বিসমার্ক কীভাবে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন ? বিসমার্ক জার্মানিকে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ করেন ?
বিসমার্ক (Bismarck) কীভাবে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন ? বিসমার্ক জার্মানিকে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ করেন ?
উত্তর: ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে অটোভন বিসমার্ক (Otto Von Bismarck) নামে এক কূটনীতিজ্ঞ প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হলে জার্মানির ঐক্য আন্দোলনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় ।
বিসমার্কের কূটনীতি : জার্মানির ঐক্যসাধন বিষয়ে বিসমার্কের কূটনীতির দৃষ্টান্তগুলি উল্লেখযোগ্য—
1.তিনিকেন্দ্রীয় আইনসভায় অস্ট্রিয়ার মর্যাদা নষ্ট করে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানির ক্ষুদ্র রাজ্যগুলিকে সংগঠনে সচেষ্ট হন,
2. তিনি ফ্রাঙ্কো-প্রাশিয় বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদন করে ফ্রান্সের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন,
3. পোলদের বিদ্রোহ দমনে রাশিয়াকে সাহায্য করে বিসমার্ক রাশিয়ার আস্থা অর্জন করেন।
রক্ত ও লৌহ নীতি (Blood and Iron Policy) : রক্ষণশীল রাজতন্ত্রের ঘোর সমর্থক বিসমার্ক মনে করতেন, প্রাশিয়ার রাজতন্ত্রের অধীনেই জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির উপর তাঁর আস্থা ছিল না। তিনি বলেন যে, বক্তৃতা দিয়ে বা সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রস্তাব পাস করিয়ে দেশের সমস্যার সমাধান হবে না, এর জন্য গ্রহণ করতে হবে রক্ত ও লৌহ নীতি (Blood and Iron Policy)। রক্ত ও লৌহ নীতি হল সামরিক শক্তির উপর নির্ভরশীলতা। সামরিক শক্তির দ্বারাই জার্মানির ঐক্যলাভ সম্ভব— এ কথা তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। শেষ পর্যন্ত সামরিক শক্তির সাহায্যে তিনটি যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তিনটি যুদ্ধ হল— ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ, ঔ অস্ট্রো-প্রাশিয় যুদ্ধ, ও ফ্রাঙ্কো-প্রাশিয় যুদ্ধ।
ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ (Battle with Denmark) : শ্লেজউইগ ও হলস্টিন প্রদেশ জার্মানির রাজ্যসীমার অন্তর্ভুক্ত হলেও আইনত ডেনমার্কের অধীন ছিল। বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার সঙ্গে মিলিত হয়ে ডেনমার্কের সঙ্গে ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। পরাজিত ডেনমার্ক ভিয়েনা চুক্তির দ্বারা দুটি প্রদেশের উপর সব দাবি ত্যাগ করে। কিন্তু অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার মধ্যে এই দুই প্রদেশের কর্তৃত্ব নিয়ে বিবাদ বাধে।
গ্যাস্টিনের সন্ধি (Treaty of Gastein, ১৮৬৫ খ্রি.) দ্বারা প্রাশিয়া শ্লেজউইগ ও অস্ট্রিয়া হলস্টিন প্রদেশ লাভ করে।
অস্ট্রো-প্রাশিয় যুদ্ধ (Austro-Prussian War) : বিসমার্ক অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় রাজনীতিতে তাকে মিত্রহীন করার জন্য সচেষ্ট হন ৷ পোল বিদ্রোহের সময় রাশিয়া প্রাশিয়ার সাহায্য পেয়েছিল। আর ইটালি অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যোগ দিলে ভেনেসিয়া পেতে পারে এবং ফ্রান্স নিরপেক্ষ থাকলে জার্মানির কিছু ভূখণ্ড লাভ করতে পারে এই আশায় রাশিয়া, ইটালি, ফ্রান্স অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে চলে যায়। সাত সপ্তাহের যুদ্ধে (Seven Weeks War) এবং স্যাডোয়ার যুদ্ধে (Battle of Sadowa ) ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়া শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় এবং প্রাগের সন্ধির (Peace of Prague, ১৮৬৬ খ্রি.) দ্বারা যুদ্ধের অবসান ঘটে।
ফ্রাঙ্কো-প্রাশিয় যুদ্ধ (Franco-Prussian War) : অস্ট্রিয়ার পরাজয়ের পর ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অগ্রসর হয় প্রাশিয়া।অস্ট্রিয়া, ইটালি ও রাশিয়াকে নিরপেক্ষ রেখে বিসমার্ক ফ্রান্সকে যুদ্ধের জন্য প্ররোচিত করেন। ফ্রান্স বিসমার্কের কূটনৈতিক জালে জড়িয়ে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সেডানের যুদ্ধে (Battle of Sedan) ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন (Napoleon III) চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দের ১০ মে ফ্রাঙ্কফোর্টের সন্ধির (Peace of Frankfurt) দ্বারা এই যুদ্ধের অবসান ঘটে। জার্মানির রাজনৈতিক ঐক্য সম্পন্ন হয়। এইভাবে বিসমার্ক কূটনীতি ও যুদ্ধনীতির মাধ্যমে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন। ঐক্যবদ্ধ জার্মানির প্রথম সম্রাট হন কাইজার প্রথম উইলিয়ম (Kaisar WilliamI)।