তেলেনাপােতা আবিষ্কার|একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্পর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর|Talenapota abiskar

তেলেনাপােতা আবিষ্কার একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্পর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর |একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প তেলেনাপােতা আবিষ্কার প্রশ্ন উত্তর PDF |Class 11 Bengali golpo question in bengali  pdf

তেলেনাপােতা আবিষ্কার|একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্পর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর|Talenapota abiskarতেলেনাপােতা আবিষ্কার প্রশ্ন উত্তর PDF|



আজ আমি তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প তেলেনাপােতা আবিষ্কার প্রশ্ন উত্তর PDFclass 11 Bengali golpo question Pdf |WB Class nine Bengali question pdf |WBBSE পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য একাদশ শ্রেণি বাংলা গল্পর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf গুরুত্বপূর্ণ ভাবে তোমাকে সাহায্য করবে।


তাই দেড়ি না করে এই পোস্টের নীচে দেওয়া Download লিংকে ক্লিক করে |একাদশ শ্রেণি বাংলা গল্প তেলেনাপােতা আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf download । Class xi Bengali golpo Question Pdf  ডাউনলোড করো । এবং প্রতিদিন বাড়িতে বসে প্রাক্টিস করে থাকতে থাক।ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ণ Note ,Pdf ,Current Affairs,ও প্রতিদিন মকটেস্ট দিতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।


‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার’ একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হলো।

তেলেনাপােতা আবিষ্কার mcq প্রশ্ন

1.



একাদশ শ্রেণি বাংলা গল্প 1 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর [একটি বাক্যে উত্তর দাও],একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প তেলেনাপােতা আবিষ্কার 1 নং প্রশ্ন উত্তর

১। আপনাদের কোথায় থাকার জায়গা হবে?

উত্তর আপনাদের থাকার জায়গা হবে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বাসযোগ্য একটি ঘরে।

২। তেলেনাপোতায় যেতে গেলে কোথায় উঠতে হবে?

উত্তর তেলেনাপোতায় যেতে গেলে উঠতে হবে জিনিসে মানুষে ঠাসাঠাসি বাসে।

৩। তেলেনাপোতার অবস্থান কোথায় ছিল?

উত্তর তেলেনাপোতার অবস্থান ছিল মহানগরী থেকে তিরিশ মাইল দূরে।

৪। রুষ্ট আত্মার অভিশাপে আপনাদের উপর কী বর্ষিত হবে?

উত্তর রুষ্ট আত্মার অভিশাপে আপনাদের উপর জীর্ণপলেস্তারা বর্ষিত হবে।

৫। আপনার বন্ধু দুটি কেমন?

উত্তর একজন পানরসিক ও অপরজন নিদ্রাবিলাসী।

৬। তেলেনাপোতার পুকুরঘাটে মেয়েটি কী করছিল?

উত্তর তেলেনাপোতার পুকুরঘাটে মেয়েটি ঝকঝকে ঘড়ায জল ভরছিল।

ID ৭। গরম থেকে অব্যাহতি পাবার জন্য টর্চ নিয়ে তিনি কী করবেন?

উত্তর গরম থেকে অব্যাহতি পাবার জন্য টর্চ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে তিনি ছাদে উঠবার চেষ্টা করবেন।

৮। মৎস্য আরাধনার জন্য আপনি কোথায় যাবেন?

উত্তর মৎস্য আরাধনার জন্য শ্যাওলাঢাকা ভাঙা ঘাটের একটি ধারে যাবেন।

৯। নিরঞ্জন যামিনীর মাকে কী বলেছিল?

উত্তর নিরঞ্জন যামিনীর মাকে বলেছিল বিদেশের চাকরি থেকে ফিরে এসে যামিনীকে বিয়ে করবে।

১০। গল্পকথকদের নামিয়ে দেওয়ার পর বাসটি কীভাবে চলে গিয়েছিল?

উত্তর গল্পকথকদের নামিয়ে দেওয়ার পর বাসটি সেতুর উপর দিয়ে বিচিত্র ঘর্ঘর শব্দে চলে গিয়েছিল।

১১। দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাটা কোথায় হয়েছিল?

উত্তর দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাটা যামিনীদের বাড়িতে হয়েছিল।

১২। বুড়ি এই অজগরপুরীতে কার আসার আশায় দিন গুনছে?

উত্তর নিরঞ্জনের আসার আশায় বুড়ি এই অজগরপুরীতে দিন গুনছে।

১৩। নিজের হৃৎস্পন্দনে কী কথাই বারবার ধ্বনিত হবে?

উত্তর নিজের হৃৎস্পন্দনে ‘ফিরে আসব’ কথাই বারবার ধ্বনিত হবে।

১৪। তেলেনাপোতায় আপনার কী পড়ে থাকবে?

উত্তর তেলেনাপোতায় আপনার মনটা পড়ে থাকবে।

১৫। তেলেনাপোতার স্মৃতি আপনার কেমনভাবে মনে থাকবে?

