একাদশ শ্রেণির পুষ্টিবিজ্ঞান।খাদ্য কাকে বলে। খাদ্যের শ্রেণীর বিভাগ ও প্রত্যেকটি ভাগের উদাহরণ।

জীবের জীবনধারণের জন্য যে শক্তির প্রয়ােজন হয়, তার উৎস হল খাদ্য। খাদ্যের মধ্যে সৌরশক্তি স্থৈতিক শক্তি হিসেবে আবদ্ধ থাকে। পরিপাক ও শােষণের পর খাদ্য উপাদান জীবকোশের মধ্যে পৌঁছােলে জারণের ফলে খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তির মুক্তি ঘটে।

শক্তির উৎস—খাদ্য (Source of Energy-Food)

খাদ্য কাকে বলে। খাদ্যের শ্রেণীর বিভাগ ও প্রত্যেকটি ভাগের  উদাহরণ। What is food, classification of food and give examples,Class 11 nutrition Question, পুষ্টিবিজ্ঞানের ভূমিকা
একাদশ শ্রেণির পুষ্টিবিজ্ঞান প্রশ্নউত্তর

সংজ্ঞা: যেসব কঠিন, তরল বা অর্ধতরল আহার্য বস্তু গ্রহণ করলে পরিপাকের মাধ্যমে জীবদেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধিসাধন, ক্ষয়পূরণ, তাপ উৎপাদন প্রভৃতি কার্য সম্পন্ন হয় ও দেহের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে, তাদের খাদ্য বলে।


খাদ্যের পুষ্টি উপাদান, প্রকৃতি ও গুরুত্বগুলি হল—


খাদ্যের পুষ্টি উপাদান:

অন্যান্য জীবের মতাে আমরাও খাদ্য গ্রহণ করি। আমাদের পুষ্টির জন্য কার্বোহাইড্রেট, প্রােটিন, লিপিড, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন এবং জল—এই ছয়টি পুষ্টি উপাদান অপরিহার্য। এদের মধ্যে।

কার্বোহাইড্রেট, প্রােটিন ও লিপিড জারিত হয়ে তাপশক্তি উৎপন্ন করে অর্থাৎ এগুলি ক্যালােরিযুক্ত পুষ্টি উপাদান।(খনিজ পদার্থ, ভিটামিন এবং জল—এই তিনটি উপাদান পুষ্টির জন্য আবশ্যক হলেও এগুলি থেকে তাপশক্তি উৎপন্ন হয় না। এগুলিকে ক্যালােরিবিহীন পুষ্টি উপাদান বলা হয়। পুষ্টিবিজ্ঞানে ক্যালােরি

মূল্যযুক্ত পুষ্টি উপাদানগুলিকে খাদ্য বলে)




খাদ্যের প্রকৃতি:

খাদ্য বিভিন্ন প্রকারের হয়।যেমন তরল, অর্ধতরল, কঠিন ইত্যাদি। কঠিন ও জটিল খাদ্যের পরিপাকের প্রয়ােজন হয়। উৎসেচকের ক্রিয়ায় কঠিন ও জটিল খাদ্য সরল ও তরল হয়ে রক্তে শােষিত হওয়ার উপযােগী হয়।


খাদ্যের গুরুত্বগুলি:

 ক্ষুদ্রান্ত্রের আবরণী কলার মাধ্যমে সরল ও তরল খাদ্যরস শােষিত হয়ে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে কলাকোশে‌ পৌঁছেলে, শ্বসন প্রক্রিয়ায়, তা জারিত হয়ে তাপশক্তি তথা ATP উৎপন্ন করে। উৎপন্ন ATP দেহের সমস্ত শারীরবৃত্তীয় কাজে শক্তি জোগায়। এ ছাড়া খাদ্য আমাদের দেহের বৃদ্ধি ঘটায়, বিপাকে সাহায্য করে, ক্ষয়পূরণ করে, রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা গড়ে তােলে এবং দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখে।


খাদ্যের প্রকারভেদ types of food


জীবদেহে প্রয়ােজনীয়তা অনুযায়ী খাদ্যের বিভাগ:

দেহপরিপােষক খাদ্য,দেহসংরক্ষক খাদ্য,ক্ষয়পূরক,পুষ্টিসাধক ও বৃদ্ধিসহায়ক খাদ্য
খাদ্যের প্রকারভেদ ও উদাহরণ

জীবদেহের প্রয়ােজনীয়তা অনুযায়ী খাদ্যকে প্রধানত দুটি বিভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলি হল—


১.দেহপরিপােষক খাদ্য (Proximate principles of food):যেসব খাদ্য দেহগঠন, বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে, তাদের বলা হয় দেহপরিপােষক খাদ্য। 


উদাহরণ:কার্বোহাইড্রেট,প্রােটিন এবং লিপিড।


2, দেহসংরক্ষক খাদ্য(Protective principles of  food):যেসব খাদ্য দেহে মূলত রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা গড়ে ভিটামিন,তােলে এবং দেহের স্বাভাবিকতা বজায় রেখে দেহকে সুস্থ ও সবল রাখে, তাদের বলা হয় দেহসংরক্ষক খাদ্য।


উদাহরণ:খনিজ পদার্থ ও জল। ভিটামিন


জীবদেহে কার্যকারিতা অনুযায়ী খাদ্যের বিভাগ:


জীবদেহে খাদ্যের কার্যকারিতা অনুযায়ী খাদ্যকে মূলত চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল—



1. ক্ষয়পূরক,পুষ্টিসাধক ও বৃদ্ধিসহায়ক খাদ্য(Regenerating, body building and growth promoting food)

বিবরণ : প্রােটিন বা আমিষ এবং খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ যেসব খাদ্য দেহের বৃদ্ধিতে, শারীরিক

 ও কোশকলা গঠনে, পুষ্টিসাধনে এবং ক্ষয়পূরণে সহায়তা করে, তাদের ক্ষয়পূরক,পুষ্টিসাধক ও

 বৃদ্ধিসহায়ক খাদ্য বলে। দেহে এই জাতীয় খাদ্যের অভাব ঘটলে আমাদের দেহ দুর্বল হয়। এবং দেহগঠনের ক্রিয়া ব্যাহত হয়।


উদাহরণ : বিভিন্ন ধরনের প্রােটিনসমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন—দুধ, মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, সয়াবিন

ইত্যাদি এই ধরনের কাজে সহায়তা করে।এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকার খনিজ উপাদান, যেমন—লােহা, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি দেহের কাঠামোে গঠন ও রক্ত উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।


2তাপ উৎপাদক খাদ্য (Energy yielding food)


বিবরণ : কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা এবং লিপিড বা স্নেহপদার্থসমৃদ্ধ যেসব খাদ্য জীবদেহে তাপশক্তি উৎপাদনে অংশ নেয়, তাদের তাপ উৎপাদক খাদ্য বলে। এদের জ্বালানি খাদ্যও বলা হয়। কারণ জ্বালানি পুড়ে যেমন তাপের আকারে শক্তি নির্গত হয়, তেমনি এইসব জ্বালানি খাদ্য জারিত হয়ে শক্তি মুক্ত হয় এবং দেহের বিভিন্ন প্রকার ঐচ্ছিক -অনৈচ্ছিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তি জোগায়।


উদাহরণ : গুড়, চিনি, দানাশস্য, কন্দমূল, শুকনাে ফল, তেল, ঘি ইত্যাদি এই প্রকার খাদ্যের

অন্তর্গত।



3রােগ প্রতিরােধক খাদ্য : (Disease preventive food) : 

 ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ ও খনিজ উপাদানসমৃদ্ধ যেসব খাদ্য জীবদেহের স্বাভাবিক খাদ্য  রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বজায় রাখে, তাদের রােগ প্রতিরােধক খাদ্য বলে। এই জাতীয় খাদ্য

উপাদান দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখে। ত্বক, চোখ, অস্থি, দাঁত প্রভৃতি গঠনে অংশ নেয়। দেহের নানান জৈবিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন প্রকার রােগ প্রতিরােধে প্রধান ভূমিকা পালন করে।


