ব্যাকটেরিয়া | Bacteria |ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য | একটি আদর্শ ব্যাকটেরিয়া কোশের (ই. কোলাই) গঠন
আজকে আমরা এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চলেছি ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য| এই তথ্যগুলো সমস্ত পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এবং বিশেষ করে উচ্চমাধ্যমিক ও একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ|
ব্যাকটেরিয়া | Bacteria |ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য | একটি আদর্শ ব্যাকটেরিয়া কোশের (ই. কোলাই) গঠন
ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে? ব্যাকটেরিয়া কি?
সংজ্ঞা (Definition): আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত, কোশপ্রাচীর সমন্বিত, এককোশী, ক্ষুদ্রতম, সরল প্রকৃতির আণুবীক্ষণিক জীবাণুদের ব্যাকটেরিয়া বলে।
ব্যাকটেরিয়াকে প্রোক্যারিওটিক বা আদি কোশযুক্ত জীবের অন্তর্ভুক্ত করার কারণ কী ? (Why bacteria are included in Prokaryots?):
(i) ব্যাকটেরিয়া কোশে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না। পরিবর্তে একটিমাত্র দ্বিতন্ত্রী, অতিশয় প্যাচানো, গোলাকার DNA থাকে, একে নিউক্লিওয়েড (nucleoid) বলে।
(ii) পর্দাবৃত কোশ অঙ্গাণু থাকে না ।
(iii) রাইবোজোম 70S প্রকৃতির।
(iv) কোশ বিভাজন অ্যামাইটোটিক প্রকৃতির। দ্বিবিভাজন পদ্ধতির মাধ্যমে সচরাচর বংশবিস্তার করে।
(v) আয়তনে অতিশয় ক্ষুদ্র এবং কোশীয় গঠন সরল প্রকৃতির।
ব্যাকটেরিয়ার উদ্ভিদ বৈশিষ্ট্য (Plant characters of Bacteria) :
(i) সুনির্দিষ্ট এবং দৃঢ় কোশপ্রাচীর বর্তমান।
(ii) স্বভোজী ব্যাকটেরিয়া কোশে সালোকসংশ্লেষকারী রঞ্জক বর্তমান, এর সাহায্যে সালোকসংশ্লেষ করতে পারে।
(iii) ভিটামিন ও অ্যামাইনো অ্যাসিড সংশ্লেষে সক্ষম।
(iv) ব্যাকটেরিয়ার কোশ প্রাচীরে নীলাভ-সবুজ শৈবালের কোশ প্রাচীরের মতো পেপটাইডোগ্লাইক্যান উপাদান থাকে।
(v) উদ্ভিদের মতো পরিবেশ থেকে ব্যাপন পদ্ধতিতে পরিপোষক সংগ্রহ করে খাদ্য সংশ্লেষ করে (হ্যালোফাইটিক পুষ্টি)।
(vi) উদ্ভিদের মতো অঙ্গজ জনন পদ্ধতিতে জনন সম্পন্ন করে।
(vii) সূত্রাকার দেহ (filamentous body) গঠনের প্রবণতা দেখা যায়।
■ ব্যাকটেরিয়াকে প্রাচীনতম জীব বলা হয় কেন? (Why bacteria are considered as most primitive organism?):
(i) পৃথিবীতে জীব সৃষ্টির আদি সময়কাল থেকে ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।
(ii) সৰ্বত্ৰ বাস করে, বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশেও এদের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়।
(iii) এদের অনেকেই অবায়ুজীবী (anaerobic)।
(iv) অত্যন্ত সরল গঠনযুক্ত।
(v) বংশগতি বস্তু কেবলমাত্র দ্বিতন্ত্রী DNA। (vi)রাইবোজোম 70S প্রকৃতির।
(vii) প্রাচীনতম জনন পদ্ধতি ।
■ ব্যাকটেরিয়া ও নীলাভ-সবুজ শৈবালের মধ্যে সাদৃশ্য ( Similarities between bacteria and blue-green algae):
