কাস্ট ভূমিরূপের সংজ্ঞা। ভারতের কোথায় কোথায় কাস্ট ভূমিরূপ দেখা যায় ও গড়ে ওঠার আদর্শ অবস্থা বা প্রধান শর্ত

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

কাস্ট ভূমিরূপের সংজ্ঞা। ভারতের কোথায় কোথায় কাস্ট ভূমিরূপ দেখা যায় ও গড়ে ওঠার আদর্শ অবস্থা বা প্রধান শর্ত

কাস্ট ভূমিরূপের সংজ্ঞা : ভূমিরূপবিদ্যায়, কাস্ট বলতে ভূমিরূপ ও জলনির্গম প্রণালীর সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত এমন একটি বিশিষ্ট ভূখণ্ডকে বোঝায় যা প্রকৃতপক্ষে শিলার উচ্চ দ্রাব্যতার কারণে প্রাকৃতিক জলপ্রবাহের দ্বারা সৃষ্টি হয়। যেসব ভূ-পৃষ্ঠীয় ভূখণ্ড জলের উচ্চ মাত্রায় দ্রবণ ক্রিয়ার দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠ ও উপপৃষ্ঠীয় শিলা অতিমাত্রায় দ্রবীভূত হয়, শিলার অতিমাত্রায় রাসায়নিক ধর্ম ও ভৌতধর্মের পরিবর্তন ঘটে এবং সেই সঙ্গে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভূমিরূপ ও জলনির্গম প্রণালী গঠিত হয় সেই সব ভূপৃষ্ঠীয় ভূখণ্ডে গঠিত ভূমিরূপ সমূহকে কাস্ট ভূমিরূপ বলে।

সুতরাং কার্স্ট ভূমিরূপ হল ভৌমজলপ্রবাহের দ্রবণ কাজের ফলে সৃষ্টি চুনাপাথর ডলোমাইট প্রভৃতি শিলা গঠিত ভূমিভাগের ওপর এক শুষ্ক ভূদৃশ্য [Dry landscape]। ভূ-তাত্ত্বিক জে. এন. জেনিংস-এর [J. N. Jennings] মতে, “Karst is a terrain with distinctive characteristics of relief and drainage arising primarily from a higher degree of rock solubility it natural water than is found else where."

কাস্ট ভূমিরূপের সংজ্ঞা। ভারতের কোথায় কোথায় কাস্ট ভূমিরূপ দেখা যায়  ও গড়ে ওঠার আদর্শ অবস্থা বা প্রধান শর্ত
কাস্ট ভূমিরূপ

ভারতের কোথায় কোথায় কাস্ট ভূমিরূপ দেখা যায় ?

ভারতে আদর্শ কার্স্ট ভূমিরূপ তেমন গড়ে ওঠেনি। ভারতের কেবলমাত্র কয়েকটি জায়গায় বিন্ধ্যযুগে গঠিত চুনাপাথরের স্তরে [যার অধিকাংশই পুরু বালুকা ও শেল (শেল হল জমাটবদ্ধ পুরু কাদা বা মাটি) স্তর দ্বারা গঠিত] কার্স্ট ভূমিরূপ গড়ে উঠতে দেখা যায়। ভারতের যেসব অঞ্চলে এই প্রকার কার্স্ট ভূমিরূপ দেখা যায় সেগুলি হল – 

(i) ছত্তিশগড় রাজ্যের দ্রুগ ও রায়পুর জেলার ছারমুরিয়া ফ্লাগি অঞ্চল, বস্তার, বিলাসপুর, রাজনন্দনগাঁও, জগদ্দলপুর জেলার কোনো কোনো অংশে  ; 

(ii) মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারি অঞ্চল ; 

(iii) উত্তরাঞ্চল রাজ্যের দেরাদুনের তপকেশ্বর ; 

(iv) বিহারের সাসারাম অঞ্চল ; 

(v) গুজরাটের পোরবন্দর ; 

(vi) মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি অঞ্চল ; 

(vii) অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম জেলার বোরাগুহালু ;

