নানা রঙের দিন নাটক প্রশ্ন উত্তর|উচ্চমাধ্যমিক বাংলা নানা রঙের দিন নাটক প্রশ্ন উত্তর PDF
নানা রঙের দিন -অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়| দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা নানা রঙের দিন প্রশ্ন উত্তর |HS bengali Nana raner din natok question answer pdf download.
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ‘নানা রঙের দিন’
আজ আমি তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি উচ্চমাধ্যমিক নানা রঙের দিন প্রশ্ন উত্তর PDF। Class 12 bengali Nana raner dina natok question answer pdf|WBCHSE পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য দ্বাদশ শ্রেণি বাংলা নাটক নানা রঙের দিন প্রশ্ন উত্তর pdf download. তোমাকে সাহায্য করবে।
তাই দেড়ি না করে এই পোস্টের নীচে দেওয়া Download লিংকে ক্লিক করে |সমর সেনের লেখা নানা রঙের দিন প্রশ্ন উত্তর pdf download করো এবং প্রতিদিন বাড়িতে বসে প্রাক্টিস করে থাকতে থাক।ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ণ Note ,Pdf ,Current Affairs,ও প্রতিদিন মকটেস্ট দিতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা নানা রঙের দিন প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হলো।
Read More:--
দ্বাদশ শ্রেণি বাংলা নানা রঙের দিন 1 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
কমবেশি ২০টি শব্দে উত্তর দাও।
প্রশ্ন . ‘নানা রঙের দিন’ নাটকটি কোন্ বিদেশি নাটকের ছায়ায় রচিত?
উত্তর: ‘নানা রঙের দিন’ নাটকটি আন্তন চেখভের সোয়ান সং নাটকের ছায়া অবলম্বনে রচিত।
প্রশ্ন . ‘নানা রঙের দিন’ কত অঙ্কের নাটক?
উত্তর: ‘নানা রঙের দিন’ এক অঙ্কের নাটক।
প্রশ্ন . ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রম্পটারের নাম কী?
উত্তর: ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রম্পটারের নাম কালীনাথ সেন।
প্রশ্ন . ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রেক্ষাপট কোথায় ছিল?
উত্তর: ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রেক্ষাপট ছিল পেশাদারি থিয়েটারের একটি ফাঁকা মঞ্চ।
প্রশ্ন . ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে মঞ্চসজ্জার কীরকম বর্ণনা দেওয়া আছে?
অথবা, ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রারম্ভে যে মঞ্চসজ্জার বিবরণ আছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে অন্ধকার, ফাঁকা মঞ্চের পিছনের অংশে পূর্বে অভিনীত নাটকের দৃশ্যপট, জিনিসপত্র, যন্ত্রপাতি, মাঝখানে একটা উলটানো টুল দেখানো হয়েছে।
প্রশ্ন . ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের শুরুতে মঞ্চে কী ওলটানো ছিল?
উত্তর: ‘নানা রঙের দিন' নাটকের শুরুতে মঞ্চে একটি টুল ওলটানো ছিল।
প্রশ্ন . ‘নানা রঙের দিন' নাটকে দিলদারের পোশাক পরে কে প্রবেশ করেছিলেন?
উত্তর: ‘নানা রঙের দিন' নাটকে দিলদারের পোশাক পরে মঞ্চে প্রবেশ করেছিলেন বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় |
প্রশ্ন . . ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের শুরুতে রজনীকান্তের হাতে কী ছিল?
উত্তর: ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের শুরুতে রজনীকান্তের হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি ছিল।
প্রশ্ন . “...হল ফাঁকা, শাজাহান-জাহানারা সব পাত্রপাত্রী ভোভো...”—এসময়ে একমাত্র কাকে মঞ্চে দেখা গিয়েছিল?
উত্তর: ফাঁকা হলে, অভিনয়ের পর যখন শাজাহান-জাহানারা-সহ সবাই চলে গিয়েছে তখন একমাত্র দিলদারকেই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল।
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা নানা রঙের দিন mcq প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন . “...আমাকে ছেড়ে দিন।”—বক্তা কীসের থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন?
উত্তর: জীবনে মৃত্যুকালের মুখোমুখি হতে চান না বলেই নাটকের শেষ দৃশ্যে অভিনয় করা থেকে বৃদ্ধ রজনীকান্ত তাঁকে ছেড়ে দিতে বলেছেন।
প্রশ্ন . . রজনীবাবু কত বছর বয়স থেকে নাট্যাভিনয় করছেন?
উত্তর: আটষট্টি বছরের রজনীকান্ত যেহেতু পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে নাট্যাভিনয় করেছেন, তাই বলা যায়, তিনি (৬৮-৪৫) বছর, অর্থাৎ ২৩ বছর থেকে নাট্যাভিনয় করছেন।
প্রশ্ন . “...সব মিলিয়ে যেন একটা শ্মশান...”—‘সব মিলিয়ে' কথাটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘সব মিলিয়ে’ বলতে প্রেক্ষাগৃহের গভীর অন্ধকার ব্যালকনি, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির বক্সগুলিকে বোঝানো হয়েছে ।
প্রশ্ন . “...সব আছে শুধু...”—কী না থাকার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: সব থাকা সত্ত্বেও ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে রাতের প্রেক্ষাগৃহে কোনো মানুষ না থাকার কথা বলা হয়েছে ।
প্রশ্ন . “...সব ভূতুড়ে বাড়ির মতো খাঁ খাঁ করছে...”—কাকে বক্তার ‘ভূতুড়ে বাড়ি’ বলে মনে হয়েছে?