(i) উভয় গোষ্ঠীর অধিকাংশ প্রজাতি এককোশী গঠনযুক্ত।
(ii) কোশ প্রাচীরের বাইরে স্লাইম স্তর বর্তমান।
(iii) উভয় গোষ্ঠীর জীব প্রোক্যারিওটিক, বংশগতি বস্তু (কেবলমাত্র DNA) সরল গঠনযুক্ত।
(iv)কোশপ্রাচীরে মিউকোপেপটাইডের উপস্থিতি ।
(v) উভয়ের ভিটামিন ও অ্যামাইনো অ্যাসিড সংশ্লেষ ক্ষমতা বর্তমান। (vi) উভয় গোষ্ঠীর দ্বারা সালোকসংশ্লেষ ও নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ সম্পন্ন হয়।
(vii) প্রধান জনন পদ্ধতি হল অঙ্গজ ও অযৌন জনন। প্রকৃত যৌন জনন পদ্ধতি উভয় গোষ্ঠীতে অনুপস্থিত।
(viii) উভয় গোষ্ঠীর জীবাণুই ফাজ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।
একটি আদর্শ ব্যাকটেরিয়া কোশের (ই. কোলাই) গঠন [Structure of a typical bacterial cell (E. coli)]:
একটি আদর্শ ব্যাকটেরিয়া কোশ গঠনগতভাবে বহুলাংশে উদ্ভিদ কোশের মতো হয়। এর বিভিন্ন অংশগুলি বাইরে থেকে ভিতর দিকে পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করা হল—
1. স্নাইম স্তর বা ক্যাপসুল (Slime layer or capsule) :
ব্যাকটেরিয়ার কোশপ্রাচীরের বাইরে সাধারণত একটি পুরু পিচ্ছিল স্নাইম স্তর (Slime layer) থাকে, এটি শক্ত হলে একে ক্যাপসুল (Capsule) বলে। এটি মূলত পলিস্যাকারাইড, গ্লুকোপ্রোটিন,পলিপেপটাইড অথবা প্রোটিন জাতীয় বস্তু, যা প্রোটোপ্লাজম থেকে ক্ষরিত হয়।
কাজ (Functions) :
(i) ক্যাপসুলে সঞ্চিত পদার্থ ব্যাকটেরিয়া খাদ্যরূপে গ্রহণ করে।
(ii) ক্যাপসুল নাইট্রোজেন সংবন্ধনে কার্যকর।
(iii) ক্যাপসুল বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প শোষণে সক্ষম, ফলে পুনঃজলযোজনে (rehydration) সহায়ক।
(iv) ক্যাপসুল ব্যাকটেরিয়াকে শুষ্কতা বা অ্যান্টিবডির হাত থেকে রক্ষা করে।
(v) এটি ফ্যাগোসাইটোসিস (Phagocytosis) ও ভাইরাল সংক্রমণ থেকে ব্যাকটেরিয়াকে রক্ষা করে।
(vi) স্লাইম স্তর বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ও ওষুধের ক্রিয়া থেকে ব্যাকটেরিয়াকে রক্ষা করে।
কোশপ্রাচীর (Cell wall):ব্যাকটেরিয়া কোশের বাইরে স্লাইমস্তরের নীচে যে পুরু, দৃঢ় ও স্থিতিস্থাপক আবরণী থাকে তাকে কোশপ্রাচীর বলে। এটি প্রায় 10- 25nm পুরু ; প্রোটিন, স্নেহবস্তু ও কার্বোহাইড্রেট দিয়ে তৈরি। সাধারণত সেলুলোজ থাকে না। প্রধান উপাদান মিউকোপেপটাইড বা পেপটাইডোগ্লাইক্যান (অ্যামাইনো সুগার ও পেপটাইড) দিয়ে তৈরি। এতে N-অ্যাসিটাইল গ্লুকোসামাইন এবং N-অ্যাসিটাইল মিউরামিক অ্যাসিড—দু-রকমের অ্যামাইনো শর্করা থাকে। পেপটাইডে অ্যালানিন, গ্লুটামিক অ্যাসিড, ডাই অ্যামিনো পাইমেলিক অ্যাসিড এবং গ্লাইসিন থাকে। গ্রাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে এই উপাদানগুলি কোশপ্রাচীরের 90% অংশ গঠন করে। গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে মিউকোপেপটাইড কোশপ্রাচীরের 10% গঠন করে। এর বাইরের অংশ মূলত লাইপোপলিস্যাকারাইড ও লাইপোপ্রোটিন দিয়ে তৈরি হয় । গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে বহিঃস্তর ও কোশপর্দার মধ্যবর্তী স্থান জেলির মতো, মূলত প্রোটিন নির্মিত, একে পেরিপ্লাজমিক স্তর (Periplasmic space) বলে।