উত্তর তেলেনাপোতার স্মৃতি আপনার ঝাপসা একটি স্বপ্ন হয়ে থাকবে।


তেলেনাপােতা আবিষ্কার 5 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর,

তেলেনাপােতা আবিষ্কার বড় প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প 5 নং প্রশ্ন উত্তর


১। “মহানগরীর থেকে ত্রিশ মাইল দূরে ব্যাঘ্রসংকুল অস্তিত্ব কী এরকম স্থানের

সম্ভব.....” – প্রসঙ্গসহ মন্তব্যটির যৌক্তিকতা দেখাও।

উত্তর প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পে গল্পের নায়ক তার দুই বন্ধুসহ কলকাতা নগরী থেকে তেলেনাপোতা গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল ; তখনই এক বিচিত্র অভিজ্ঞতাসূত্রে এরূপ মন্তব্য করা হয়েছে। গল্পটি শুরু হয়েছে বিকেলবেলার পড়ন্ত রোদে এবং একটু একটু করে অন্ধকারময়তার দিকে এগিয়ে যাওয়া হয়েছে। যে জগতের দিকে এগিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখানে পরিবেশটাই প্রধান যেন, অথচ জায়গাটি শহর থেকে মাত্র তিরিশ মাইল দূরে। নায়ক সহ দুই বন্ধু কলকাতা থেকে বাসযোগে তেলেনাপোতা গ্রামের কাছাকাছি একটি জঙ্গলপূর্ণ এলাকায় সন্ধ্যার সময় নামেন। বাসটি তাঁদের নামিয়ে একটি সাঁকো পেরিয়ে চলে যায়। জঙ্গলময় জনমানবহীন দেশে ঘন অন্ধকারের মধ্যে কীভাবে তাঁরা যাবেন এই ভাবনায় যখন তাঁরা কোনো ফিরতি বাসে কলকাতা ফেরার কথা ভাবছেন, তখনই নালার পাশের জঙ্গল থেকে একটা গোরুর গাড়ি তীব্র আর্তনাদ করতে করতে বেরিয়ে আসে। সেই গোরুর গাড়িতে চেপে অন্ধকার কুয়াশাময় জগতের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে তাঁরা গাড়োয়ানের ক্যানেস্তারা বাজানোর শব্দে সচকিত হয়ে ওঠেন। ক্যানেস্তারা বাজানোর কারণ জিজ্ঞাসা করলে গাড়োয়ান জানায় চিতাবাঘ তাড়ানোর জন্য সে ক্যানেস্তারা বাজাচ্ছে। মহানগরী থেকে ত্রিশ মাইল দূরে চিতাবাঘের থাকার কথা শুনে তিন বন্ধুর মনে এরূপ ভাবনার উদয় হয়েছিল। কলকাতা থেকে এই দূরত্বের মধ্যে কোনো জায়গায় বাঘ থাকতে পারে—এটা ভাবা কলকাতাবাসীর পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু আমাদের দেশ এমনই বৈচিত্র্য ও বৈষম্যে ভরা। একদিকে নাগরিক সভ্যতা—আর কিছু দূরেই বেহাল-ভগ্নদশার গ্রাম্য জীবন। একদিকে স্বাচ্ছন্দ্য অন্যদিকে অস্বাচ্ছন্দ্য— বাংলাদেশের বাস্তবতার আর এক চিত্র।


২। 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার'—গল্প অবলম্বনে যামিনী চরিত্রটি আলোচনা করো।

উত্তর চরিত্র সৃষ্টিতে প্রেমেন্দ্র মিত্র অতুলনীয় বৈশিষ্ট্যের স্বাক্ষর রেখেছেন তাঁর ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের যামিনী চরিত্রটির ক্ষেত্রে। যামিনী চরিত্রটিকে গল্পে নানাভাবে ও নানারূপে উপস্থাপিত করা হয়েছে। গল্পের সূচনায় রহস্যময়তাকে একটু রোমান্টিক করে তোলা হয়েছে। নিঃসঙ্গ যামিনীর ছবি এসে সেই রহস্যময়তাকে এনে দিয়েছে একটু সৌন্দর্যের স্পর্শ—“গভীর নিশীথ রাত্রে কে যে এই বাতায়নবর্তিনী, কেন যে তার চোখে ঘুম নেই....।” পরক্ষণেই রোমান্টিকতাকে ভেঙে দিয়ে যামিনীকে নিয়ে আসা হয়েছে বাস্তবের রূঢ় মাটিতে। সকালের আলোয় দেখা যায়, মেয়েটি অপার্থিব কেউ নয়, অস্বচ্ছল সংসারের শ্রীহীন একটি মেয়ে, যার ক্ষীণ, দীর্ঘ, অপুষ্ট শরীর দেখলে মনে হবে —“কৈশোর অতিক্রম করে যৌবনে উত্তীর্ণ হওয়া তার যেন স্থগিত হয়ে আছে।.....” যামিনীর প্রথম আবির্ভাব শান্ত, সংযত কিন্তু আড়ষ্টতাহীন। মাছ ধরার সময় অন্যমনস্ক গল্পকথককে সে ছিপে টান দেওয়ার কথা বলে। গ্রামবাংলার পুরাতান্ত্রিক সমাজে বাহিনীর এই আচরণ ব্যতিক্রমী। ব্যক্তিত্ব থাকলেও যামিনীর রসবোধ আছে। অপরিচিত গল্পকথকের মাছ ধরার ব্যর্থতায় সে তার মণিদার কাছে এ নিয়ে রসিকতাও করেছে। অসীম দারিদ্র্য, অসুস্থ মায়ের জন্য চিন্তা এবং জীবনে এক গোপন আঘাত—যামিনীকে এরূপ কঠিন ও কঠোর করে তুলেছে। বৃদ্ধার দূর সম্পর্কের বোনপো নিরঞ্জন যামিনীকে বিবাহ করার কথা দিলেও পরে প্রবঞ্চনা করে। নিরঞ্জন অন্যত্র বিবাহ করলেও তা অজ্ঞাত থাকায় বৃদ্ধা ভাবে নিরঞ্জন ফিরে আসবে। কিন্তু গল্পের নায়ক যখন যামিনীর মায়ের কাছে নিরঞ্জন পরিচয় দিয়ে যামিনীকে বিবাহ করার প্রতিশ্রুতি দেয়—“তখন তার চোখের ভেতর থাকে মধুর একটি সকৃতজ্ঞ হাসি।” যা মানুষের প্রতি যামিনীর বিশ্বাসকেই প্রমাণ করে।