উত্তর: রাতের অন্ধকারে জনশূন্য প্রেক্ষাগৃহকে বক্তা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভূতুড়ে বাড়ি’ বলে মনে হয়েছে।
প্রশ্ন . . “আপনার মতো বয়েস হয়েছে যাঁদের—আটষট্টিটা বছর,” —তাঁরা কী করেন?
উত্তর: রজনীকান্তের মতো আটষট্টি বছর বয়সের লোকেরা সময়মতো মাপজোখ করে খাওয়াদাওয়া করেন, সকাল-সন্ধে বেড়াতে যান, সন্ধেবেলা কীর্তন শোনেন এবং ভগবানের নাম করেন।
প্রশ্ন . . “আপনি বামুন-মানুষ মিছে কথা বলব না”—বক্তা কোন্ সত্য কথাটি বলেছিল?
উত্তর: বক্তা কালীনাথ গ্রিনরুমে রোজ রাত্রে লুকিয়ে তার ঘুমোনোর কথাটি বলেছিল।
নানা রঙের দিন 1 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন . “...এ কথাটা মালিকের কানে তুলবেন না চাটুজ্জেমশাই,”—কোন্ কথা?
উত্তর: শোয়ার জায়গা না থাকায় প্রম্পটার কালীনাথ সেন যে রোজ রাত্রে লুকিয়ে গ্রিনরুমে ঘুমোন—সেই ‘কথা’ প্রসঙ্গে মন্তব্যটি করা হয়েছে।
প্রশ্ন . ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে কালীনাথ সেনকে কেন গ্রিনরুমে ঘুমোতে হত?
উত্তর: অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে কালীনাথ সেনকে গ্রিনরুমে ঘুমোতে হত, কারণ তাঁর শোয়ার কোনো জায়গা ছিল না।
প্রশ্ন . “...মরা হাতি সোয়া লাখ।”—এমন মন্তব্যের কারণ কী? [হেয়ার স্কুল]
উত্তর: রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় দিলদারের চরিত্রে বৃদ্ধ বয়সে অভিনয় করে সাতটা ক্ল্যাপ আর যে প্রশংসা পেয়েছিলেন সে কারণে মন্তব্যটি করা হয়েছে।
প্রশ্ন . . “...মরা হাতি সোয়া লাখ।”—‘নানা রঙের দিন’ নাটকে কোন্ প্রসঙ্গে কথাটি এসেছে?
উত্তর: অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি নিজেই মন্তব্যটি করেছেন।
প্রশ্ন . “কে-ই বা এই বুড়ো মাতালটার খোঁজ করে”-বুড়ো মাতালটি কে?
উত্তর: অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন' নাটকে ‘বুড়ো মাতাল’টি হলেন বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়।
প্রশ্ন . . 'নানা রঙের দিন' নাটকে ‘অভিনেতা’ সম্বন্ধে রজনীকান্তের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দাও |
উত্তর: ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে নিজে অভিনেতা হয়েও রজনীকান্তের মনে হয়েছিল মানুষের মনোরঞ্জনকারী একজন অভিনেতা হলেন চাকর, জোকার কিংবা ক্লাউনের-ই নামান্তর।
প্রশ্ন . “সেই দিন বুঝলুম পাবলিকের আসল চরিত্রটা কী।”—কোন্দিনের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: অভিনয় ছাড়তে না পারার জন্য প্রেমিকা জীবন থেকে সরে যাওয়ার দিনে রাতের বেলা একটা বাজে হাসির বইয়ে অভিনয়ের দিনের কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন . “...এসব বাজে কথায় আমি বিশ্বাস করি না।”—বক্তা কোন্বি ষয়গুলিকে ‘বাজে কথা’ বলেছেন?
উত্তর: দর্শকদের ফাঁকা হাততালি, খবরের কাগজের প্রশংসা, মেডেল, সার্টিফিকেট, ‘নাট্যাভিনয় একটি পবিত্র শিল্প’-র মতো প্রশস্তিবাক্য—এগুলিকে অভিনেতা রজনীকান্ত ‘বাজে কথা’ বলেছেন।
প্রশ্ন . “...আমি, কাউকে বিশ্বাস করি না।”—বক্তা কাদের বিশ্বাস না করার কথা বলেছেন?
উত্তর: বক্তা অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় ‘পাবলিক' অর্থাৎ থিয়েটারের টিকিট কেনা দর্শকদের বিশ্বাস না করার কথা বলেছেন।
প্রশ্ন . ৮. ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় ‘সাজাহান’ নাটকের কোন্ দৃশ্যের উল্লেখ করেছেন ?
