাত্রীদের ওপর মাথাপিছু কর ধার্য করে যথেষ্ট অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেছিল।

[ii] রাজস্বের চাপ: ইংরেজ কোম্পানি বাংলা সুবায় উচ্চহারে রাজস্ব নির্ধারণ করায় কৃষিজীবী

সন্ন্যাসী ও ফকিররা প্রবল করভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে এবং তারা বিদ্রোহের পথ বেছে নেয়।

ii] মধ্যস্বত্বভোগীদের অত্যাচার : কোম্পানির কর্মচারী, ভারতীয় ইজারাদার প্রমুখ

মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ অত্যাচারে

জর্জরিত সন্ন্যাসী-ফকিররা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।

21 বিদ্রোহের ব্যাপ্তি: ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে সন্ন্যাসীরা প্রথম আক্রমণ করে ঢাকায় ইংরেজ কুঠি। তারপর বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে ক্রমশ ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, রংপুর, দিনাজপুর, পাটনা প্রভৃতি অঞ্চলে।

13) বিদ্রোহের নায়কবৃন্দ: এই আন্দোলনের নায়কদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরানি, মজনু শাহ, চিরাগ আলি, মুসা শাহ প্রমুখ।

[4] বিদ্রোহের চরিত্র: বড়োলাট ওয়ারেন হেস্টিংস সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহকে ‘হিন্দুস্থানের যাযাবর ও পেশাদার ডাকাতদের উপদ্রব’ বলে চিহ্নিত করলেও, এটি ছিল প্রকৃতরূপে একটি, কৃষকবিদ্রোহ | লেস্টার হ্যাচিনসনের মতে, ১০০ বছর পর বাংলায় যে বিপ্লববাদী আন্দোলন শুরু হয়, এটি ছিল তার অগ্রদূত।



প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ 8 নং প্রশ্ন উত্তর pdf|
দশম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন
  1. সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।

• উত্তর

ভূমিকা: ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংঘটিত উপজাতি বিদ্রোহের মধ্যে অন্যতম ছিল সাঁওতাল

বিদ্রোহ। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে বিহারের রাজমহল থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুরশিদাবাদ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের শান্তিপ্রিয় অরণ্যচারী সাঁওতালরা এই বিদ্রোহ করে।

[1] বিদ্রোহের কারণ: ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল ধর্ম বিদ্রোহ শুরু হয় কতকগুলি কারণে যথা—

 [i] খাজনার হার: নতুন ভূমিব্যবস্থায় সাঁওতালদের ওপর খাজনা ধার্য করা হয়। খাজনার হার

ক্রমশ বাড়তে থাকায় তা দেওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে ওঠে।

[iii] কম মজুরি: লর্ড ডালহৌসির আমলে রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ শুরু করা হলে রেলের

কর্মচারী ও ঠিকাদাররা সাঁওতালদের নামমাত্র মজুরিতে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করত।

[2] বিদ্রোহের ফলাফল : সাঁওতাল বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এর পরোক্ষ ফল ছিল সুদূরপ্রসারী । যথা-

[i] ত্রাসের সঞ্চার: ৬ মাস ধরে চলা সাঁওতালবিদ্রোহ ব্রিটিশ সরকার, জমিদার ও স্থানীয় জনসাধারণের মনে গভীর ত্রাসের সঞ্চার করে।

[ii] আর্থিক বিপর্যয়: সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলে ঔপনিবেশিক সরকারের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয় এবং সরকারি রাজকোশে টান পড়ে।

[ii] উচ্চ সুদের হারে ঋণ: সাঁওতালদের ওপর কর আরোপিত হলে অর্থাভাবে মহাজনদের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ হার পর্যন্ত সুদে টাকা ঋণ নিত। এর ফলে ঋণগ্রস্ত সাঁওতালদের ঘটিবাটি ভূ সবই বিক্রি করে মহাজনদের ঋণের টাকা শোধ করতে হত।

[iii] গণসংগ্রাম: আপসহীন গণসংগ্রামের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত ছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ, যাতে অংশগ্রহণ করে সাঁওতাল ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যবর্তী আধা-আদিবাসী শ্রেণি ও নিম্নবর্ণের দরিদ্র হিন্দুরা।