৩। “একদিন তেলেনাপোতা আপনিও আবিষ্কার করতে পারেন।” –কার এই উক্তি? এই তেলেনাপোতা আবিষ্কারের তাৎপর্য কী? ১+৪=৫

উত্তর  ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পে প্রেমেন্দ্র মিত্র সবসময়েই চেষ্টা করেছেন ঘটনার প্রত্যক্ষতাকে এড়িয়ে গিয়ে একটা পরোক্ষ ভূমিকা সৃষ্টি করতে, যার মাধ্যমে গল্পের আবেদন আরও তীব্রতর হতে পারে, সংবেদন আরও গভীর হতে পারে। তাই এই গল্পের আলোচ্য অংশটির বক্তা গল্পলেখক বলে মনে হতে পারে। গল্পকথক, যিনি নায়ক, তিনিই আবার গল্পকথনের কৌশলে গল্পপাঠকও। তাই উদ্ধৃত অংশে ‘আপনি’ গল্পের নায়ক অথবা স্বয়ং পাঠক। ভৌগোলিক পরিচয়ে তেলেনাপোতা গ্রামকে খুঁজতে যাওয়া বৃথা। আসলে বাস্তবে তেলেনাপোতা বলে কোনো গ্রাম নেই। এই তেলেনাপোতা নির্বিশেষ রূপে বাংলার গ্রামের রিক্তরূপটিকে অনাবৃত করেছে। সুতরাং, এটিও একটি আবিষ্কার। তেলেনাপোতা যাওয়ার উপলক্ষ আসলে রোমান্টিক নায়কের আত্মআবিষ্কার। যা অন্য যে-কোনো তাৎপর্যকে পিছনে ফেলে দেয়। নাগরিক সভ্যতার কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে বাংলার গ্রামের দিকে যাত্রার পিছনে যে ভালোলাগা কাজ করে—তার মধ্যে কোনো আন্তরিকতা থাকে না, যা শেষ পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারেন নায়ক। যাত্রাপথের দীর্ঘতা, যন্ত্রণা, বিজলিহীন গ্রামের অন্ধকার, মশার উপদ্রব, পানাপুকুরের পচাগন্ধনায়কের রোমান্টিকতায় চরম আঘাত হানে। কিন্তু কেবল মধ্যবিত্ত নাগরিকের রোমান্স পিপাসার শূন্যগর্ভতাকেই আবিষ্কার করা নয়, প্রেমেন্দ্র মিত্র যেন আরও এক গভীরে আত্ম আবিষ্কারের দিকেই আমাদের নিয়ে যান। নাগরিক যান্ত্রিকতায় অভ্যস্থ নায়ক তেলেনাপোতায় আবিষ্কার করে মানবিকতার এক গোপন অস্তিত্ব। তাই যামিনীর মাকে আশ্বাস দিয়ে নায়ক নিজেকে মানবতার মহান তীর্থবাসী বলে আত্মসুখ অনুভব করেছিলেন। এই তেলেনাপোতা আবিষ্কার যেন তাই, আমাদের গহন মনের তলদেশের ছলনাময় রহস্যকেই আবিষ্কার করা।

৪। তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্প অবলম্বনে গল্পকথকের চরিত্রটির পরিচয় দাও।