উত্তর: ‘নানা রঙের দিন' নাটকে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় ‘সাজাহান’ নাটকে ঔরঙ্গজেব আর মহম্মদের দৃশ্যের কথা উল্লেখ করেছেন।
প্রশ্ন . “আমি কিন্তু প্রধান আশঙ্কা করছি এই মহম্মদকে।”—বক্তা মহম্মদকে নিয়ে ভীত ছিলেন কেন?
উত্তর: বক্তা ঔরঙ্গজেবের প্রতি একটা অবিশ্বাসের বীজ পুত্র মহম্মদের মনে বাসা বাঁধতে দেখেছিলেন বলেই মহম্মদকে নিয়ে তিনি ভীত ছিলেন।
প্রশ্ন . “কাম অন, কুইক! মহম্মদের ক্যাচটা দাও তো”—মহম্মদ কে? কে মহম্মদের ক্যাচ দিয়েছিলেন?
উত্তর : ঐতিহাসিক চরিত্র মহম্মদ ছিলেন ঔরঙ্গজেবের পুত্র। মহম্মদের ক্যাচ দিয়েছিলেন প্রম্পটার কালীনাথ সেন।
প্রশ্ন . “খুব খারাপ হচ্ছে না, কী বলো?”—কী খারাপ হচ্ছে না?
উত্তর: ‘নানা রঙের দিন' নাটকের প্রধান চরিত্র রজনীকান্ত তাঁর নিজের অভিনয় সম্পর্কে বলেছেন যে তা খারাপ হচ্ছে না।
প্রশ্ন . “এর নাম যদি রাজনীতি হয়, তাহলে সে রাজনীতি আমার জন্য নয়।”—কোন্ কোন্ বিষয়কে বক্তা রাজনীতি বলেছিলেন?
উত্তর: সরল ভাইকে ছলনায় বন্দি করা, স্নেহশীল পিতাকে সিংহাসনচ্যুত করা এবং ধর্মের নাম নিয়ে সিংহাসন দখল করা—এই তিনটি বিষয়কে বক্তা মহম্মদ রাজনীতি বলেছিলেন।
প্রশ্ন . “এই তো জীবনের নিয়ম! আরে তুমি কাঁদছ কালীনাথ”—নিয়মটি কী?
উত্তর: শিল্পকে যে মানুষ ভালোবেসেছে তার বয়স বাড়লেও বার্ধক্য নেই— এই নিয়মের কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন . “তোমার চোখে জল, কেন বল তো?”—শ্রোতার চোখে জল আসার কারণ কী?
উত্তর: বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের হারানোর আক্ষেপ, পুরোনো দিনকে অভিনয়ের মাধ্যমে মনে করার প্রাণপণ চেষ্টা কালীনাথ সেনের চোখে জল এনেছে।
প্রশ্ন . “শিল্পকে যে-মানুষ ভালোবেসেছে...”-শিল্পকে ভালোবাসার ফল কী হয়েছে?
উত্তর: ‘নানা রঙের দিনগুলি’ নাটকে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, শিল্পকে যে মানুষ ভালোবেসেছে তার বার্ধক্য নেই, একাকিত্ব নেই, অসুখ নেই, এমনকি মৃত্যুভয়ও নেই |
vপ্রশ্ন . “Life's but a walking shadow”—কোন্ নাটকের সংলাপ?
উত্তর: “Life's but a walking shadow” সংলাপটি ম্যাকবেথ নাটকের।
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা নানা রঙের দিন ৫ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর.
প্রশ্ন ১ ‘নানা রঙের দিন' নাটকের মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, “রজনীকান্তের চরিত্রের মধ্যে একজন অভিনেতার চিরকালীন যন্ত্রণাই প্রকাশিত হয়েছে।” —আলোচনা করো।
উত্তর আন্তন চেখভের সোয়ান সং অবলম্বনে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা
‘নানা রঙের দিন’ নাটকটিতে স্মৃতির পথ ধরে একজন অভিনেতার নিজেকে খোঁজার পটভূমিতে রয়েছে তাঁর বর্তমানের অসহায়তা এবং গ্লানি | এই গ্লানির একদিকে যেমন রয়েছে তাঁর ব্যক্তিজীবনের নিঃসঙ্গতা, অন্যদিকে রয়েছে অভিনয় জীবনের অপ্রাপ্তির হতাশা | পরিবারের কেউ না থাকায় একাকিত্বের কারণে তাঁর মনে জন্ম নেয় তীব্র অবসাদ। বারবার ফিরে আসে অভিনয়ের কারণে যৌবনের প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার দুঃসহ স্মৃতি। একসময়ের প্রধান চরিত্রাভিনেতা আজ দিলদারের মতো নিতান্তই গৌণ চরিত্রে অভিনয়
করেন এবং “তাও আর বছর কয়েক পরে মানাবে না”—এই হতাশাই হয়তো অভিনেতা রজনীকান্তকে নেশার প্রতি আসক্ত করে তোলে | আর এই নেশার ঘোর থেকে মুক্তি পেতেই স্মৃতির পথ ধরে হাঁটেন তিনি। তখন ‘রিজিয়া’ নাটকে বক্তিয়ারের চরিত্রে কিংবা, ‘সাজাহান’ নাটকে ঔরঙ্গজেবের চরিত্রে অভিনয়ের স্মৃতি তাঁকে সেই শূন্য প্রেক্ষাগৃহের অন্ধকারপ্রায় মঞ্চে সাময়িকভাবে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। পরমুহূর্তেই বর্তমানের শূন্যতা ঘিরে ধরে তাঁকে। তাঁর মনে হয় মঞ্চ থেকে নেমে এলে অভিনেতার আর কোনো সামাজিক স্বীকৃতিই থাকে না। এভাবেই নানা রঙের দিন’ নাটকে একজন অভিনেতার জীবনের রূপ ও রূপান্তরের ছবিকে সার্থকভাবে তুলে ধরেছেন নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন ‘নানা রঙের দিন’ একাঙ্ক নাটক হিসেবে কতখানি সার্থক [উচ্চমাধ্যমিক, ২০১৭] আলোচনা করো।