সাইটোপ্লাজমীয় আবরণী (Cytoplasmic membrane) : কোশপ্রাচীরের ভিতর সাইটোপ্লাজমকে ঘিরে এই আবরণী অবস্থিত। এটি 7.5 nm পুরু এবং ফসফোলিপিড ও প্রোটিন দিয়ে তৈরি। এটি প্রভেদক ভেদ্য পর্দা, কোশের ভিতর এবং বাইরে বস্তুর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যাকটেরিয়া কোশের কোশপর্দা শ্বসন ও অন্যান্য বিপাকীয় ক্রিয়ার উৎসেচক ধারণ করে। গ্রাম-পজেটিভ ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে কোশপর্দা সাইটোপ্লাজমের দিকে ভাঁজ হয়ে মেসোজোম (mesosome) গঠন করে। বিজ্ঞানী স্যালে (1974) মেসোজোমকে কনড্রিওয়েড (Chondrioid) বলে অভিহিত করেছেন। ব্যাকটেরিয়া কোশপর্দায় স্টেরল জাতীয় যৌগ না থাকায় ইউক্যারিওটিক কোশপর্দার তুলনায় কম দৃঢ়। তবে বর্তমানে ব্যাকটেরিয়া কোশপর্দায় হেপানয়েডস (Hapanoides) নামক স্টেরলের মতো যৌগের সন্ধান পাওয়া গেছে।
কাজ (Functions):
(i) কোশপর্দা সজীব প্রোটোপ্লাজমকে বাইরের প্রতিকূল পরিবেশ থেকে রক্ষা করে।
(ii) প্রভেদক ভেদ্য হওয়ায় প্রয়োজনীয় পদার্থের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করে।
(iii) পর্দাস্থিত পার্মিয়েজ (Permeases) জাতীয় উৎসেচক বিভিন্ন অজৈব আয়ন, শর্করা, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন ও অন্যান্য যৌগের পরিবহণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
(iv) ব্যাকটেরিয়া কোশ পর্দায় শ্বসন ও অন্যান্য বিপাকীয় পদ্ধতির উৎসেচক বর্তমান থাকে।
(v) ইলেকট্রন পরিবহণ তন্ত্রের উপাদানগুলি কোশপর্দায় অবস্থান করে।
(vi) সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে কোশপর্দা রঞ্জক পদার্থ ধারণকারী সরল অঙ্গাণুর (থাইলাকয়েড) মতো কাজ করে।
(vii) ব্যাকটেরিয়ার বংশগতি বস্তু DNA এবং প্লাসমিড DNA।
(viii) কেমোট্যাকটিক চলনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ কোশপর্দায় অবস্থান করে।
মেসোজোম (Mesosome) (ব্যাকটেরিয়ার কোশপর্দা ভিতরে সাইটোপ্লাজমের দিকে ভাঁজ হয়ে গোলাকার বা ভিলাই আকৃতির থলির মতো যে গঠন সৃষ্টি করে তাদের মেসোজোম বলে। মেসোজোম গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া অপেক্ষা গ্রাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়ায় সুস্পষ্ট দেখা যায়। মেসোজোম দু-প্রকারের—ব্যবধায়ক সৃষ্টিকারী (septal) এবং পার্শ্বীয় (lateral)। ব্যবধায়ক সৃষ্টিকারী মেসোজোম নিউক্লিওয়েডকে কোশপর্দার সঙ্গে যুক্ত রাখে এবং এটি নিউক্লিওয়েডের রেপ্লিকেশনে অংশগ্রহণ করে। পার্শ্বীয় মেসোজোম শ্বসন-উৎসেচক ধারণ করে এবং শ্বসনে অংশগ্রহণ করে বলে একে কনড্রিওয়েড (chondrioid) বলা হয়।