উত্তর  আদ্যোপান্ত ভবিষ্যৎকালের ক্রিয়াপদে গঠিত প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পের তির্যকতা রোমান্টিক ভাষণের স্নিগ্ধ প্রলেপে অনবদ্য। ভাববাচ্যে লেখা হলেও গল্পটিতে আত্মকথনের আভাস আছে। তাই গল্পকথকের চরিত্রটিকেই নায়কচরিত্র বলে মনে হয়। যদিও গল্পকথক কোনো নির্দিষ্ট চরিত্র নয়, বরং পাঠককেই গল্পের নায়কের জায়গায় অভিষিক্ত করেছেন। গল্পকথকের মনের মধ্যে নাগরিক জীবনের একমুখীনতার বাইরে অন্য এক জীবনের গভীরে প্রবেশ করার প্রবল রোমান্টিক ইচ্ছা দেখা যায়। সে কারণেই দু-একদিনের অবসর কাটাতে তেলেনাপোতার উদ্দেশ্যে সবান্ধব যাত্রা। নায়কের মাছ ধরার উদ্দেশ্যটি তার আলস্যপ্রিয় মনটিকে প্রকাশ করে। কিন্তু তেলেনাপোতা ভ্রমণের মধ্যে যে তাদের কোনো আত্মিক তাগিদ ছিল—এমনটা নয়। বাংলার গ্রাম্যজীবনকে উপভোগ করার কোনো বাসনাই তাদের কথাবার্তায় ধরা পড়ে না। যাত্রার শুরু ভিড়ে ঠাসা বাসে এবং তারপর গোরুর গাড়িতে। এই যাত্রাপথ যন্ত্রণাময়—যা কখনো ভোলার নয়। তেলেনাপোতার অন্ধকারের নীরবতা, কৃত্রিম আলোহীনতা, মশার উপদ্রব— সকলকেই অস্বস্তিতে ফেলে। তবুও সেই জীর্ণ অট্টালিকার অন্ধকার ঘরে দমবন্ধ করা পরিবেশে ছাদে এসে গল্পকথকের মনে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি জন্মায়। সেই রোমাঞ্চকতাকে রহস্যময়তায় পৌঁছে দেয় বাড়ির জানালায় এক নারীর ছায়ামূর্তি। অন্ধকার সরিয়ে আলো ফুটতেই রাত্রের রহস্যময়তা সরে গিয়ে বাস্তব সামনে আসে গল্পকথকের। যামিনীর মাকে কথা দিলেও গল্পকথকের আর ফিরে যাওয়া হয়ে ওঠে না তেলেনাপোতায়। যামিনীর কাছে ফিরে যেতে না পারার অপরাধবোধে বিদ্ধ হতে থাকা গল্পকথক আবার যান্ত্রিকতার জীবনে প্রবেশ করে।


৫। “তোর শেষ কথা না পেলে আমি মরেও শান্তি  পাব না।”—কার এই উক্তি? ‘শেষ কথা'—বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ১+৪=৫

উত্তর  অসহায় বিধবার অবিবাহিতা কন্যাকে নিয়ে যে ব্যাকুলতা—তা অত্যন্ত বিষাদময়তার সঙ্গে প্রেমেন্দ্র মিত্র তাঁর ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তুলে ধরেছেন যামিনীর মায়ের মধ্য দিয়ে। যামিনীর অন্ধ বৃদ্ধা মা অত্যন্ত কাতরতার সঙ্গে এই কথা বলেছিলেন গল্পকথককে—যাকে তিনি নিরঞ্জন ভেবেছিলেন। তেলেনাপোতা পৌঁছে গল্পকথক তথা গল্পের নায়ক পরদিন পুকুরঘাটে যামিনীর প্রথম সাক্ষাৎ পায়। অপুষ্টি ও দুশ্চিন্তার কারণে যামিনীর শারীরিক অপূর্ণতা তাকে বিস্মিত করেছিল। যামিনীর দূরসম্পর্কের আত্মীয় মণির কাছে পরবর্তীকালে শুনেছিল যামিনীর জীবনের এক করুণ ইতিহাস। যামিনীর মা দূরসম্পর্কের বোনপো নিরঞ্জনের সঙ্গে যামিনীর বিবাহ ঠিক করেছিলেন। কিন্তু নিরঞ্জন কথা রাখেনি, অন্যত্র বিবাহ করে সংসার জীবনযাপন করছে। যামিনীর মা তারই প্রতীক্ষায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। আর যামিনীও মায়ের বিশ্বাসে আঘাত হেনে সত্য কথা প্রকাশ করতে চায় না। বৃদ্ধা মায়ের মেয়ের জন্য দুশ্চিন্তা যেন কিছুক্ষণের জন্য গল্পকথকের মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। সেই বৃদ্ধার আকুল আহ্বানে যামিনী মণিকে সেখানে যেতে বলে, গল্পকথকও তার সঙ্গে বৃদ্ধার কাছে যায়। তাই বৃদ্ধা নিরঞ্জন এসেছে কি না জানতে চাইলেই নিজের ইচ্ছাতেই গল্পকথক নিজেকে নিরঞ্জন বলে পরিচয় দেয়। মণি ও যামিনী এই কথায় আশ্চর্য হলেও গল্পকথকের মনের মধ্যে একটা মহৎভাব জেগে উঠেছিল। তাই উদ্বিগ্ন বৃদ্ধা তার নিরঞ্জন তথা গল্পকথকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা ‘শেষকথা' শুনতে চাইছিলেন। নিরঞ্জনরূপী গল্পকথক শেষ কথা দিয়েছিল—“আমি তোমায় কথা দিচ্ছি মাসিমা। আমার কথার নড়চড় হবে না।”


 ৬। তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্প অবলম্বনে যামিনীর মায়ের চরিত্র আলোচনা করো।