(viii) পশ্চিমবঙ্গের জয়ন্তী অঞ্চল প্রভৃতি।


কার্স্ট ভূমিরূপ গড়ে ওঠার আদর্শ অবস্থা বা গঠনের উপযুক্ত অবস্থা বা প্রধান শর্ত [Ideal conditions for the development of Karst landform]

কাস্ট ভূমিরূপ গঠনের প্রধান শর্ত বা অনুকূল পরিবেশগুলি হল—


সর্বপ্রথম শর্ত: 1935 সালে ভূমিরূপবিজ্ঞানী ডিকেন [Dicken, 1935] মনে করেন, কার্স্ট ভূমিরূপ গঠনের প্রধান এবং সর্বপ্রথম শর্ত হল ভূ-ত্বকে পরিশুদ্ধ CaCO3

দ্বিতীয়ত : প্রবেশ্য শিলার প্রাধান্য : অঞ্চলটিতে প্রবেশ্য শিলার প্রাধান্য থাকা প্রয়োজন।

তৃতীয়ত : উপত্যকার উপস্থিতি : ভূমিরূপবিজ্ঞানী থর্নবারি-এর [Thornbury, 1969] মতে, অঞ্চলটিতে উপত্যকার প্রাধান্য থাকা প্রয়োজন।

চতুর্থত : জৈব উপাদান : ভূমিরূপবিদ্যা বিজ্ঞানী ম্যাক গ্রেওর এবং র‍্যারিক Mc Greor & Raric (1962) এর মতে, অঞ্চলটিতে অত্যধিক দ্রবীভূত হওয়ার জন্য প্রচুর জৈব উপাদান থাকা প্রয়োজন।

পঞ্চমত: ভৌমজলের প্রবহমানতা : কার্স্ট ভূমিরূপের পূর্ণ বিকাশের জন্য ভৌমজলের প্রবহমানতা থাকা প্রয়োজন । কারণ ভৌমজল ভূগর্ভের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত না হলে চুনাপাথরের ক্ষয় সম্পন্ন হয় না। ফলে কার্স্ট ভূমিরূপের পূর্ণ বিকাশ হয় না।

ষষ্ঠত : শিলার গভীরতা : কার্স্ট ভূমিরূপের পূর্ণ বিকাশের জন্য বিশুদ্ধ চুনাপাথর ঘন দারণ সমৃদ্ধ ও যথেষ্ট গভীরতা সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। চুনাপাথরের স্তরের গভীরতা 4,000 মিটারের বেশি, জামাইকায় 700 মিটারের বেশি এবং ইয়র্কশায়ারে মাত্র 200 মিটার পুরু।

জলের প্রাপ্যতা : চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে কার্স্ট ভূমিরূপ বিকাশের জন্য মধ্যম পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়া প্রয়োজন বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 30 সেমির কম হলে দ্রবণ প্রক্রিয়া কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে না।

সমুদ্রতল থেকে দ্রাব্য শিলাস্তরের উচ্চতা : দ্রাব্য শিলাস্তরের ঘনত্ব বা পুরুত্ব যথেষ্ট উঁচুতে অবস্থান না

করলে সেই শিলাস্তরে ভৌমজলের প্রবহমানতা বিশেষ ঘটে না। কারণ জলপ্রবাহের স্থায়ী নিম্নসীমা হল সমুদ্রপৃষ্ঠ। ভৌমজল চুনাপাথরের মধ্য দিয়ে সহজভাবে প্রবাহিত হতে না পারলে কার্স্ট ভূমিরূপ গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয়।

অঞ্চলের বিশালতা : ভূ-পৃষ্ঠের তলাদেশে চুনাপাথর সমৃদ্ধ অঞ্চলের আয়তন বিশাল হওয়া প্রয়োজন।

অন্যান্য অবস্থা : দ্রাব্য শিলাস্তরযুক্ত অঞ্চলটি ভাঁজপ্রাপ্ত, চ্যুতিমুক্ত ও ভঙ্গুর হওয়া প্রয়োজন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url