ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে? ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিভাগ

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে? ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর

ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে? ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর
ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে, ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিভাগ 

ব্যাকটেরিয়া কি ? ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে?

সংজ্ঞা (Definition): আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত, কোশপ্রাচীর সমন্বিত, এককোশী, ক্ষুদ্রতম, সরল প্রকৃতির আণুবীক্ষণিক জীবাণুদের ব্যাকটেরিয়া বলে।


ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিভাগ (Classification of Bacteria) :

ব্যাকটেরিয়ার বহিরাকৃতি অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস (Classification of Bacteria on the basis of morphological types) : বহিরাকৃতি অনুযায়ী ব্যাকটেরিয়াকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যেতে পারে—


1. গোলাকার (Spherical) বা কক্কাস (Coccus) :

এককোশী গোলাকার বা ডিম্বাকার, একক ব্যাকটেরিয়াকে কক্কাস (Coccus) বলা হয় (Plural—cocci)। এরূপ ব্যাকটিরিয়ায় সহাবস্থান অনুযায়ী এরা বিভিন্ন প্রকারের হয়, যেমন—

(i) মাইক্রোকক্কাস (Micrococcus) : কক্কাস ব্যাকটেরিয়া যখন এককভাবে থাকে তখন মনোকক্কাস বলে। যথা- Micrococcus flavus |


(ii) ডিপ্লোকক্কাস (Diplococcus) : কক্কাস যখন কোনো একটি তলে বিভাজিত হয় এবং জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে তখন তাকে ডিপ্লোকক্কাস বলে। যথা—Diplococcus pneumoniae |


(ii) স্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococcus) : যখন কোশগুলি একই তলে বিভাজিত হয় ও একটি সারিতে শৃঙ্খলাকারে থাকে তখন তাকে স্ট্রেপটোকক্কাস ২০, বলে। যথা— Streptococcus pyrogens |


(iy) টেট্রাকক্কাস (Tetracoccus) : যখন কোশগুলি দুটি ভিন্নতলে বিভাজিত হয় এবং আটটি কোশের এক- একটি গুচ্ছ গঠন করে। যথা— Tetracoccus sp.


(v) সারসিনি (Sarcinae) : যখন কোশগুলি তিনটি ভিন্ন তলে বিভাজিত হয় এবং আটটি করে এক একটি কোশগুচ্ছ গঠন করে। যথা—Sarcina lutea.


(vi) স্ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus) : এক্ষেত্রেকোশগুলি তিনটি ভিন্ন তলে অনিয়মিতভাবে বিভাজিত হয় এবং আঙুরের থোকার মতো এক একটি গুচ্ছ গঠন করে। যথা—Staphylococcus aureus


2, দণ্ডাকার বা ব্যাসিলাস (Rod-shaped or Bacillus ) : 

মাইক্রোকক্কাস বা এই প্রকার কোশগুলি লম্বাটে বেলনাকার বা দণ্ডাকার। একক কোশকে দণ্ডাকার ব্যাসিলাস (Bacillus) এবং একত্রে ব্যাসিলি (Bacilli) বলে। এরূপ ব্যাকটেরিয়ার সহাবস্থান অনুযায়ী এরা নিম্নলিখিত প্রকারের—

(i) মনোব্যাসিলাস (Monobacillus) : যখন দণ্ডাকার ব্যাকটেরিয়া এককভাবে অবস্থান করে। যথা—Bacillus sp.


(ii) ডিপ্লোব্যাসিলাস (Diplobacillus) : যখন দণ্ডাকার ব্যাকটেরিয়া বিভাজিত হয়ে দুটি পাশাপাশি সংলগ্ন থাকে। যথা—Lactobacillus sp. 


iii) স্ট্রেপটোব্যাসিলাস (Streptobacillus ): যখন দণ্ডাকার ব্যাকটেরিয়া বিভাজিত হয়ে পাশাপাশি শৃঙ্খলাকারে অবস্থান করে। যথা—Lactobacillus sp.