উত্তর তেলেনাপোতা গ্রামের যামিনীর মায়ের চরিত্রটির মধ্য দিয়ে প্রেমেন্দ্র মিত্র তাঁর ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে গ্রামবাংলার চিরন্তন মায়ের রূপটিকেই ফুটিয়ে তুলেছেন। যামিনীর মা’কে বাংলার পল্লির কন্যাদায়গ্রস্ত আর পাঁচটা মায়ের প্রতীক হিসাবে গ্রহণ করা যায়। অসহায় বিধবার অরক্ষণীয়া কন্যাকে নিয়ে যে আকুলতা তা অত্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে কঙ্কালসার বৃদ্ধার চরিত্রে। মৃত্যুপথযাত্রী এই বৃদ্ধার একমাত্র ভাবনা-কন্যার ভবিষ্যৎ। কন্যার প্রতি অপরিমেয় ভালোবাসাই তাঁকে যেন মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। দূর সম্পর্কের এক বোনপো নিরঞ্জনের সঙ্গে কন্যার বিবাহ ঠিক করে রেখেছিলেন। কিন্তু নিরঞ্জন কথা দিয়েও কথা না রেখে অন্যত্র বিবাহ করেছে। এ খবর বৃদ্ধার অজানাই থেকে গেছে। তাই আত্মীয় মণি ও তার দুই বন্ধু তেলেনাপোতা পৌঁছালে অন্ধ বৃদ্ধা ভাবেন নিরঞ্জন বুঝি ফিরে এসেছে তার প্রতিশ্রুতি পালন করতে। তাই তিনি উদ্‌বেল হয়ে উঠেছেন। নায়ক যে নিরঞ্জন নয় একথা জানতে পারলে তার মৃত্যু অনিবার্য জেনে উদ্‌বেল হয়ে ওঠে যামিনী। কিন্তু সবাইকে হতচকিত করে গল্পের নায়ক হঠাৎ বৃদ্ধাকে জানায় যে যামিনীকে সে বিবাহ করবে। প্রাণ পেয়ে বৃদ্ধা বলে ওঠেন—“যামিনীকে নিয়ে তুই সুখী হবি বাবা। ...যামিনীকে তুই নিবি তো....?” বৃদ্ধার শেষ মুহূর্তের অসম্ভব আর্তিতে যেন এক জীবন্ত মা দেখা গিয়েছে ওই ‘শ্মশানের দেশ’-এ।


৭। “তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য আপনার দুটি বন্ধুর একজন পানরসিক ও অপরজন

নিদ্রাবিলাসী কুম্ভকর্ণের দোসর হওয়া দরকার।”—এই দুই বন্ধুর চরিত্র উল্লেখ করেবুঝিয়ে দাও কেন তাদের তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য দরকার।

উত্তর মূল চরিত্রকে প্রতিষ্ঠা দেবার উদ্দেশ্যে প্রেমেন্দ্র মিত্র তাঁর ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে নায়ক চরিত্রের পাশাপাশি দুটি পার্শ্বচরিত্রের উপস্থিতি ঘটিয়েছেন। তাই গল্পে নায়কের পানরসিক ও নিদ্রাবিলাসী দুই বন্ধুর ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয় তেলেনাপোতাগামী তিন বন্ধুর আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে একটি বিশেষ শ্রেণিগত পরিচয় ফুটে ওঠে। মহানগরীর শিক্ষিত স্বার্থপর সুবিধাবাদীর পরিচয়ই ব্যক্ত হয় তাদের চরিত্রের মধ্য দিয়ে। গল্পকথকের এক বন্ধুর নাম জানা যায় না—তবে ওইরূপ বদ্ধ ঘরে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ায় তাকে নিদ্রাবিলাসী ছাড়া কিছু বলা যায় না। অপরজন মণি, যে দূর সম্পর্কের আত্মীয় যামিনীদের, অতিরিক্ত পানরসিক। তেলেনাপোতা গ্রামটি মণির কাছে অপরিচিত নয়। মদ্যপান ও নিদ্রা এই দুটির অসাধারণ গুণে নায়কের বন্ধু দুটির স্বাভাবিক চেতনা আচ্ছন্ন। তাই তেলেনাপোতা গ্রাম সম্পর্কে উভয়েই উদাসীন। নতুন কোনো অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের আগ্রহও তাদের নেই। সমাজ ও জীবন সম্পর্কে তারা অত্যন্ত অনাগ্রহী। তবে মণি চরিত্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তেলেনাপোতার সঙ্গে অন্য দুজনের সংযোগ ঘটেছে তার মধ্য দিয়েই। তেলেনাপোতার যে মৌলিকত্ব, যে রহস্য তা যেন দুই বন্ধুর কাছে ধরা পড়ে না। তবে উভয়ের সঙ্গেই নায়কের তেলেনাপোতা অভিযান সার্থক হয়ে উঠেছে। পানদোষ ও কুম্ভকর্ণের নিদ্রা না থাকলে এত সহজে নায়কের পক্ষে তেলেনাপোতা আবিষ্কার সম্ভব হত না। তাই এই দুই দোসর পার্শ্বচরিত্র হয়েও গল্পে একটা আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।


৮। “তেলেনাপোতার স্মৃতি আপনার কাছে ঝাপসা একটা স্বপ্ন বলে মনে হবে।” -কেন, তেলেনাপোতার স্মৃতি স্বপ্ন বলে মনে হবে? ৫ 