[iv] নমনীয় সিদ্ধান্ত: সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে গঠিত হয় সাঁওতাল পরগনা এবং

সাঁওতালদেরকে পৃথক উপজাতি হিসেবে স্বীকার করা হয়।


উপসংহার: কেউ কেউ সাঁওতাল বিদ্রোহে ধর্মের প্রভাব দেখতে পেলেও এই বিদ্রোহ প্রকৃতপক্ষে

ধর্মকেন্দ্রিক ছিল না। ভারতের যুগান্তকারী, মহাবিদ্রোহের অগ্রদূত স্বরূপ সাঁওতাল বিদ্রোহ সমগ্র ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের ভিত্তিমূল পর্যন্ত নাড়িয়ে দিয়েছিল। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার সাঁওতালদের এই কঠিন সংগ্রামকে স্বাধীনতা সংগ্রামের মর্যাদা দিতে কুণ্ঠিত হননি।


2.মুন্ডা বিদ্রোহ ঘটেছিল কেন? এই বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল? [3+5]

উত্তর

ভূমিকা: মুন্ডা বিদ্রোহের অপর নাম ছিল উলগুলান। যার অর্থ হল ভয়ংকর বিশৃঙ্খলা। ১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দে বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে সংঘটিত এই বিদ্রোহ ছিল ভারতের অন্যতম আদিবাসী বিদ্রোহ।

[1] বিদ্রোহের কারণ: মুন্ডা বিদ্রোহের পশ্চাতে নানা কারণ ছিল—

[i] ঔপনিবেশিক শোষণ: ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের শিকার হয়েছিল মুন্ডা সম্প্রদায়।

[ii] দিকুদের অত্যাচার: মুন্ডারা উত্তরাধিকার সূত্রে যেসব নিষ্কর খেতখামার ও বসতবাড়ি পূর্বসূরীদের কাছ থেকে লাভ করেছিল, ব্রিটিশ সমর্থনপুষ্ট দালাল-দিকুরা তা অত্যাচার এবং বলপূর্বক দখল করেছিল।

[iii] অতিরিক্ত করের বোঝা: সরকার মুন্ডা উপজাতির ঐতিহ্যগত শাসন, আইন ও বিচারসংক্রান্ত রীতিনীতি এবং সামাজিক প্রথার অবসান ঘটিয়ে শস্যের পরিবর্তে নগদ খাজনা দেওয়ার রীতি চালু করলে মুন্ডাদের মনে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে।

[iv] খুন্তকাটি (দখলিকৃত জমি) প্রথার অবসান কোম্পানির কর্মচারীরা মুন্ডাদের খুস্তকাটি

প্রথার অবসান ঘটিয়ে সেখানে ব্যক্তিগত মালিকানা স্বত্বের সৃষ্টি করলে মুন্ডারা ক্ষিপ্ত হয়।

[2] ফলাফল: নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও কর্মসূচির অভাব, সাংগঠনিক ব্যর্থতা, যোগ্য নেতার অভাব প্রভৃতি

কারণে মুন্ডা বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়। তা সত্ত্বেও এই বিদ্রোহের গুরুত্ব ও ফলাফল অনস্বীকার্য।

[i] প্রজাস্বত্ব আইন পাস: সরকার মুন্ডাদের খুন্তকাটি প্রথাকে স্বীকৃতি জানাতে বাধ্য হয়।

এরপর সরকার খ্রিস্টাব্দে ১৯০৮ ছোটোনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন পাস করে।

[ii] রাজনৈতিক চেতনার জাগরণ: মুন্ডা বিদ্রোহ পরাধীন মুন্ডাদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা জাগ্রত করতে সক্ষম হয়েছিল।

[iii] বিরসা সম্প্রদায়ের জন্ম: বিরসা মুন্ডা ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন মারা যান। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি মুন্ডাদের মধ্যে অমর হয়ে রয়েছেন। পরবর্তীকালে তাঁকে সম্মান জ্ঞাপন করে বিরসা সম্প্রদায় নামে একটি নতুন গোষ্ঠীর জন্ম হয়।