(iv) কক্কোব্যাসিলাস (Coccobacillus) : যখন ব্যাকটেরিয়াগুলি ঈষৎ লম্বা বা ডিম্বাকার হয়, তখন এদের কক্কোব্যাসিলাস বলে। Salmonella, Mycobacterium প্রভৃতি দণ্ডাকার ব্যাকটেরিয়ার উদাহরণ।


3.সর্পিলাকার বা স্পাইরিলাম (Spirillum) :

এই প্রকার ব্যাকটেরিয়ার দেহ সর্পিলাকার বা স্ক্রুর মতো প্যাচানো হয়। এরা আবার নিম্নলিখিত প্রকারের হয়। যথা—

(i) ভিব্রিওনস (Vibriones) : এগুলি দেখতে কমা-আকৃতির অর্থাৎ, দেহ খানিকটা পাক খাওয়া হয়। যথা—Vibrio cholerae


(ii) সর্পিল বা স্পাইরিলাম (Spirillum): এদের দেহ দৈর্ঘ্যে একাধিক সম্পূর্ণ পাকযুক্ত হয় ফলে দীর্ঘ ও সর্পিলাকার হয়। যথা — Spirillum sp.


4. অন্যান্য আকৃতি (Other form) :

(i) প্লিওমরফিক আকৃতিবিশিষ্ট (Pleomorphic): এই প্রকার ব্যাকটেরিয়ার বহির্গঠন ও আকৃতি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়। যথা—Mycoplasma, Rhizobium | 


(ii) ট্রাইকোম আকৃতিবিশিষ্ট (Trichomes): এই প্রকার কোশ একই তলে বিভাজিত হয়ে কোশের শৃঙ্খল গঠন করে। যথা— Beggiatoa


(iii) প্যালিসেড (Palisade): এক্ষেত্রে কোশগুলি পাশাপাশি ঘন সন্নিবিষ্ট থেকে দেশলাই কাঠির মতো গঠন সৃষ্টি করে। যথা— Corynebacterium diphtheriae


(iv) হাইফা বা অণুসূত্রাকার (Hyphae-like) : এরা বহুকোশী, পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট দীর্ঘ অণুসূত্র আকৃতির হয়। যথা— Streptomyces sp.


পুষ্টি-পদ্ধতি অনুযায়ী ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিভাগ (Classification of Bacteria on the basis of nutrition) :

ব্যাকটেরিয়ার পুষ্টি (Bacterial nutrition) : ব্যাকটেরিয়া মূলত পরভোজী (Heterotrophic) তবে কিছু সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া আবার স্বভোজী (Autotrophic)। অতএব পুষ্টি পদ্ধতি অনুসারে ব্যাকটেরিয়া প্রধানত দু প্রকারের-

1.পরভোজী ব্যাকটেরিয়া (Heterotrophic bacteria): পরভোজী ব্যাকটেরিয়া আবার দু-প্রকারের মৃতজীবী বা মেটাট্রফস্ (Metatrophs) এবং পরজীবী বা প্যারাট্রফস্ (Paratrophs)।


(i) মৃতজীবী বা মেটাট্রফস্ (Metatrophs) : যেসব ব্যাকটেরিয়া মৃত জীবদেহ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে তাদের মেটাট্রফস্ বলে। এরা আবার পূর্ণ মৃতজীবী (obligate saprophyte) বা আংশিক মৃতজীবী (facultative saprophyte) হতে পারে। পূর্ণ মৃতজীবী ব্যাকটেরিয়া হল কুসট্রিডিয়াম বিউটিরিকাম্ (Clostridium butyricum)। আংশিক মৃতজীবী ব্যাকটেরিয়া হল ভিব্রিও কলেরি (Vibrio cholerae)।


(ii) পরজীবী বা প্যারাট্রফস্ (Paratrophs): যেসব ব্যাকটেরিয়া সজীব পোষক দেহে বাস করে এবং সেখান থেকে পুষ্টিরস সংগ্রহ করে ও পোষকদেহে রোগ সৃষ্টি করে তাদের পরজীবী বা প্যারাট্রফস্ বলে। এরা আবার পূর্ণ পরজীবী (obligateparasite) বা আংশিক পরজীবী (facultativeparasite) হতে পারে। পূর্ণ পরজীবী ব্যাকটেরিয়া হল নিসেরিয়া গনোরি (Neisseria gonorrhoeae)। আংশিক পরজীবী ব্যাকটেরিয়া হল স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস (Staphylococcus aureus)।