উত্তর মাত্র একটি অঙ্ক বা সর্গ বা পরিচ্ছেদে সমাপ্ত, দ্রুতসংঘটিত নাটকই হল একাঙ্ক নাটক | এটি এমন এক ধরনের নাটক যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল একমুখিতা । অবশ্য আদর্শ নাটকের সমস্ত লক্ষণ একাঙ্ক নাটকেও উপস্থিত থাকে। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকটি হল প্রবীণ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের ফেলে আসা অভিনয়জীবনের স্মৃতিরোমন্থন। মঞ্চে দেখা যায়, দিলদারের পোশাক পরে মধ্যরাতের শূন্য প্রেক্ষাগৃহে এই মানুষটি নেশার ঘোরে রয়েছেন। তিনি আসলে রয়েছেন স্মৃতির ঘোরে। পঁয়তাল্লিশ বছরের অভিনয়জীবনের স্বর্ণযুগ পেরিয়ে এসেছেন সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ এই সু-অভিনেতা। অভিনয়ের জন্য সব কিছু ত্যাগ করা এই মানুষটি হতাশাদীর্ণ হয়ে বলেছেন, “অভিনেতা মানে একটা চাকর, একটা জোকার, একটা ক্লাউন।” তাঁর মনে হয়েছে, “যারা বলে ‘নাট্যাভিনয় একটি পবিত্র শিল্প’—তারা সব গাধা-গাধা।” কিন্তু জীবনসায়াহ্নে উপনীত অভিনেতা সেই অভিনয়ের মধ্যেই আত্মতৃপ্তি এবং গর্বের উপাদান খোঁজেন | অতীতকে সম্বল করে, মঞ্চের রঙিন দিনগুলিকে আঁকড়ে ধরে এই নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ অনুভব করেন, “স্মৃতি সততই সুখের।” সুতরাং, এক এবং অভিন্ন বিষয় নিয়েই এই নাটকটি রচিত হয়েছে। আর নাটকের প্রাণ যে দ্বন্দ্ব, সেই নাট্যদ্বন্দ্বও এই নাটকটিতে উপস্থিত রয়েছে। অভিনেতা রজনীকান্তের অন্তর্দ্বন্দ্ব নাটকটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ‘ঘটনার ঘনঘটা’ এখানে অনুপস্থিত। মাত্র দুটি চরিত্রের (কালীনাথ ও রজনীকান্ত) সংলাপের মধ্য দিয়ে নাটকটি নির্মিত হয়েছে। রজনীকান্ত চরিত্রটির দীর্ঘ সংলাপ মাঝেমধ্যেই নাটকটির গতি রুদ্ধ করে দিলেও প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠক বা দর্শক টানটান অবস্থায় উপভোগ করতে পারেন। এর নাট্যরস | সুতরাং অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নানা রঙের দিন'-কে আমরা শিল্পসার্থক একাঙ্ক নাটক বলতেই পারি।
প্রশ্ন “...জীবনে ভোর নেই, সকাল নেই, দুপুর নেই, – সত্ত্বেও ফুরিয়েছে—এখন শুধু মাঝরাত্তিরের অপেক্ষা” – এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বক্তার যে মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে তা আলোচনা করো।৪
প্রশ্ন● উত্তর অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুবাদ-নাটক ‘নানা রঙের দিন’-এ প্রধান চরিত্র বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থিয়েটার শেষে ফাঁকা মঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে নিজের মুখোমুখি হয়েছেন। জীবনের আটষট্টিটা বছর পার করে যৌবনে অভিনয়ের সোনালি দিনগুলির কথাই তাঁর বারেবারে মনে পড়ে। জীবনের শ্রেষ্ঠতম মুহূর্তগুলিকে পেছনে ফেলে আসার যন্ত্রণা অভিনেতা রজনীকান্তকে কষ্ট দেয় | তিনি উপলব্ধি করেন যে, নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন তিনি। এভাবে জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে অভিনেতা রজনীকান্ত চূড়ান্ত হতাশার মুখোমুখি হয়েছেন। এই হতাশা শুধু তাঁর ব্যক্তিজীবনেরই নয়, অভিনয় জীবনেরও | অভিনেতা হিসেবে যখন অতীতই শুধু সম্বল, জীবনের সব স্বপ্নগুলো ক্রমশ মুছে যেতে চলেছে মৃত্যুর অন্ধকারে–নেশার ঝোঁকে সেই নির্মম বাস্তবেরই যেন মুখোমুখি হয়েছেন রজনীকান্ত | বৃদ্ধ বয়সে যখন সবাই নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করতে চান, নাম- সংকীর্তন আর ভগবানে আশ্রয় খোঁজেন, তখন রজনীকান্তের ভিতরে যে অস্থিরতা তা যেন শিল্পীসত্তার জীর্ণ হৃদয়ের যন্ত্রণা। ভালো কাজের ইচ্ছে থাকলেও সুযোগ আর বেশিদিন তাঁর কাছে নেই—সেই আক্ষেপ আর আশঙ্কাই রজনীকান্তকে হতাশ করে তুলেছে।