উদাহরণ; বােগ প্রতিরােধকারী খাদ্যের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য হল ভিটামিন ও

খনিজ লবণ, এগুলির গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল সবুজ শাকসবজি, টাটকা ফল, দুধ, মাছ, মাংস, ডিম

ইত্যাদি।


৪.শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া পরিচালনকারী খাদ্য

(Physiological activity maintaining food):

বিশুদ্ধ পানীয় জল এবং বিভিন্ন প্রকার রাফেজ বা তন্তুসমৃদ্ধ যেসব খাদ্য দেহের  বিভিন্ন প্রকার শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, তাদের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া পরিচালনকারী খাদ্য বলে দেহের ইলেকট্রোলাইটের সমতা বজায় রাখা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ,খাদ্য পরিপাক, রেচন প্রভৃতিতে সহায়তা করে। রাফেজ বা তন্তুসমৃদ্ধ খাদ্য মল নিষ্কাশনে।সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে অংশ নেয়।


উদাহরণ : এই জাতীয় খাদ্যের উদাহরণ হল বিশুদ্ধ পানীয় জল, ডাবের জল, টাটকা ফলের

রস, সবুজ শাকসবজি, স্যালাড ও বিভিন্ন ধরনের ফল।

কার্বোহাইড্রেটজাতীয় বা শর্করাবহুল খাদ্য,ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্য
খাদ্যের শ্রেণীর বিভাগ ও উদাহরণ


খাদ্যে উপস্থিত উপাদান অনুযায়ী; 


খাদ্যে উপস্থিত উপাদান অনুযায়ী, খাদ্যকে প্রধানত ছয় ভাগে বিভক্ত করা যায়। সেগুলি হল-


1শর্করাবহুল খাদ্য (Carbohydrate containing food)যেসব খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অধিক থাকে, তাদের কার্বোহাইড্রেটজাতীয় বা শর্করাবহুল খাদ্য বলে।


যেমন-চাল, গম, আলু, ভুট্টা, সাগু, চিনি,

গুড়, মধু, কচু, ওল ইত্যাদি এই

জাতীয় খাদ্যের অন্তর্গত।


2 আমিষবহুল খাদ্য (Protein containing food)

যেসব খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে প্রােটিন বা আমিষের

পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অধিক থাকে, তাদের

প্রােটিনজাতীয় বা আমিষবহুল খাদ্য বলে।


যেমন-মাছ, মাংস, ডিম, ছানা, সয়াবিন,

চিনাবাদাম ইত্যাদি।


৪ স্নেহ ও তৈলসমৃদ্ধ খাদ্য (Lipid containing food)যেসব খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে লিপিড বা স্নেহপদার্থের পরিমাণ তুলনামূলক অধিক থাকে, তাদের লিপিড়জাতীয় বা স্নেহ ও তৈলসমৃদ্ধ খাদ্য বলে

যেমন-ঘি, মাখন, তেল, চর্বি, বাদাম,

নারকেল ইত্যাদি।

জজজজজ

5 ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্য (Vitamin con-taining food)যেসব খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ।তুলনামূলকভাবে অধিক পরিমাণে থাকে, তাদের ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্য বলে।


যেমন-সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, দুধ,

। মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি।


6খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ খাদ্য (Mineral containing food)যেসব খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে খনিজ পদার্থ তুলনা-মূলকভাবে অধিক পরিমাণে থাকে, তাদের খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ খাদ্য বলে।


যেমন-সামুদ্রিক মাছ, ডিম, মাংস,

সবুজ শাকসবজি, খাদ্যলবণ

ইত্যাদি।


7.জলসমৃদ্ধ খাদ্য (Water containing food)

যেসব খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে জলের পরিমাণ তুলনা-

 মূলকভাবে বেশি থাকে, তাদের জলসমৃদ্ধ খাদ্য বলে।

যেমন-ডাবের জল, বিভিন্ন রসালাে

। ফল ইত্যাদি।


পিডিএফ ডাউনলোড করার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now