পরভোজী ব্যাকটেরিয়াকে নিম্নলিখিতরূপেও ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন—

(i) ফোটোহেটারোট্রফস্ (Photoheterotrophs) : যেসব পরভোজী ব্যাকটেরিয়া সূর্যালোক থেকে শক্তি সংগ্রহ করে তাদের ফোটোহেটারোট্রফস্ বলে। যথা—রোডোস্পাইরিলাম রুব্রাম (Rhodospirillum rubrum)।


(ii) কেমোহেটারোট্রফস্ (Chemoheterotrophs) : যেসব পরভোজী ব্যাকটেরিয়া জৈববস্তু থেকে শক্তি সংগ্রহ করে তাদের কেমোহেটারোট্রফস্ বলে। যথা—এসচেরিচিয়া কোলাই (Escherichia coli)।


2.স্বভোজী ব্যাকটেরিয়া (Autotrophicbacteria)ঃ যেসব ব্যাকটেরিয়া সালোকসংশ্লেষ (photosynthesis) বা রাসায়নিক সংশ্লেষ (chemosynthesis) প্রক্রিয়ায় নিজেদের খাদ্য তৈরি করে পুষ্টি সংগ্রহ করে তাদের স্বভোজী ব্যাকটেরিয়া বলে। খাদ্য সংশ্লেষ প্রক্রিয়া অনুসারে এরা আবার দু-প্রকারের—

(i) সালোকসংশ্লেষকারী (Photoautotrophs) : এদের দেহকোশে সালোকসংশ্লেষকারী রঞ্জক ব্যাকটেরিওক্লোরোফিল (Bacteriochlorophyll) বা ক্লোরোবিয়াম ক্লোরোফিল (Chlorobium chlorophyll) থাকে বলে সূর্যালোক থেকে শক্তি সংগ্রহ করে খাদ্য সংশ্লেষ করে। এদের সালোকসংশ্লেষে কোনো অক্সিজেন উৎপন্ন হয় না, একে অ্যানঅক্সিজেনিক সালোকসংশ্লেষ বলে। যথা— ক্লোরোবিয়াম (Chlorobiumsp.), ক্রোমাশিয়াম (Chromatiumsp.), ক্লোরোব্যাকটেরিয়াম (Chlorobacterium) প্রভৃতি।


(ii) রাসায়নিক সংশ্লেষকারী (Chemoautotrophs) : এরা রঞ্জকবিহীন, সূর্যালোক ব্যতীত কোশস্থিত কিছু অজৈব পদার্থের জারণ বিক্রিয়া থেকে শক্তি সংগ্রহ করে খাদ্য সংশ্লেষ করে। যথা—নাইট্রোসোমোনাস (Nitrosomonas), নাইট্রোব্যাকটর (Nitrobacter), ফেরোব্যাসিলাস (Ferrobacillus), বেজিয়াটোয়া (Beggiatoa), লেপ্টোথ্রিক্স (Leptothrix) প্রভৃতি। এরা নাইট্রোজেন বা সালফার বা লৌহ যৌগের জারণ ঘটিয়ে শক্তি সংগ্রহ করে।


রঞ্জিতকরণ ধর্ম অনুযায়ী ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিভাগ (Classification of bacteria on the basis of staining property) :

বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান গ্রাম (Christian Gram) 1884 খ্রিস্টাব্দে প্রথম ব্যাকটেরিয়া কোশের বিশেষ রঞ্জিতকরণ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। তাঁর নাম অনুসারে এই রঞ্জিতকরণ পদ্ধতিকে গ্রাম-রঞ্জক পদ্ধতি (Gram staining procedure) বলা হয় । এই পদ্ধতির প্রধান রঞ্জক হল ক্রিস্টাল ভায়োলেট (Crystal violet)। এই পদ্ধতিতে রঞ্জিতকরণ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সমগ্র ব্যাকটেরিয়া গোষ্ঠীকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা—