নানা রঙের দিন বড় প্রশ্ন উত্তর pdf,
প্রশ্ন . “আমি লাস্ট সিনে প্লে করব না ভাই...” –বক্তা কে? কোন্প্রn সঙ্গে বক্তা মন্তব্যটি করেছেন আলোচনা করো
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুবাদ-নাটক ‘নানা রঙের দিন'-এ বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় মধ্যরাতে ফাঁকা মঞ্চে মদ্যপান করে নিজেই নিজেকে উদ্দেশ করে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
★ নেশাগ্রস্ত রজনীকান্ত তাঁর বৃদ্ধাবস্থায় উপলব্ধি করেন যে, তাঁর আন্তরসত্তা যেন জেগে উঠেছে। সে তাঁকে শরীরের দিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিচ্ছে। অন্যদিকে, বাইরের মানুষটা অর্থাৎ তাঁর বাহ্যিক সত্তা অনুভব করে যে, প্রতিদিন অর্ধেক শিশি কলপ লাগিয়ে বয়সকে হয়তো কিছুটা আড়াল করা যায়, কিন্তু সময়ের সঙ্গে যা চলে যায় তা আর কখনও ফেরে না। এইভাবে রজনীকান্তের দুটি সত্তার অন্তর্দ্বন্দ্বের মধ্যে তিনি দেখতে পান বয়সের সঙ্গে মৃত্যুর দিকে তাঁর স্পষ্ট এগিয়ে চলা—“...জীবনে ভোর নেই, সকাল নেই, দুপুর নেই, —সন্ধেও ফুরিয়েছে—এখন শুধু মাঝরাত্তিরের অপেক্ষা...” | অথচ মৃত্যুর প্রান্তে দাঁড়িয়েও তাঁর ভিতরের শিল্পীসত্তা মরতে চায় না। তাই জীবনের শেষ দৃশ্যের অভিনয়ে তিনি রাজি নন। অথচ বাইরের মানুষটা বুঝতে পারে যে, জীবনের অন্তিম পর্যায়ে শ্মশানঘাটের দৃশ্যের অভিনয়ে থাকবে পরিচিত বন্ধুবান্ধবেরা আর উইংসে উপস্থিত হবে পরপারের দূত। নিয়তির অব্যর্থ বিধান তাই না চাইলেও জীবনের শেষ দৃশ্যে অভিনয় করতেই হবে তাঁকে। মৃত্যুর নিশ্চিত হাতছানিতে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়েই অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
প্রশ্ন . “থিয়েটারের দেয়ালে দেয়ালে অঙ্গারের গভীর কালো অক্ষরে লেখা, আমার জীবনের পঁয়তাল্লিশটা বছর...” – এই জীবনের যে কাহিনি বক্তা উল্লেখ করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকটি মূলত কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রবীণ
অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতির পথ বেয়ে জীবনকে উপলব্ধির প্রয়াস | গভীর রাতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁর এই আত্মপোলব্ধির দোসর হয়েছেন প্রম্পটার কালীনাথ সেন | কালীনাথের সঙ্গে রজনীকান্তের দীর্ঘ সংলাপে উঠে এসেছে তাঁর ফেলে আসা জীবনের গল্প | যৌবনের রূপ, আদর্শ, প্রভাব-প্রতিপত্তি, প্রেম, নারী—সবই যেন ফ্ল্যাশব্যাকের মতো ভেসে উঠেছে তাঁর চোখে। যৌবনে পুলিশ ইনস্পেকটরের চাকরি ছেড়ে নাটকের জগতে এসেছিলেন তিনি | তবে নাটকে এসে তাঁর নামডাক হয়েছিল যথেষ্টই | নাটকের সূত্রেই প্রেম এসেছিল তাঁর জীবনে। ধনী পরিবারের সুন্দরী মেয়ে তাঁর প্রেমে পড়লেও তা পরিণতি পায়নি। প্রেমিকার দেওয়া থিয়েটার ছাড়ার প্রস্তাব মেনে নিতে পারেননি রজনীকান্ত | থিয়েটার আর সম্পর্কের দ্বন্দ্বে সেদিন থিয়েটারকেই বেছে নিয়েছিলেন রজনীবাবু। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন অভিনেতা জীবনের অর্থহীনতা। অভিনেতার যা কিছু মূল্য তা শুধুমাত্র মঞ্চেই, সমাজজীবনে তাঁর কোনো গুরুত্বই নেই। তাঁর ব্যক্তিগত ও অভিনয় জীবনের নিঃসঙ্গতা আর হতাশাই থিয়েটারের দেয়ালে কালো অক্ষরে লেখা আছে বলে মনে করেন রজনীকান্তবাবু।