উত্তর  “শনি ও মঙ্গলের, মঙ্গলই হবে বোধহয়— যোগাযোগ হলে তেলেনাপোতা আপনারাও একদিন আবিষ্কার করতে পারেন।” – প্রেমেন্দ্র তেলেনাপোতা আবিষ্কারের কথা এত সহজে বললেও আসলে তেলেনাপোতা বলে কোনো একটি গ্রাম নেই। বাংলার রিক্ত সর্বহারা পল্লিমাত্রেই তেলেনাপোতা। নিত্যকর্মের ব্যস্ততার একটু অবসরে ছুটি কাটাতে গিয়ে মহানগরীর তিনটি মানুষের কাছে উন্মোচিত হয় তেলেনাপোতার স্বরূপ। তেলেনাপোতা গ্রামে গিয়ে নায়কের যে অভিজ্ঞতা, তার মানসমুক্তি এবং পরিশেষে বেদনাবিদ্ধ হওয়ার ফলে নতুন করে সে নিজেকে আবিষ্কার করে। কিন্তু বাস্তবের কাঠিন্য তার রোমান্টিকতাকে আঘাত করে। তেলেনাপোতার বিজলিহীন অন্ধকার, মশার উপদ্রব, প্রবল দারিদ্র্য, পানাপুকুরের পচা গন্ধ—তাদেরকে অস্বস্তির মুখে ফেলে দেয়। নিরঞ্জনরূপী নায়ক মৃত্যুমুখিনী বৃদ্ধাকে সান্ত্বনা দেওয়াই নয়, যামিনীর করুণ চোখ দুটি যে এক মুহূর্তে জীবনে সোনার কাঠি ছুঁইয়ে দেয়—চলে আসার সময় হৃৎস্পন্দনে একটি কথাই বারবার ধ্বনিত হয় “ফিরে আসব, ফিরে আসব।” কিন্তু বাস্তব এত সহজ নয়। শহরে ফিরে এসে, দীর্ঘকাল ম্যালেরিয়া ভোগ করে ওঠার পরে ‘তেলেনাপোতা’ আর সত্য থাকে না। তার স্মৃতি কোথায় হারিয়ে যায়, সবই স্বপ্নের মতো মনে হয়। যামিনীর কাছে ফিরে যেতে না পারার অপরাধ যেন তাকেই বেদনাবিদ্ধ করতে থাকে। সেও যেন সেই নিরঞ্জনের মতোই, যারা প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু রক্ষা করে না। সামাজিক মানুষ হিসেবে আমাদের যে একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে, লেখক তার মূলে আঘাত হেনেছেন পাঠকের আপাত নির্লিপ্ততায়।



৯। 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্প অবলম্বনে তেলেনাপোতা যাওয়ার পথের বর্ণনা দাও।

উত্তর  দুদিনের ছুটিতে এক ভাদ্রের অপরাহ্ণে গল্পের নায়ক দুজন বন্ধুকে সঙ্গী করে তেলেনাপোতা গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ভিড়ে ঠাসাঠাসি একটি বাসে উঠে প্রবল ঝাঁকানি, মানুষের গুঁতো আর ধুলো খেতে খেতে ঘণ্টা দুয়েক পরে তাঁরা একটা জলা জায়গার সামনে বাস থেকে নামেন। চারিদিক নিঃস্তব্ধ, সূর্য না ডুবলেও মনে হচ্ছে অন্ধকার নেমে এসেছে। জলাভূমি থেকে কুণ্ডলীকৃত বাষ্প অদৃশ্য ফণা তুলে একটা স্যাঁতস্যাঁতে ভিজে ভ্যাপসা আবহাওয়া তৈরি করেছে। এইরূপ দমবন্ধ করা পরিবেশের মধ্যে দাঁড়িয়ে তাঁরা ফিরে যাবার কথা ভাবতে থাকেন। ঠিক সেই সময় কাদাজলের নালার পাশের জঙ্গল থেকে একটা গোরুর গাড়ি তীব্র আর্তনাদ করতে করতে বেরিয়ে আসে। যেমন গাড়িটি, তেমনি তার গোরুদুটিও ছোটোখাটো—মনে হয় যেন কোনো বামনের দেশ থেকে এসেছে। এরপর গাড়িতে উঠে বসেন গল্পের নায়ক ও তাঁর বন্ধুরা। গাড়ির ভিতরটি অপ্রশস্ত হওয়ায় পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খেতে থাকেন। কোনোক্রমে বসে থেকে অন্ধকারের দেওয়াল ভেদ করে এরপর ধীরে ধীরে পথচলা। হঠাৎ তারা সচকিত হয়ে ওঠেন ক্যানেস্তারা বাজানোর শব্দে। গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে গাড়োয়ান ক্যানেস্তারা বাজাচ্ছে। কারণ জানতে চাইলে গাড়োয়ান বলে চিতাবাঘ তাড়ানোর জন্য সে ক্যানেস্তারা বাজাচ্ছে। কলকাতা থেকে মাত্র ত্রিশ মাইল দূরে বাঘের উপদ্রব শুনে তাঁরা বিস্মিত হন। প্রায় মধ্যরাত্রে তাঁরা গোরুর গাড়ি থেকে একটা জায়গায় নামেন। সেখান থেকে পৌঁছে যান একটা অন্য জগতে, পৃথিবীর মধ্যে থেকেও পৃথিবীর চেয়ে আলাদা অন্ধকারময়, কুয়াশাঘেরা একটা জগৎ সময় যেখানে স্থির হয়ে আছে, “থেমে গেছে ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটা”।


 ১০। “একবার ক্ষণিকের জন্য আবিষ্কৃত হয়ে তেলেনাপোতা আবার চিরন্তন রাত্রির অতলতায়

নিমগ্ন হয়ে যাবে।” – কেন একথা বলা হয়েছে?