কাজ (Functions) ঃ মেসোজোমের কাজ এখন অজানা, তবে অনুমান করা হয় যে—মেসোজোমে সাইটোক্রোম অক্সিডেজ নামক উৎসেচক থাকায় অনেক বিজ্ঞানী এটি মাইটোকন্ড্রিয়ার পূর্বসূরী বলে মনে করেন। মেসোজোম কোশ বিভাজনের সময় অপত্য কোশদ্বয়ের মধ্যে ব্যবধায়ক সৃষ্টি করে। নিউক্লিয় বস্তুর রেপ্লিকেশনে সাহায্য করে। মেসোজোম কোশপর্দাকে বিস্তৃত করে। বিপাকীয় ক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রকোষ্ঠের জোগান দেয়।
সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm) : সাইটোপ্লাজম জল, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, লিপিড, খনিজ লবণ এবং বিভিন্ন বস্তু নিয়ে তৈরি একপ্রকার সান্দ্র, কোলয়েডীয় দ্রবণ। এ ছাড়া ভলিউটিন দানা (volutin granules), লাইপোপ্রোটিন, গ্লাইকোজেন, RNA, রঞ্জক, স্নেহবস্তু, ভিটামিন, সালফার, ক্যালশিয়াম কার্বনেট প্রভৃতি সাইটোপ্লাজমে থাকে। রাইবোজোম (70S) এককভাবে অথবা পলিজোম হিসেবে থাকতে দেখা যায়। সালোকসংশ্লেষকারী কোশে রঞ্জক পদার্থপূর্ণ পর্দাবৃত থলি ক্রোমাটোফোর (chromatophore) থাকে। এর মধ্যে সালোকসংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান—উৎসেচক, ইলেকট্রন বাহক ইত্যাদি থাকে। ব্যাকটেরিয়ায় সাইটোপ্লাজমীয় চলন দেখা যায় না। কোশরসপূর্ণ ভ্যাকুওল থাকে না, পরিবর্তে কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্যাস-ভ্যাকুওল (gas vacuole) বা ছদ্ম গহ্বর (pseudo vacuole) থাকে।
রাইবোজোম (Ribosome): ব্যাকটেরিয়ার কোশে প্রায় 10,000 রাইবোজোম থাকে, সমগ্র কোশের শুষ্ক ওজনের প্রায় 30% । রাইবোজোমগুলি দুই প্রকারের—আবদ্ধ (fixed) এবং মুক্ত (free)। আবদ্ধ রাইবোজোমগুলি কোশপর্দায় সংলগ্ন থাকে এবং মুক্ত রাইবোজোমগুলি সাইটোপ্লাজমে মুক্ত অবস্থায় থাকে। মুক্ত রাইবোজোম কোশ অভ্যন্তরে ব্যবহার্য প্রোটিন সংশ্লেষ করে এবং আবদ্ধ রাইবোজোম সংশ্লেষিত প্রোটিনকে কোশের বাইরে পরিবাহিত করে। ব্যাকটেরিয়া কোশের রাইবোজোম 70S প্রকৃতির, অধঃএককগুলি হল 50S ও 30S প্রকৃতির। 50S অধঃএককটি 55 এবং 235এই দু-প্রকারের rRNA এবং 34টি প্রোটিন অণু নিয়ে গঠিত । 30S অধঃএককটি 16SrRNA এবং 21টি প্রোটিন অণু নিয়ে গঠিত ।
E.coli-এর রাইবোজোমে 5S, 165 এবং 23S এই তিন প্রকার rRNA অণুতে বর্তমান নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা ও বেস সজ্জা ক্রম নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার এই rRNA অণুগুলিতে বেস সজ্জাক্রম তুলনা করে পরস্পরের মধ্যে বেস সজ্জাক্রমে বিবর্তনের অগ্রগতির মধ্যেও সংরক্ষণশীলতার প্রমাণ পাওয়া যায়। বর্তমানে 16S RNA-র বেস সজ্জাক্রম (Base sequence) তুলনা
করে অণুজীবদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়।