প্রশ্ন . “সেই রাত্রেই জীবনে প্রথম মোক্ষম বুঝলুম যে, যারা বলে ‘নাট্যাভিনয় একটি পবিত্র শিল্প’ –—তারা সব গাধা- গাধা।”— বক্তা কখন এবং কেন এরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন নিজের ভাষায় আলোচনা করো। ৩+২
উত্তর অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন' নাটকে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় জীবনের শুরুতে তাঁর অভিনয় দেখে একটি মেয়ের মধ্যে মুগ্ধতার সৃষ্টি হয়। প্রম্পটার কালীনাথ সেনের সঙ্গে অনেকটা স্বগতোক্তির ভঙ্গিতে কথা বলতে বলতে রজনীকান্তবাবুর মনে পড়ে যায় নিজের যৌবনের সেইসব কথা | নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তিনি কালীনাথবাবুকে বলেন যে, ধীরে ধীরে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হলে তিনি তাঁর প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মেয়েটির শর্ত ছিল, শুধুমাত্র থিয়েটার ছাড়লেই তার পক্ষে রজনীকান্তবাবুকে বিয়ে করা সম্ভব। মুহূর্তের মধ্যে তাঁর মনে এতদিনের অভিনয়ের মাধ্যমে অর্জন করা গর্ব, খ্যাতি, মোহ আর অহংকারের প্রাচীর যেন ভেঙে পড়ে। সেসময় প্রেমের সম্পর্কের পরিবর্তে তিনি অভিনয়কেই বেছে নেন।
● সেই সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার রাতে একটি হালকা হাসির নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে রজনীকান্তবাবু অভিনেতার জীবনের সারসত্যটি উপলব্ধি করেন। তাঁর মনে হয় অভিনয়কে যাঁরা পবিত্র শিল্প বলেন, তাঁরা হয় বোকা কিংবা মিথ্যা কথা বলেন। কারণ, অন্তরে সে-কথা তাঁরা বিশ্বাস করেন না। অভিনেতা শব্দটি জোকার, ক্লাউন কিংবা ভাঁড়েরই নামান্তর মাত্র, যার কোনো সামাজিক সম্মান বা স্বীকৃতি নেই |
৩ “অভিনেতা মানে একটা চাকর –একটা জোকার, একটা ক্লাউন । লোকেরা সারাদিন খেটেখুটে এলে তাদের আনন্দ দেওয়াই হল নাটক-ওয়ালাদের কর্তব্য” —বক্তার কথার তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় অভিনয় জীবনের শেষপ্রান্তে এসে অভিনেতার সামাজিক অবস্থান নিয়ে গভীর হতাশার শিকার হয়েছেন | একদিন পুলিশের চাকরি ছেড়ে অভিনয়কে সর্বস্ব করে নিয়েছিলেন তিনি। অনেক খ্যাতিও হয়েছিল তাঁর | কিন্তু এই খ্যাতি বা কদর সবই ততক্ষণের জন্য যতক্ষণ একজন অভিনেতা মঞ্চের উপরে থাকেন | সমাজ অভিনেতাকে আপন করে নেয় না। তাই যে অভিনয়সূত্রেই তাঁর জীবনে একমাত্র প্রেম সম্পর্কটি এসেছিল তা পরিণতি পায়নি | কারণ রজনীকান্তকে থিয়েটার ছেড়ে দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছিল | এখান থেকেই তাঁর উপলব্ধি হয় যে, যাঁরা বলেন “নাট্যাভিনয় একটি পবিত্র শিল্প”—তাঁরা মিথ্যে কথা বলেন। অভিনেতাদের একমাত্র কাজ সারাদিনের পরিশ্রান্ত মানুষদের আনন্দ দেওয়া। অর্থাৎ “একটা ভাঁড় কি মোসায়েবের যা কাজ তাই।” জনসাধারণ অভিনয়ের প্রশংসা করে হাততালি দেবে। কিন্তু স্টেজ থেকে নামলেই একজন অভিনেতার পরিচয় সে ‘থিয়েটারওয়ালা’, ‘নকলনবীশ’ | দর্শক অভিনেতার সঙ্গে আলাপে আগ্রহী হবে, হয়তো চা-সিগারেটও খাবে, কিন্তু সে-সবই বাইরের দুনিয়ায় এই পরিচয়সূত্রে নিজেকে জাহির করার জন্য। কোনো সামাজিক সম্মান অভিনেতার জন্য নেই | অভিনেতার সঙ্গে কোনো বৈবাহিক সম্পর্কও কেউ স্থাপন করবে না |নিজের জীবন থেকে এই উপলব্ধিই রজনীকান্তের হয়েছিল।
প্রশ্ন . “...আমার প্রতিভা এখনও মরেনি, শরীরে যদি রক্ত থাকে, তাহলে সে রক্তে মিশে আছে প্রতিভা।”—মন্তব্যটির প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।