উত্তর  এক অখ্যাত গ্রাম তেলেনাপোতা সেখানে যাবা উদ্দেশ্যে গল্পের নায়ক দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা থেকে রওনা দেন। এই তেলেনাপোতা গ্রাম আসলে কল্পনামাত্র। বাস্তবে এই গ্রামের অস্তিত্ব নেই। আর কোনোদিনই তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলার নিঃস্ব গ্রাম মাত্রেই তেলেনাপোতা গ্রাম। শহুরে জীবনের একমুখীনতা থেকে দূরে গিয়ে গ্রাম্যজীবনের স্বাদ গ্রহণের জন্য তিন বন্ধুর ওইরূপ গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা। কিন্তু বাস থেকে নামার পর কঠিন বাস্তব তাদের রোমান্টিক মনকে আঘাত করেছে। দীর্ঘ পথের দুঃসহ ক্লান্তি এবং তেলেনাপোতা পৌঁছেও সেখানকার অন্ধকার, মশার উৎপাত, চরম আকণ্ঠ দারিদ্র্য, পানাপুকুরের পচা গন্ধ আগন্তুকদের তীব্র বাস্তবের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। এইরূপ তেলেনাপোতাকে আবিষ্কারের জন্য প্রয়োজন রসিক, মানবপ্রেমিক, মানবতাবোধে পূর্ণ অনুভূতিশীল হৃদয়। ক্ষণিকের জন্য হলেও গল্পের নায়কের মধ্যে এই গুণগুলি প্রকাশ পেয়েছে ; এবং তেলেনাপাতা নির্বিশেষ রূপে বাংলার পল্লির রিক্ত রূপটিকে অনাবৃত করেছে।


কিন্তু বাস্তব এত সহজ নয়। শহরে ফিরে এসে, দীর্ঘকাল ম্যালেরিয়া ভোগ করে ওঠার পরে ‘তেলেনাপোতা’ আর তাই সত্য থাকবে না। তার পথ কোথায় হারিয়ে যাবে, সবই স্বপ্নের মতো মনে হবে। তাই তেলেনাপোতা গ্রামের কথা ক্ষণিকের 5 তরে গল্পকথকের মনে পড়লেও তা স্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবে। মনে হবে যেন তেলেনাপোতা বলে কোথাও কিছু সত্যি নেই।



১১। 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' কি শুধুই একটি ছোটোগল্প, নাকি আধুনিকতার ছাঁচে ঢালা 'শকুন্তলা-কাহিনি’?

উত্তর  বাংলা সাহিত্যধারায় কল্লোল যুগের সাহিত্য ব্যাপক পালাবদল ঘটিয়েছিল। একদিকে নিত্যদিনের মানুষের জীবনের দিনপঞ্জি অন্যদিকে শ্রমজীবী, অন্ত্যজ শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষ ও তাদের দুঃখযন্ত্রণার কথা, কল্লোল যুগের সাহিত্য সম্পর্কে পাঠককে ভাবতে বাধ্য করল। পরিবর্তনের মুখোশের আড়ালে থাকা বে-আব্রু রূপটিও তখন আভিজাত্যের পর্দা সরিয়ে এই সময়ের সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। এই ধারার অন্যতম ঋত্বিক প্রেমেন্দ্র মিত্র সেই সুরটি রচনা করেছেন একেবারে নিজস্ব ভঙ্গিমায়। ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাওয়া উপেক্ষিত এক গ্রামেরআরও বেশি এক উপেক্ষিতার করুণ জীবনের কাহিনি। সমাজ বাস্তবতা বা সাংসারিক নিত্যদিনের সুখ-দুঃখের কাহিনি এ গল্পে থাকলেও তার পরিণতি যেভাবে ছোটোগল্পে থাকে—তা কিন্তু এখানে অনুপস্থিত। প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ, বিশাল মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ সবই যেন পাঠকের আবিষ্কারের তালিকাভুক্ত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে মানুষের জীবনের জ্বালা, যন্ত্রণা, কদর্যতা, লালসা, ব্যভিচার, হিংসা থেকে মুক্তির কামনা, অথচ যেখানে মুক্তির স্থান নেই—সেই জীবনের ভাঙন ও অবক্ষয়ের স্বরূপ আবিষ্কার ঘটেছে এই গল্পে। এই বিষয়ের কেন্দ্রে আছে যামিনী নামের চরিত্রটি—যে এখনো নিরঞ্জন নামক এক রাজকুমারের অপেক্ষায় দিন গুনছে, শকুন্তলা যেমনভাবে রাজা দুষ্মন্তের জন্য অপেক্ষা করেছিল। প্রেমেন্দ্র মিত্র কাহিনির অবসানঘটিয়েছেন অন্য এক পরিবেশে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী কেবলমাত্র নিরঞ্জন নয়— ছনিরঞ্জনের মতো অনেকেই। পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য তেলেনাপোতা হলেও তেলেনাপোতা আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় যামিনীর মতো চরিত্র ভালোবাসার কাঙাল হয়ে তাই হয়ে উঠেছে আধুনিকতার ছাঁচে ঢালা শকুন্তলা।


১৫। “ধ্বংসপুরীর ছায়ার মতো সেই মেয়েটি হয়তো আপনার কোনো দুর্বল মুহূর্তের অবাস্তব কুয়াশাময় কল্পনা মাত্র।”— মেয়েটিকে ‘কুয়াশাময় কল্পনা' বলা হয়েছে কেন?