প্লাসমিড (Plasmid)ঃ ব্যাকটেরিয়ার প্রধান বংশগতি বস্তু DNA ছাড়াও কিছু ক্ষুদ্র, গোলাকার, দ্বিতন্ত্রী DNA অণু সাইটোপ্লাজমে থাকতে দেখা যায়, এদের প্লাসমিড বলে। এরা স্ববিভাজনক্ষম, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী জিন বহন করে। বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের ভিত্তিতে প্লাসমিড বিভিন্ন প্রকারের হয়, যেমন—F-প্লাসমিড (sex factor) যৌন পিলি গঠন করে, R-প্লাসমিড ((Resistant factor) অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধে অংশ নেয়, Col-প্লাসমিড কলিসিন নামক টক্সিন উৎপাদন করে, Ti-প্লাসমিড টিউমার সৃষ্টিতে অংশ নেয় ইত্যাদি। F-প্লাসমিড DNA নিউক্লিওয়েড DNA-র সঙ্গে যুক্ত হয়ে অবস্থান করলে তাকে এপিজোম (Episome) বলে। এই অবস্থায় ব্যাকটেরিয়া কোশের বিভাজন হলে উভয় অপত্য কোশে এপিজোম সঞ্চারিত হয়। বর্তমানকালে প্লাসমিড ট্রান্সজেনিক ব্যাকটেরিয়া বা জীব সৃষ্টিতে ভেক্টর হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়।
সঞ্চিত পদার্থসমূহ (Reserve materials) : এগুলি বিভিন্ন প্রকারের জড় বস্তু, সাইটোপ্লাজমে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এদের মধ্যে অজৈব পদার্থসমূহ হল ভলিউটিন বা ফসফেট দানা, সালফার, লৌহ ও ম্যাগনেটাইট দানা প্রভৃতি।এগুলি বিভিন্নভাবে রঞ্জিত হয় বলে এদের মেটাক্রোমাটিক গ্রানিউল (Metachromatic granules) বলা হয়। সঞ্চিত খাদ্যবস্তু সমূহের মধ্যে গ্লাইকোজেন, পলি-বিটা-হাইড্রক্সি বিউটারিক অ্যাসিড (PBH) দানা প্রধান। প্রশমিত ফ্যাট কণিকা থাকে না। সায়ানোব্যাকটেরিয়া কোশের সাইটোপ্লাজমে সায়ানোফাইসিয়ান শ্বেতসার, লিপিড বটিকা ও প্রোটিন দানা সঞ্চিত থাকে।
নিউক্লিওয়েড (Nucleoid) ঃ ব্যাকটেরিয়ার নিউক্লিয়াস নিউক্লিয় আবরণী, নিউক্লিয় জালিকা ও নিউক্লিওলাস বিহীন।সাইটোপ্লাজমের কেন্দ্রে একটিমাত্র দ্বিতন্ত্রী DNA অতিশয় প্যাচানো (supercoiled), আবর্তাকারে (circular) থাকতে দেখা যায়, একে নিউক্লিওয়েড বা জেনোফোর (Genophore) বলে। নিউক্লিওয়েডের কেন্দ্রে RNA থাকে, এই RNA অণুকে ঘিরে পলিঅ্যামিনস্ বা নিউক্লিওয়েড প্রোটিন বর্তমান থাকে। হিস্টোন প্রোটিন থাকে না ফলে ইউক্যারিওটিক কোশের মতো ক্রোমাটিন বস্তু গঠিত হয় না, একে নগ্ন (Naked) ব্যাকটেরিয়াল ক্রোমোজোমও বলা হয়। E. coli কোশে নিউক্লিওয়েড DNA-র দৈর্ঘ্যপ্রায় 1100um এবং 4.6 × 10° জোড়া নিউক্লিওটাইড সমন্বিত। DNA অণুর আণবিক ওজন 3 × 109 ডালটন। DNA-র স্বাভাবিক বেসগুলি যেমন—অ্যাডিনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন, থাইমিন ছাড়াও স্বল্প পরিমাণ 5-মিথাইল সাইটোসিন এবং 6-মিথাইল অ্যামিনো পিউরিন বেস থাকে। নিউক্লিওয়েডের বিভাজন ক্ষমতা (Replication), পরিব্যক্তি (Mutation) এবং বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ ক্ষমতা বর্তমান ৷