উত্তর অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় তাঁর বয়সের ভারে হতাশার শিকার হয়েছেন। আর সে কারণেই স্মৃতির পথ ধরে তিনি ফিরে যেতে চেয়েছেন অতীতে তাঁর অভিনয়ের স্বর্ণযুগে। কখনও ‘সাজাহান’ নাটকে ঔরঙ্গজেবের চরিত্রে, কখনও ‘রিজিয়া’-র বক্তিয়ার চরিত্রে নিজের অভিনয়ের কথা মনে পড়েছে তাঁর। আর বৃদ্ধ বয়সে দর্শকশূন্য অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে মঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে সেইসব চরিত্রের সংলাপ উচ্চারণ করেছেন তিনি। এরকমভাবেই তাঁর মনে পড়েছে ‘সাজাহান’ নাটকের সেই দৃশ্যের কথা—যেখানে সবাইকে হত্যা করে ঔরঙ্গজেব সিংহাসন পেয়েছেন। মধ্যরাতে একা প্রবল আত্মদ্বন্দ্ব আর যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত ঔরঙ্গজেবের সংলাপ উঠে আসে রজনীকান্তের মুখে। আর সেই সংলাপ উচ্চারণ করেই তাঁর মনে হয়েছে বয়সকে হার মানিয়ে তাঁর অভিনয়ের প্রতিভা এখনও স্বমহিমায় আছে। প্রকৃত শিল্পসত্তা কখনওই চাপা পড়ে থাকে না বা বয়সের কাছে হার মানে না—অভিনেতা রজনীকান্তের এই বক্তব্য যথার্থতা পেয়েছে। অতীতে প্রতিভার চরম বিকাশে তিনি নাট্যমঞ্চে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। রক্তে মিশে থাকা অভিনয় প্রতিভার জন্যই পুলিশের চাকরি রজনীকান্তের ভালো লাগেনি। নিজের শিল্পীসত্তার টানেই তিনি থিয়েটারে যোগ দেন। আর তাঁর এই প্রতিভা বৃদ্ধ বয়সেও একইরকম আছে বলেই মনে করেন রজনীকান্তবাবু।
প্রশ্ন ২ “শিল্পকে যে-মানুষ ভালবেসেছে—তার বার্ধক্য নেই.." —মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখো।
• উত্তর অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুবাদ-নাটক ‘নানা রঙের দিন’-এ দেখা যায়, বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় আটষট্টি বছর বয়সে এসে তাঁর অভিনয় জীবনের স্বর্ণযুগকে স্মরণ করে জীবনের উত্তাপ খুঁজেছেন | বয়সের কারণে বর্তমানে ‘দিলদার’-এর মতো গৌণ চরিত্র ছাড়া তাঁর অভিনয়েরসুযোগ মেলে না | কিন্তু তাঁর মনে এখনও উজ্জ্বল ঔরঙ্গজেব, সুজা, বক্তিয়ারইত্যাদি চরিত্রে তাঁর অভিনয়ের স্মৃতি | শূন্য প্রেক্ষাগৃহে মঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে প্রম্পটার কালীনাথকে সামনে রেখে এইসব চরিত্রের সংলাপ বলতে থাকেন তিনি। এর মাধ্যমেই যেন তিনি খুঁজে পান প্রতিভার পুরোনো বিচ্ছুরণ— “প্রতিভা যার আছে, বয়েসে তার কী আসে যায়!” এই নাট্যশিল্পকেই ভালোবাসতে গিয়ে একদিন তাঁর সংসার করা হয়নি, ভালোবাসার মানুষ দূরে সরে গিয়েছে, জীবনের শেষপর্বে এসেও নিঃসঙ্গ সেই মানুষটি অভিনয়কে আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চেয়েছেন। মঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে জীবনের শেষ যুদ্ধযাত্রার আগে পিয়ারাবানুকে বলা সুজার সংলাপ উচ্চারণ করেছেন তিনি | আবেগবিহ্বল রজনীকান্ত বয়সকে মেনে নিয়েও শিল্পকেই চূড়ান্ত সত্য বলে ঘোষণা করেছেন—যার কাছে বার্ধক্য নেই, একাকিত্ব নেই, রোগ নেই, এমনকি মৃত্যুভয়কেও যা তুচ্ছ করতে পারে। এভাবেই শিল্পের কাছে দায়বদ্ধ একজন অভিনেতা হিসেবে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন।
বাংলা নানা রঙের দিন বড় প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন . অথবা, শিল্পকে যে-মানুষ ভালোবেসেছে—তার বার্ধক্য নেই কালীনাথ, একাকীত্ব নেই”—বলতে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় কী বুঝিয়েছেন আলোচনা করো।
প্রশ্ন . “আমাদের দিন ফুরিয়েছে!”—কে, কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? বক্তার এই উপলব্ধির কারণ ব্যাখ্যা করো।