উত্তর  ইট-কাঠ-পাথরের জঙ্গলে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ মুক্তি পেতে চায় খোলা প্রকৃতির মাঝে। তাই সমস্ত সপ্তাহের কাজের ফাঁকে হঠাৎ দু-একদিনের ছুটি পেলে শহুরে উজ্জ্বলতায় ক্লান্ত মন খুঁজে নিতে পারে তেলেনাপোতার মতো নির্জন গ্রামকে। গল্পকথক তার বন্ধুদের নিয়ে এরকম এক তেলেনাপোতা গ্রামে বেড়াতে এসেছেন। গ্রামের যে বাড়িতে তারা আশ্রয় নিয়েছেন সেই ভগ্নপ্রায় বাড়িটির দশা অত্যন্ত করুণ। বাড়িটিতে বাস করা দুটি নারীর মধ্যে একজন যামিনী এবং অন্যজন যামিনীর মৃতপ্রায় মা; যিনি তাঁর বোনপোর আসার অপেক্ষায় ধরে রেখেছেন তাঁর শেষ নিঃশ্বাসকে। বৃদ্ধার বোনপো নিরঞ্জন যামিনীকে বিয়ে করার কথা দিয়েও আর ফিরে আসেনি। সেই আশার আশায় থাকা বৃদ্ধাকে কথক যখন বলেন—“আমি তোমায় কথা দিচ্ছি মাসিমা। আমার কথার নড়চড় হবে না।” তখন বৃদ্ধার নিস্তরঙ্গ প্রাণেও একটাঢেউ লাগে। কথকের এই কথার সুরে যামিনীর মনে অবিশ্বাসের ধুলো সরিয়ে জেগে ওঠে নতুন করে বিশ্বাসের আলো। সে জানে না স্বপ্ন জলের বুদবুদের মতো ফুলে ওঠে—কিন্তু অচিরেই তা মিলিয়ে যায়। এখানেও যামিনীর স্বপ্ন হারিয়ে যায় নিঃসীম রাতে বুদবুদের মতো। কথক অনামী গ্রাম থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান শহরে। কথকের প্রতিজ্ঞা সেখানে হারিয়ে যায় দীর্ঘকালের আবহে। ব্যঙ্গের তীব্র কশাঘাতে গল্পকার দেখিয়েছেন—শহরের জাজ্জ্বল্যমানতার আড়ালে চিরকালই অন্ধকারে থেকে যায় তেলেনাপোতার মতো গ্রাম, আর ধ্বংসপুরীর ছায়ার মতো যামিনী হয়ে যায় কোনো দুর্বল মুহূর্তের অবাস্তব কুয়াশাময় কল্পনামাত্র।


 ১৬। “তেলেনাপোতা আবিষ্কার” গল্প অবলম্বনে নিরঞ্জন চরিত্রের স্বরূপ বিচার করো।

উত্তর  নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে প্রেমেন্দ্র মিত্র তাঁর ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পে যামিনীর বাগদত্ত হিসাবে নিরঞ্জন চরিত্রের উপস্থাপন করেছেন। যামিনীর মায়ের দূর সম্পর্কের বোনপো নিরঞ্জন, যে বছর চারেক আগে বিদেশের চাকরি থেকে ফিরে এসে বৃদ্ধার মেয়েকে বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছিল। ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পে নিরঞ্জনের কোনো প্রত্যক্ষ উপস্থিতি নেই। রাত্রে আহারের পর যামিনীর সঙ্গে মণিদার কতাবার্তার সূত্রে কথক নিরঞ্জনের বিষয়টি অবগত হয়। কীরূপ পরিস্থিতিতে নিরঞ্জন যামিনীকে বিয়ে করার কথা দিয়েছিল—তা পরিষ্কার নয়। গল্পকার যামিনীর সাথে নিরঞ্জনের প্রেমপর্বের সূচনা হিসাবেও তেমন কিছু তুলে ধরেননি। সমাজের যে-কোনো স্তরেই যে কোনো ব্যক্তিই নিরঞ্জনের রীতিতে অভ্যস্ত। সমাজের চাপে পড়ে, কিংবা স্বেচ্ছায় সাময়িকভাবে কথা দেয় অনেকেই। কিন্তু কথা দিয়ে আশার সঞ্চার করে আর কেউ কথা রাখে না। অনেকেই স্বার্থপর হয়ে পড়ে। প্রসঙ্গক্রমে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি'—কবিতার বোষ্টমীর কথা স্মরণে আসে। নিরঞ্জন ঘুঁটে কুড়ুনির মেয়েকে বিয়ে করে জীবনের মহান ব্রতে শহীদ হতে চায়নি। সে অন্যত্র সংসারজীবনে ব্যস্ত। প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রেমকে সৌন্দর্যের আরতি হিসেবে নয়—ভোগের আরতি হিসেবে দেখিয়েছেন।



[TAG]:   একাদশ শ্রেণি তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্প pdf,তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্প mcq,তেলেনাপােতা আবিষ্কার বড় প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণি,একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প,একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প 3 নং প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প  বড় প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প 1 প্রশ্ন উত্তর,Class 11 Bengali golpo question in bengali,

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now