উপসংহার: পরিশেষে একথা বলা যেতে পারে যে, মুন্ডা বিদ্রোহ দুঃখ-দারিদ্র্যক্লিষ্ট মুন্ডা আদিবাসীদের

মনে আশার আলো জ্বালাতে সক্ষম হয় | মুন্ডারা তাদের রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ক্রমে সচেতন হয়ে ওঠে।



মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় 4 নম্বরের প্রশ্ন

3.ওয়াহাবি আন্দোলনের লক্ষ্য কী ছিল? এই প্রসঙ্গে তিতুমিরের আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।[3+5]

উত্তর

ভূমিকা: ইসলাম ধর্মের বিশুদ্ধিকরণের লক্ষ্যে যে আন্দোলনটি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে তা হল ওয়াহাবিআন্দোলন | ওয়াহাবি কথাটির অর্থ হল পুনরুজ্জীবন না নবজাগরণ।

[1] আন্দোলনের লক্ষ্য: ওয়াহাবি আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল—

[i] কুসংস্কার দূরীকরণ: ইসলাম ধর্মে প্রচলিত নানান কুসংস্কার দূর করে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের আদর্শ অনুযায়ী ইসলাম ধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করা।

[ii] নৈতিক ও আধ্যাত্মিক আদর্শ: এক সহজ-সরল জীবনযাত্রা এবং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক আদর্শের পুনঃপ্রতিষ্ঠার তাগিদেই এই আন্দোলন গড়ে ওঠে।

[iii] ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা: ভারতের স্বাধীনতার প্রধান শত্রু ইংরেজদের ভারত থেকে বিতাড়িত করা।


[2] তিতুমির ও ওয়াহাবি আন্দোলন: ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন রায়বেরিলির সৈয়দ আহমেদ ব্রেলভি। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে মির নিসার আলি বা তিতুমির বাংলায়ওয়াহাবি আন্দোলনকে সংগঠিত করেন।

[i] তিতুমিরের আন্দোলনের লক্ষ্য: ইসলাম ধর্মকে তার স্বমহিমায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই ছিলতিতুমিরের লক্ষ্য। তাঁর মূল বক্তব্য ছিল একমাত্র আল্লাহকেই আরাধনা ও মান্য করতে

হবে। পির-পয়গম্বরকে মানা চলবে না। ইসলাম ধর্ম-বহির্ভূত সর্বপ্রকার কুসংস্কার ও প্রথা পুরোপুরি পরিত্যাগ করতে হবে। জমিদার, মহাজন, নীলকরদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে তিতুমির যথার্থভাবে সংগঠিত করেন ওয়াহাবি আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। নারকেলবেড়িয়ায় তিতুমির বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন এবং নিজেকে বাদশা বলে ঘোষণা করেন।

[ii] জমিদার কৃষুদেব রায়ের সঙ্গে তিতুমিরের সংঘাত: জমিদাররা এই আন্দোলনের ব্যাপক বিস্তার সুনজরে দেখেনি। এই আন্দোলন প্রতিরোধ করার জন্য পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায় ঘোষণা করে যে, প্রত্যেক ওয়াহাবিকে দাড়ি রাখার জন্য আড়াই টাকা জরিমানা দিতে হবে।

[iii] তিতুমিরের মৃত্যু: ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে লর্ড বেন্টিঙ্ক তিতুমিরের আন্দোলন দমন করার

জন্য সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন। ইংরেজ বাহিনী তিতুমিরের স্বাধীন ক্ষমতার প্রতীক

বাঁশের কেল্লাটি ধ্বংস করে। তিতুমির পরাজিত ও নিহত হন এবং তাঁর প্রধান সেনাপতি গোলাম মাসুম ধরা পড়েন।

উপসংহার: বিতর্কের মধ্যে না গিয়ে একথা বলা যেতে পারে যে, ধর্মীয় চেতনা এই আন্দোলনে

অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। জমিদার-বিরোধিতা থেকে সরে এই আন্দোলন শেষপর্যন্ত ইংরেজ সরকারেরবিরোধিতায় পর্যবসিত হয়।


4. নীলবিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।

ভূমিকা: বাংলার ইংরেজ-বিরোধী কৃষকবিদ্রোহ গুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহ ছিল

নীলবিদ্রোহ | ১৮৫৮-৫৯ খ্রিস্টাব্দের এই বিদ্রোহ ছিল কোম্পানি শাসনের অবসানের পর বাংলার প্রথম কৃষকবিদ্রোহ |

[1] নীলবিদ্রোহের কারণ : এই বিদ্রোহের কারণ ছিল নিম্নরূপ —

[i] চরম বঞ্চনা: নীলকর সাহেবরা নিজেদের স্বার্থে জোর করে চাষিদের নীলচাষ করতে বাধ্য

করত, যা জমির উর্বরতা কমিয়ে দিত। এর ফলে চাষিদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

[ii] দাদন প্রথা: চাষিদের দিয়ে নীলচাষ করানোর জন্যে নীলকর সাহেবরা বিঘা প্রতি ২ টাকা

অগ্রিম দিত, যা দাদন প্রথা নামে পরিচিত ছিল। কৃষকরা অনেকসময় অভাবের দায়ে দাদনের মরণ ফাঁদে পা দিত এবং চরম বঞ্চনার শিকার হত।


নীলচাষিদের ওপর নীলকররা মর্মান্তিক অত্যাচার চালাত। 

[iii] উৎপীড়ন: দাদনের ঋণ পরিশোধে অপারণ নীলচাষিদের গোরু-বাছুর, ছাগল, মুরগি, কৃষিজ সরঞ্জাম ইত্যাদি লুঠ করত।

[iv] পত্রপত্রিকার ভূমিকা: তৎকালীন বেশ কিছু

পত্রিকা যেমন হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের হিন্দু পেট্রিয়ট নীলকর সাহেবদের অত্যাচার ও অবহেলার জীবন্ত ছবি তুলে ধরে, যা নীলবিদ্রোহে ইন্ধন জোগায়। নীলবিদ্রোহের পটভূমি তৈরির ক্ষেত্রে ঈশ্বর গুপ্তের সংবাদ

প্রভাকর ও অক্ষয়কুমার দত্তের তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার যথেষ্ট ভূমিকা ছিল।


[2] নীলবিদ্রোহের ফলাফল: ফলাফলের বিচারে নীলবিদ্রোহ ছিল একটি সফল কৃষকবিদ্রোহ | ফলাফল ও গুরুত্বের বিচারে এটি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ——

[i] চাষবাস কৃষকদের স্বেচ্ছাধীন: সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল যে, নীলচাষ কৃষকদের স্বেচ্ছাধীন। এই বিষয়ে কৃষকদের ওপর কোনোরূপ জোর খাটানো যাবে না। এর পরিণতিতে নীলবিদ্রোহের অবসান হয়।

[ii] জাতীয় ঐক্যবোধ: নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ও কৃষকদের স্বার্থরক্ষার জন্য বাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় এগিয়ে আসে এবং এর ফলে জাতীয় ঐক্যবোধের সৃষ্টি হয়।

[iii] দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: ইংরেজ কর্মচারীদের একাংশ নীলবিদ্রোহের প্রতি সমর্থন দেখিয়েছিলেন। ফলে ভারতীয়দের কাছে ইংরেজদের হিতাকাঙ্ক্ষী রূপও ধরা পড়ে।

উপসংহার: ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি কৃত্রিম উপায়ে নীল উৎপাদনের পদ্ধতি আবিষ্কার করলে ভারতে নীলচাষের গুরুত্ব কমে যায় এবং কৃষিজ নীলের ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যায়। অধ্যাপক চিত্তত পালিতের মতে, জমিদারদের স্বার্থবিরোধী। এই বিদ্রোহে কৃষকদের ভূমিকা ছিল না।


PDF Download link Click here 


[TAG]: প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ তৃতীয় অধ্যায় pdf,তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর,মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর,দশম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর,


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url