● উত্তর অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুবাদ নাটক ‘নানা রঙের দিন’-এ প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটির বক্তা বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় | জীবনের-সায়াহ্নে পৌঁছে অভিনয় জীবনের খ্যাতি এবং অভিনয়ের দক্ষতা ক্রমশই বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে বলে উপলব্ধি করেন রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় | নায়ক চরিত্র থেকে তিনি এখন পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা মাত্র, এই নেতিবাচক অনুভূতি থেকে তাঁর মনে তীব্র হতাশা জন্ম নেয়। আর এই প্রসঙ্গেই প্রম্পটার কালীনাথ সেনকে উদ্দেশ্য করে তিনি মন্তব্যটি করেন।
● মধ্যরাতে শূন্য প্রেক্ষাগৃহে মঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে জেগে উঠেছে তাঁর অভিনয় জীবনের গৌরবোজ্জ্বল অতীত। অভিনয়ের জন্য একসময় জীবনের একমাত্র প্রেমের সম্পর্ককে ভেঙে দিয়েছিলেন যিনি, তাঁর কাছে অভিনয়ই ছিল বেঁচে থাকার অবলম্বন। অতীতের ওই দিনগুলিতে অনায়াস দক্ষতায় তিনি ফুটিয়ে তুলতেন ‘রিজিয়া’ নাটকে বক্তিয়ারের কিংবা ‘সাজাহান’ নাটকে ঔরঙ্গজেবের চরিত্র। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গলার কাজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতাও তাঁর নষ্ট হয়েছে—“...থিয়েটারের দেওয়ালে...লিখে দিয়ে গেল প্রাক্তন অভিনেতা রজনী চাটুজ্জের প্রতিভার অপমৃত্যুর করুণ সংবাদ”। পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ করতে করতে, বিভিন্ন চরিত্রের পুনরাভিনয়ের মাধ্যমে ‘জীবনের পাত্র শূন্যতায় রিক্ত' হয়ে যাওয়ার উপলব্ধি গ্রাস করে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়কে।
প্রশ্ন . ৩.২০ ‘নানা রঙের দিন' নাটক অবলম্বনে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : মদ্যশক্তি : নট ও নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ একাঙ্কটি চরিত্রকেন্দ্রিক নাটক। রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় নাটকের প্রধান চরিত্র। তিনি মদ্যপ। মদের নেশায় অভিনয় চলার মাঝেই দিলদারের মেকআপ করা পোশাকসহ গ্রিনরুমে ঘুমিয়েছিলেন। মদ্যাসক্তি অভিনয় জীবনের একটি অন্ধকার দিক। রজনী চরিত্র তার বাইরে নয়।
নেশাৱ ব্যাপারে সচেতন : রজনী কিন্তু তাঁর এই নেশার ব্যাপারে সচেতন। নেশা যে তাঁকে গ্রাস করেছে এ ব্যাপারে তিনি সজাগ। কিন্তু সন্ধ্যা হলেই মদের নেশা তাঁকে পেয়ে বসে। আর পাঁচটা মাতালের সমান, ব্যতিক্রম নন।
পরিণামের ব্যাপারে সচেতন : আটষট্টি বছরের রজনী জানেন অভিনয় জীবন থেকে অবসর নেওয়ার সময় তাঁর হয়েছে। নেশার ঘোরে তাঁর মনে হয় ‘এক-পা এক-পা করে এগিয়ে চলেছে মৃত্যুর দিকে' এই পরিণামের ব্যাপারে রজনী সচেতন।
থিয়েটার-অন্ত প্রাণ : রজনী থিয়েটার-অন্তপ্রাণ। থিয়েটার তাঁর ধ্যান-জ্ঞান-স্বপ্ন। থিয়েটার ছাড়তে না পারায় তাঁর সংসার করা হয় না।
পাবলিক সম্পর্কে অভিজ্ঞতা : থিয়েটার দেখা পাবলিক সম্পর্কে রজনীর অভিজ্ঞতা খুব তিক্ত। পাবলিকের কাছে অভিনেতা সামাজিক সম্মানটুকুও পায় না। থিয়েটার অভিনেতা তাদের কাছে অস্পৃশ্যতুল্য।
পরিণাম ভেবে বেদনার্ত : তাঁর উপলব্ধি হল সব প্রতিভারই একদিন-না-একদিন বিদায় ঘটে। রজনী তাঁর প্রতিভার সেই অন্তিম পরিণামের কথা ভেবে বেদনার্ত।
[TAG]: দ্বাদশ শ্রেণি নানা রঙের দিন, নানা রঙের দিন mcq,উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বড় প্রশ্ন উত্তর,দ্বাদশ শ্রেণি বাংলা প্রশ্ন উত্তর,দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা নানা রঙের দিন প্রশ্ন ,দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা নানা রঙের দিন ৫ নং প্রশ্ন উত্তর,বাংলা নানা রঙের দিন বড় প্রশ্ন উত্তর