1. গ্রাম-পজেটিভ ব্যাকটেরিয়া (Gram-positive bacteria) : যেসব ব্যাকটেরিয়ার কোশপ্রাচীর ক্রিস্টাল ভায়োলেট ও আয়োডিন দিয়ে সহজেই রঞ্জিত করা যায় এবং অ্যাসিটোন বা কোহল দিয়ে ধৌত করলে রঞ্জক মুক্ত হয় না তাদের গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া বলে। যথা—স্ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus),ব্যাসিলাস (Bacillus), স্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococcus) প্রভৃতি।


2.গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া (Gram-negative bacteria) ঃ যেসব ব্যাকটেরিয়ার কোশ প্রাচীর ক্রিস্টাল ভায়োলেট ও আয়োডিন দিয়ে রঞ্জিত করা যায় কিন্তু কোহল বা অ্যাসিটোন দিয়ে ধৌত করলে সহজেই রঞ্জক মুক্ত হয় তাদের গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া বলা হয়। যথা—এসচেরিচিয়া কোলাই (Escherichiacoli), সালমোনেলা (Salmonella), প্রোটিয়াস (Proteus)প্রভৃতি।


তাপসহিম্ভূতা অনুযায়ী ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিভাগ (Classification of Bacteria on the basis of thermal  sensitivity) :

বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ও স্বাভাবিক কার্যকারিতা বিভিন্ন তাপমাত্রায় ঘটতে থাকে। তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা কোনো ব্যাকটেরিয়া গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে খুবই কম আবার কোনো-কোনো ক্ষেত্রে অত্যধিক (70°C-80°C) ৷ তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে সামগ্রিকভাবে ব্যাকটেরিয়াকে তিনটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা—শৈত্যপ্রেমী (Psychrophilic), মধ্যম তাপপ্রেমী (Mesophilic) এবং তাপপ্রেমী (Thermophilic) ও শৈত্যপ্রেমী (Psychrophilic) ঃ যেসব ব্যাকটেরিয়া খুব কম তাপমাত্রায় স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় তাদের শৈত্যপ্রেমী বলে। এমনকি 0°C-এর নীচেও এরা বৃদ্ধি পায়। এদের নদী, হ্রদ ও শীতল সমুদ্রে জন্মাতে দেখা যায়। এদের আবার দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা—


(i) পূর্ণ শৈত্যপ্রেমী (Obligate Psychrophilic): এদের বৃদ্ধি 10°C-15°C তাপমাত্রায় ভালো হয়। যথা— আর্থ্রোব্যাকটর (Arthrobacter) |


(ii) আংশিক শৈত্যপ্রেমী (Facultative Psychrophilic ) ঃ এরা কম তাপমাত্রায় বৃদ্ধি পেলেও 25°C-30°C পর্যন্ত তাপমাত্রায় এদের ভালোই বৃদ্ধি হয়। যথা—সিউডোমোনাস (Pseudomonas sp.)। মধ্যম তাপপ্রেমী (Mesophilic) : এরা সাধারণত 25°C-35°C তাপমাত্রায় ভালো জন্মায় এমনকি 45°C পর্যন্ত তাপমাত্রায়

ভালোই বৃদ্ধি ঘটে। যথা—রাইজোবিয়াম (Rhizobium), অ্যাজোটোব্যাকটর (Azotobacter) প্রভৃতি ।


3. তাপপ্রেমী (Thermophilic) ঃ এরা সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রায় ভালো জন্মায় (45°-75°C)। এদের উয়-প্রস্রবণে (Hot spring) জন্মাতে দেখা যায়। এদের আবার দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা—

i) পূর্ণতাপপ্রেমী (Obligate thermophilic) : এরা 50°C-এর অধিক তাপমাত্রায় জন্মায়। যথা—থার্মার্স অ্যাকোয়াটিকাস (Thermus aquaticus) !


ii)আংশিকতাপপ্রেমী (Facultative thermophilic): এরা 45°C-এর বেশি এবং 50°C-এর কম তাপমাত্রায় জন্মায়। যথা—ব্যাসিলাস কোয়াগুলেন্স (Bacillus coagulans ) ।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url