ফ্ল্যাজেলা (Flagella) : সর্পিলাকার এবং দণ্ডাকার ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে সচরাচর ফ্ল্যাজেলা দেখা যায়। ফ্ল্যাজেলা সাইটোপ্লাজমীয় বহিঃস্তর থেকে উৎপত্তি হয়ে কোশপর্দা ও কোশপ্রাচীর ভেদ করে বাইরে প্রসারিত সূক্ষ্ম দীর্ঘ সুতোর মতো অংশ । এগুলি সাধারণত 10–20nm চওড়া এবং 4-5um পর্যন্ত লম্বা হয়। ফ্ল্যাজেলা ফ্ল্যাজেলিন্ প্রোটিন দ্বারা গঠিত। প্রোটিন অণুগুলি গোলাকার বটিকার মতো 3-8টি সারিতে সর্পিলাকারে বিন্যস্ত। প্রতিটি ফ্ল্যাজেলার তিনটি প্রধান অংশ, এগুলি হল বেসাল বডি (Basal body), হুক্ (Hook) এবং ফিলামেন্ট (Filament)। বেসাল বডি একটি ক্ষুদ্র কেন্দ্রীয় দণ্ড ও দু-জোড়া (গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে) বা এক জোড়া (গ্রাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে) চাকতির মতো অংশ নিয়ে গঠিত। গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে প্রথম জোড়া চাকতি ‘L’ এবং ‘P’ কোশপ্রাচীর ও দ্বিতীয় জোড়া চাকতি ‘S’এবং ‘M’ কোশপর্দা সংলগ্ন থাকে। গ্রাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়ায় কেবলমাত্র ‘S’ এবং ‘M’চাকতি দুটি থাকে ।
‘L’-চাকতি কোশপ্রাচীরে বহিঃপর্দাস্থিত লাইপোপলিস্যাকারাইড স্তর এবং ‘P’-চাকতি পেপটাইডোগ্লাইক্যান স্তরে সংলগ্ন থাকে । অন্তঃস্থ ‘S’এবং ‘M’চাকতি দুটির 'S' চাকতি পেরিপ্লাজমিক স্থানের ঠিক ওপরে এবং ‘M’চাকতি প্লাজমা পর্দায় প্রোথিত থাকে। হুক বাঁকানো, মোটা নলাকার গঠন, যা বেসাল বডি ও ফিলামেন্ট অংশকে যুক্ত করে। গ্রাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে হুক অংশ গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার হুক অপেক্ষা দীর্ঘ। ফিলামেন্ট অংশ দীর্ঘ, ফাঁপা ও নলাকার। ফ্ল্যাজেলিন্ প্রোটিন বটিকাগুলি কেন্দ্রস্থ ফাঁকা স্থানকে ঘিরে সর্পিলাকারে বিন্যস্ত থেকে সমব্যাস সম্পন্ন দীর্ঘ নলাকার ফিলামেন্ট অংশটি গঠন করে। ইউক্যারিওটিক কোশের ফ্ল্যাজেলা (শৈবাল কোশ) বেসাল বডি এবং প্রোক্যারিওটিক (ব্যাকটেরিয়া) কোশের ফ্ল্যাজেলা ব্লেফারোব্লাস্ট থেকে উৎপন্ন হয়। উভয় ফ্ল্যাজেলা আকৃতিগত ভাবে প্রায় একই। ফ্ল্যাজেলা ব্যাকটেরিয়ার গমন অঙ্গ ৷ মনে করাহয় ফ্ল্যাজেলার ঘূর্ণন গতি জলের ওপর পশ্চাৎমুখী আঘাত সৃষ্টি করে ব্যাকটেরিয়াকে সম্মুখের দিকে চলতে সাহায্য করে।
পিলি বা ফিমব্রি (Pili or Fimbriae) : কিছু সংখ্যক গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বর্হিগাত্রে অসংখ্য সূক্ষ্ম সূত্রাকার উপাঙ্গ দেখা যায় এদের পিলি বা ফিমব্রি বলে। এগুলি ফ্ল্যাজেলার তুলনায় সংখ্যায় বেশি, দৈর্ঘ্যে এবং দৃঢ়তায় কম। এগুলি পিলিন (pilin) নামক প্রোটিন দিয়ে গঠিত। পিলি বা ফিমব্রির উপস্থিতিপ্লাসমিডে অবস্থিত জিন দ্বারা নির্ধারিত হয়। এদের দৈর্ঘ্য 0.2-20um এবং ব্যাস সাধারণত 250Å হয়। কার্যগতভাবে এরা প্রধানত দু-প্রকারের—
(i) সাধারণ পিলি (common pili) এগুলি ব্যাকটেরিয়া কোশদের পরস্পরকে আঁকড়ে ধরে থাকতে বা ধারকের গায়ে আটকে থাকতে সাহায্য করে।
(ii) সেক্স পিলি (sexpili) এগুলির দ্বারা একটি ব্যাকটেরিয়া (F+) অপর ব্যাকটেরিয়ার (F) সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তোলে এবং এর মাধ্যমে বংশগতি বস্তুর (genome) স্থানান্তর ঘটে। E. coli-র F+ কোশের সেক্স পিলির অগ্রভাগ স্পর্শ দ্বারা F-কোশ চিনে নিতে পারে।