ইন-সিটু সংরক্ষণ - এক্স-সিটু সংরক্ষণ | সংজ্ঞা , সুবিধা , ইন-সিটু সংরক্ষণ ও এক্স-সিটু সংরক্ষণের পার্থক্য
ইন-সিটু সংরক্ষণ বা স্বস্থানে সংরক্ষণ [In-situ conservation] :
সংজ্ঞা : মূল প্রাকৃতিক বাসস্থানে অর্থাৎ নিজস্ব পরিবেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে বলা হয় ইন-সিটু সংরক্ষণ [In-situ conservation]।
উদাহরণ : সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ। এই বৃক্ষ সুন্দরবনের কর্দমাক্ত, লবণাক্ত ও সিক্ত পরিবেশে জন্মায়। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বা সুন্দরী গাছকে সুন্দরবনের এই বাস্তুতন্ত্রে সংরক্ষণ করাই হল ইন-সিটু সংরক্ষণ। অন্যভাবে বলা যায়, নিজস্ব বাসস্থানে রেখে জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করাকে ইন-সিটু সংরক্ষণ বলা হয়।
![]() |
ইন-সিটু সংরক্ষণ - এক্স-সিটু সংরক্ষণ |
ব্যবস্থা বা উদ্যোগ : স্বস্থানে সংরক্ষণ উদ্দেশ্যে জাতীয় উদ্যান [National Parks] ও অভয়ারণ্য [Sanctuaries] গড়ে তোলা হয়। বিশ্ব সংরক্ষণ তদারকি কেন্দ্র বা World Conservation Monitoring Centre সমগ্র বিশ্বে প্রাকৃতিক পরিবেশে 37,000 আরক্ষিত অঞ্চল [Protected Areas] চিহ্নিত করেছে [IUCN Report dt. 3-04-2006]। ভারতে 531টি আরক্ষিত অঞ্চল রয়েছে। ৪৭টি জাতীয় উদ্যান (NationalPark) এবং 429টি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র [Wild life Sanctuaries] যা ভারতের 4.7% অঞ্চল অধিকার করে আছে। পৃথিবী জুড়ে 408টি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ বা জীবভাণ্ডার অঞ্চল [মে, 2005 পর্যন্ত] 94টি দেশে ছড়িয়ে আছে। ভারতে প্রকার বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের সংখ্যা 13টি। বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভগুলি তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত –কেন্দ্র (Core), ধারণ ক্ষমতা [Buffer Zone] এবং পরিবর্তনশীল অঞ্চল [Transition Zone]।
ইন-সিটু সংরক্ষণের বিভিন্ন উপায় [Different ways of In-situ conservation]] :
(i) জলজ কিংবা স্থলজ প্রাকৃতিক পরিবেশে জীব সংরক্ষণ করা হয়। (ii) প্রাকৃতিক পরিবেশে কোনোপ্রকার প্রবেশাধিকার না রেখে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে জীবসংরক্ষণ করা যায়। (iii) বিশেষ জীবগোষ্ঠী জাতীয় পার্কে সংরক্ষিত হয়। (iv) বিশেষ কোনো প্রাণীকে গুরুত্ব দিয়ে অভয়ারণ্যতে সংরক্ষিত করা হয়।
ইন-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা [Advantage of In-situ conservation] :
(i) কোনো প্রজাতি সংরক্ষণের সহজ উপায় হল তারা যে বাসস্থানে জন্মায় সেই বাসস্থান যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা। এর ফলে এই প্রজাতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বহু প্রজাতিকুল সংরক্ষিত হয়।
(ii) একটি প্রজাতিকেবলমাত্র একটি বাস্তুতন্ত্রের অংশই নয়, এটি পাশ্ববর্তী অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং বহু প্রজাতিকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
(iii) কোনো প্রজাতির নিজস্ব পরিবেশে রেখে সংরক্ষণ করলে ওই বাস্তুতন্ত্রের বিবর্তনীয় প্রক্রিয়াগুলি সচল থাকে এবং বাঁচার জন্য প্রতিযোগিতা করারক্ষমতা অর্জন করে।
(iv) যেসব দেশে এখনো জীববৈচিত্র্য ভালোভাবে তালিকাভূক্ত হয়নি বা বিশদভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি, সেই দেশে ইন-সিটু সংরক্ষণ দরকার।
(v) যেসব অঞ্চলে এখনও অনেক প্রজাতি অনাবিস্কৃত রয়েছে সেইসব অঞ্চলে ইন-সিটুসংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি,
(vi) রিক্যালসিট্রান্ট (Recalcitrant) বীজ অর্থাৎ যেসব বীজ শুকিয়ে সীড ব্যাংকে রাখলে অঙ্কুরিত হয় না তাদের ক্ষেত্রে ইন-সিটু সংরক্ষণ পদ্ধতি বিশেষ উপযোগী।
অন্য স্থানে সংরক্ষণ বা এক্স-সিটু সংরক্ষণ [Ex-situ Conservation]:
সংজ্ঞা : জীববৈচিত্র্যকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের বাইরে সংরক্ষণ করাকে এক্স-সিটু সংরক্ষণ বলে।
উদাহরণ : সুন্দরবনের সুন্দরী গাছকে হাওড়ার বোটানিক্যাল গার্ডেনে বাঁচিয়ে রাখাই হল এক্স-সিটু সংরক্ষণ। আবার একইভাবে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে আলিপুর চিড়িয়াখানায় বাঁচিয়ে রাখাও হল এক্স-সিটু সংরক্ষণ।
এক্স-সিটু সংরক্ষণের বিভিন্ন উপায় [Different ways of Ex situ conservation] :
(i) জীন ও সীড ব্যাংক হল উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণের সহজ উপায়। কারণ সীড ব্যাংকে অল্প খরচে বহু জীব প্রজাতিকে সংরক্ষিত করে রাখা যায়। (ii) প্রাণীর ডিম্বাণু ও স্পার্ম প্রভৃতি জার্মপ্লাজম ব্যাংকে সংরক্ষণ করা সম্ভব। (iii) উদ্ভিদের পরাগরেণু নিম্ন তাপমাত্রায় দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে পরে জীবন্ত উদ্ভিদের সঙ্গে ক্রসিং-এ ব্যবহার করা সম্ভব। (iv) উদ্ভিদ ও প্রাণীর DNA ও সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু এখনো সংরক্ষিত DNA থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টির উপায় উদ্ভাবন করা যায়নি। এনিয়ে গবেষণা বিভিন্ন দেশে চলছে।
(v) পরাগ, বীজ, গাছের অংশকে প্রায় 190° সেঃ তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেনে সংরক্ষণ করা যায়। একে ক্রায়ো সংরক্ষণ (Cryopreservation) বলে। এক্স-সিটু সংরক্ষণে কোন কোন প্রজাতি সংরক্ষণের দাবিদার : (i) দুর্লভ এবং সংকটাপন্ন প্রজাতি ৷ (ii) অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির নিকট সম্পর্কযুক্ত প্রজাতি। (iii) কীস্টোন (Key stone) প্রজাতি (যে প্রজাতি বিলুপ্ত হলে অন্য প্রজাতিও বিলুপ্ত হয়। উদাহরণ সুন্দরবনের বাঘ)।